বিআইডব্লিটিএ’র ৩য় শ্রেণির কর্মচারীর সম্পদের পাহাড়

অপরাধ এইমাত্র জাতীয়

দুদকে অভিযোগ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিআইডব্লিটিএ’র তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও সিবিএ নেতা পান্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ এই অধিদপ্তরের নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরণ, সহকর্মীদের মারধর পূর্বক জেলখাটাসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, চাকুরী বিধি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন বলে তথ্য প্রমাণ রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পান্না বিশ্বাস বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিটিএ’র হিসাব বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারি ও অত্র দফতরের সিবিএ নেতা। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিকলীগের কার্যকরী সভাপতি। গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার লরেন্দা গ্রামে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ নেতাদের সহযোগিতায় বিআইডব্লিটিএ’র প্রধান কার্যালয়কে অপরাধ ও দুর্নীতি আখড়ায় পরিণত করে রেখেছেন।
এ বিষয়ে দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্রাচার্য বলেন, এই ধরণের একটি অভিযোগ কমিশনে আছে। অভিযোগের বিষয়ে কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে তা জানাবেন।
পান্না বিশ্বাস ২০১২ সালে বিআইডব্লিউটিএ’তে হিসাব বিভাগে সহকারী পদে যোগদান করেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ হালেও সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর প্রভাব দেখানোর জন্য মাদারীপুরের বাসিন্দা পরিচয় দিতেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়ে পান্না বিশ্বাস কর্মজীবন শুরু করে। পান্নার বর্তমানে সর্বসাকুল্যে বেতন ২২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি রাজধানীর টিকাতলীর হুমায়ুন কমপ্লেক্সের পাশের লেনে যে ভাড়া বাসায় থাকেন তার মাসিক ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা। এ থেকে বোঝা যায় কোন পথের আয়ে তার সংসার চলে। পান্না বিশ্বাসের অবৈধ উপার্জনের টাকা নিজের নামে না রেখে স্ত্রী, শাশুড়ি, ভারতের নাগরিক ভাইয়ের একাউন্টে রেখেছেন। তাদের নামে ব্যাংকে ডিপিএস, এফডিআর করে রেখেছন দুর্নীতির এসব কালো টাকা। ভারতেও তার সম্পদ আছে বলে জানা গেছে। কলকাতায় বাড়ি কিনেছেন। এছাড়া নিয়মিত টাকা পাচার করছেন ভারতে। তার ভাই রাহুল দেব বিশ্বাস ভারতের নাগরিক। তার আরেক ভাইয়ের স্ত্রী তাপসী বিশ্বাস, যিনি নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করেন। তার মাধ্যমেই মূলত অর্থ পাচার করে থাকেন পান্না বিশ্বাস।
এছাড়া শাশুড়ির নামে রাজধানীর পুরান ঢাকায় ফ্ল্যাট এবং গাড়ীও কেনা। মাদারীপুরে বোনের নামে বাড়ি, গোপালগঞ্জ মকসুদপুরে আলিশান বাড়ি করেছেন। প্রতিমাসে সদরঘাট, চাঁদপুর, আরিচা, বরিশাল ঘাট থেকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় পান্না বিশ্বাসকে। তানিয়া এন্টার প্রাইজ, দিপিকা ইঞ্জিনিয়ারিং, চায়না ট্রেডিংসসহ বেনামে আরো কিছু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন পান্না বিশ্বাস। ক্ষমতাসীনদের ভুল বুঝিয়ে টেন্ডারবাজির মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান কাজ আদায় করে। কিন্তু কাজ বাস্তবায়নে এখান থেকেও হাতিয়ে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বিআইডব্লিউটিএর সাইনবোর্ড ডিজিটালকরণের ২৫ লাখ টাকা রাসেল এন্টার-প্রাইজের নামে বরাদ্দ নেয়া হয়, এটি মূলত পান্না বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ খনন ও ক্যাপিটাল ড্রেজিং নামক ২টি প্রকল্প হতে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় পান্না বিশ্বাস। রাজধানীতে রফিক ঠিকাদার নামে এক যুবদল নেতার বাড়িতে নিয়মিত মাদকের আড্ডায় নিয়মিত যোগদান করে পান্না বিশ্বাস। মতিঝিলে বিআইডব্লিউিটএর প্রধান কার্যালয়ে একটি কক্ষ অবৈধভাবে ব্যবহার করতেন পান্না বিশ্বাস। সরকার যেখানে প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেখানে পান্না বিশ্বাস নিয়োগ বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নড়াইলের সুজন মোল্লা ও লস্কর অন্যতম। শুধু তাই নয়, আলামিন, লস্করকে মুক্তিযোদ্ধার জাল সনদ দিয়ে চাকরি দিয়েছন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করেছে। এছাড়া বেয়ারার পদে জুয়েল সরদার, শুল্ক প্রহরী পদে জয়দেব পাল, ট্রাফিক সুপারভাইজার পদে অনিমেষ বৈদ্য, দেবাশীষ মিত্র, বার্লিং সারেং পদে মো. আমিনুর রহমান, এমএলএস পদে মো. কুদ্দুস মোল্লা, সমীর গাঙ্গুলী, অমিত চাকমা, নিরপাত্তা প্রহরী পদে তুষার কান্তি ঘোষ, শঙ্কর বিশ্বাসকে ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছে পান্না বিশ্বাস। চাকুরি জীবনের আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়ে মারধর, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজির সাথে জড়িত ছিলেন পান্না বিশ্বাস। অপকর্মের কারণে জেলও খেটেছেন। তার সেই অস্ত্রবাজি এখনো বহাল রয়েছে। সম্প্রতি হিসাব বিভাগের রেকর্ড কিপার সঞ্জীব কুমার দাসকে মারধর করায় পান্না বিশ্বাসের নামে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাও হয়েছে (মামলা নং ১৫৯৭/২০১৭)। মামলায় চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সকালে ফুটিং শাখায় কর্মরত আব্দুর রাজ্জাক (ড্রাইভার-১) ও মনির চৌধুরী (মাস্টার-১) কে মারধর করে জখম করেন পান্না বিশ্বাস। এ ঘটনা এখনো তদন্ত করছে অফিস। গত ৩১ ডিসেম্বর-২০২০ বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের অফিস সহকারী দিদার হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন পান্না বিশ্বাস। সারাদেশ রাজস্ব কম আদায় হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জাহাজের পাইলট ও মার্কম্যানদের বদলির আদেশ দেয়া হয়। এসব পাইলট ও মার্কম্যানদের বদলি ঠেকাতে তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে পান্না বিশ্বাস। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ও নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে পান্না বিশ্বাস। তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে লেখালেখি হলেও এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এখনো বহাল তবিয়তে দেশবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত। এত অপরাধ করার পরও তার বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএতে কথা বলার সাহস পায়না কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এ ব্যাপারে পান্না বিশ্বাস বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে একটা পক্ষ ষড়যন্ত্র করে আসছে অনেক আগে থেকে। আমি এই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চায়।


বিজ্ঞাপন
👁️ 9 News Views