জাহাজ ভাঙায় শীর্ষে বাংলাদেশ

এইমাত্র জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : পরিবেশ দূষণের কারণে বিশ্বের অনেক দেশ জাহাজ ভাঙা থেকে সরে গেছে । সেসব দেশে ইস্পাতপণ্য তৈরির জন্য প্রাথমিক কাঁচামাল পুরনো লোহার টুকরা বা মৌলিক কাঁচামাল আকরিকের ওপর নির্ভরশীল। তবে বাংলাদেশে রড তৈরির কারখানাগুলোতে এখনো কাঁচামালের বড় একটা অংশ জোগান দেয় জাহাজ ভাঙা কারখানা। তাতেই এই খাতটি শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। তবে এ খাত শীর্ষস্থানে উঠে আসার পাশাপাশি দুর্ঘটনার হারও বেড়েছে। বিগত ২০১৯ সালে বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে কর্মরত অবস্থায় ২৪ জন শ্রমিক দুর্ঘটনায় মারা যান। তবে ২০২০ সালে তা কমে মাত্র ১০ জন শ্রমিক মারা গেছে।
করোনার ধাক্কায় পুরনো জাহাজ আমদানি আগের চেয়ে কমলেও জাহাজ ভাঙ্গায় এবারও শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। বিগত ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দেশে পুরনো জাহাজ আমদানি সাড়ে ১১ শতাংশ কমেছে। তারপরও ২০২০ সালেও বিশ্বের জাহাজ ভাঙায় শীর্ষে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে বিশ্বে ৬৩০টি জাহাজ ভাঙা হয়েছে। তার মধ্যে ৯০ শতাংশই ভাঙা হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে। বাংলাদেশ ১৪৪টি জাহাজ ভেঙে সাড়ে ৬৯ লাখ টন স্ক্র্যাপ পেয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারত জাহাজ ভেঙেছে ২০৩টি; আর স্ক্র্যাপ পেয়েছে ৪৫ লাখ ১৫ হাজার টন। জাহাজ ভাঙার সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত শীর্ষে থাকলেও স্ক্র্যাপ বা পণ্যের পরিমাণের দিক থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ। এর মূল কারণ ভারত ছোট আকারের জাহাজ বেশি ভেঙেছে; আর বাংলাদেশ বড় আকারের জাহাজ ভেঙেছে বলেই কম জাহাজ ভেঙে বেশি স্ক্র্যাপ পেয়েছে। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান; তারা ৯৯টি জাহাজ ভেঙে স্ক্র্যাপ পেয়েছে ২২ লাখ ৫৬ হাজার টন। চতুর্থ স্থানে থাকা তুরস্ক জাহাজ ভেঙেছে ৯৪টি আর পণ্য পেয়েছে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টন। পঞ্চম স্থানে থাকা চীন ২০টি জাহাজ ভেঙে স্ক্র্যাপ পেয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার টন। জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৯ সালেও বাংলাদেশে বিশ্বের সর্বোচ্চ জাহাজ ভাঙা হয়েছে। এমনকি জাহাজের সংখ্যা এবং ওজনের দিক থেকেও শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। জাহাজ ভাঙার দিক থেকে বাংলাদেশ ২০১৭ ও ২০১৮ সালেও শীর্ষে ছিল। সর্বশেষ ২০২০ সালে কভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা কমেছে সাড়ে ১১ শতাংশ। তারপরও শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ২৩৬টি জাহাজ ভেঙে সাড়ে বাংলাদেশ ৭৮ লাখ টন স্ক্র্যাপ পেয়েছিল। তারপর ভারত ২০০টি জাহাজ ভেঙে স্ক্র্যাপ পেয়েছিল ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার টন আর তৃতীয় স্থানে থাকা তুরস্ক ১০৭টি জাহাজ ভেঙে ১১ লাখ ৬৯ হাজার টন স্ক্র্যাপ পেয়েছিল। চতুর্থ স্থানে থাকা পাকিস্তান মাত্র ৩৫টি জাহাজ ভেঙে পৌনে ১০ লাখ টন স্ক্র্যাপ পেয়েছিল।
সূত্র জানায়, কভিডের ধাক্কা মূলত মার্চ মাস থেকে ৪ মাস জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের ব্যবসা বন্ধই ছিল বলা যায়। অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ওই ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠলেও এখনো আগের অবস্থানে ফেরেনি। কভিডের কারণে গার্মেন্ট খাত প্রণোদনা পেলেও জাহাজ ভাঙা শিল্প কিন্তু কোনো প্রণোদনা পায়নি। তাছাড়া গত বাজেটে ভ্যাট এবং এটিভি (অগ্রিম ভ্যাট) আরোপের কারণে ভারতের চেয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। কারণ প্রতিটি জাহাজ কিনতে এখন টনপ্রতি ৩ হাজার টাকা বাড়তি ভ্যাট দিতে হচ্ছে। ফলে জাহাজ ভাঙায় খরচ বেশি পড়ছে। অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও ভ্যাট অফিস থেকে ওই টাকাও ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। এসব অবস্থার পরিবর্তন না হলেও জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের অগ্রগতি ধরে রাখা কঠিন হবে।
দেশের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প প্রসঙ্গে দেশের প্রথম ও একমাত্র আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গ্রিন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড তৈরি করে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত করা পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের জহিরুল ইসলাম জানান, সাড়ে ১১ শতাংশ পুরনো জাহাজ আমদানি কমলেও বাজারে খুব বেশি সরবরাহ সংকটের সৃষ্টি হয়নি। করোনায় মাঝখানে একটু সংকট থাকলেও এখন তা কাটিয়ে উঠেছে। জাহাজ আমদানি হচ্ছে এবং বাজারে কাঁচামালের সংকটও কমছে।


বিজ্ঞাপন