অভয়নগরে শুভরাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক’র বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুনির্তীর অভিযোগ

অপরাধ আইন ও আদালত

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি : অভয়নগরে শুভরাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুনির্তীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা ছাড়া কোনো সাধারন মানুষ তার নিকট থেকে কোনো সহযোগীতা পায় না। অনেকে উৎকোচের টাকা দিয়ে সরকারি সহায়তা না পেয়ে বিভিন্ন মহলে দেন-দরবার শুরু করেছেন।
সুত্র জানায়, হিদিয়া এ এন এইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি দ্বারা ভরাট করার জন্যে ২০১৩ সালে সাবেক হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব কাবিখা প্রকল্পের ৫টন চাইল বরাদ্দ দেন। কিন্তু ঐ বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি দিয়ে ভরাট না করে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ঐ ৫ টন চাইলের টাকা উত্তোলন করে তা পুরোটায় নিজে আত্মসাৎ করেন।
২০১১ সালের দিকে গোপিনাথপুর থেকে চাকই চৌ-রাস্তার সংস্কার কাজ মেসার্স এল রহমান এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান করেন। কাজ করার সময়ে ইছামতি বাজারে অবস্থিত শুভরাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসের কাজ করার বাবদ ঠিকাদার লুৎফর রহমান এর নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা নেন। তিনি আওয়ামী লীগের অফিসের উন্নয়নে এ টাকা দেন নি। গ্রামবাসির থেকে চাঁদা তুলে বাশ ও টিন দিয়ে একটি নাম মাত্র আওয়ামী লীগ কার্যালয় তৈরী করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক’র কথিত ভাইপো রমেশ চন্দ্র বিশ্বাসের মাধ্যমে ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের থেকে ৬ জন দিন মজুর পরিবারের নিকট থেকে সোলার (সৌর বিদ্যুৎ) দেওয়ার কথা বলে (জন প্রতি-৬,০০০/-) ৩৬,০০০/- (ছত্রিশ হাজার টাকা) নিয়েছে চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক। তাদেরকে সোলারও দেয় নি এবং সোলার বাবদ নেওয়া টাকাও ফেরৎ দেয় নি। এ নিয়ে এলাকায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনৈচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, আমি একজন দিনমজুর মানুষ। আমাকে সোলার দেওয়ার কথা বলে ৬,০০০/- নিয়েছে রমেশ। চেয়ারম্যানকে টাকা না দিলে সোলার পাওয়া যাবে না। এই শুভরাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সকল দেন-দরবার হয় রমেশ চন্দ্র বিশ্বাসের মাধ্যমে। রমেশ কে টাকা দিলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। চেয়ারম্যানের ভাইপো বলে কথা !
বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের কথিত ভাইপো রমেশ চন্দ্র বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি এই প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিবেদক রাজি না হওয়ায়, তাকে মুঠোফোনে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তিনি আরও বলেন, আপনার মতো কত সাংবাদিক দেখলাম ? যত পারেন লেখেন ? পত্রিকায় লিখলে কি হয় ?
২০১৯-২০২০ সালের ঈদের (রোজার ঈদ) ভিজিএফ’র ৪ টন (অসহায়-গরীবদের মধ্যে বিতরণের জন্যে ২৮৫ বস্তা চাউল) চাউল বিতরণ করার কথা ছিলো শুভরাড়া ইউনিয়নে। কিন্তু চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সেই চাউল বিতরণ করেন নি। এ বিষয়ে ইউনিয়নের সাধারন মানুষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি অভিযান চালিয়ে এই চাউল উদ্ধার করে এবং সাধারন জনগনের মাঝে তা বিতরণ করেন।
গোপন সংবাদের ভিত্ত্বিতে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের এডিপি’র অর্থায়নে ক্রিড়া সামগ্রি টেনডারের মাধ্যমে ক্রয় করে তা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের নিকট হস্তান্তর করেন ঠিকাদার ওলি গাজী। কিন্তু ক্রিড়া সামগ্রী গুলো তিনি বিতরণ করেন নি। চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক নিজে পিআইসি থেকে ঐ ক্রিড়া সামগ্রী গুলো ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বিতরণ করার জন্যে রেখে দিয়েছেন।
দিন মজুর গরীব-অসহায় মানুষের নিকট থেকে টাকা নিয়ে ভিজিডি চাউলের কার্ড দেওয়া, টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন সহায়তা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়াণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও রয়েছে।
শুভরাড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মোছাঃ নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সাধারন গরীব-অসহায় মানুষের ঈদের চাউল আত্মসাৎ করার অপরাধে দুনির্তী দমন কমিশনে (দুদক) মামলা চলমান রয়েছে। ২০১৬ সালে ১২৮ বস্তা চাউল বিতরণ না করে তা আত্মসাৎ কারার অপরাধে দুনির্তী দমন কমিশনে নার্গিস বেগমের নামে মামলা হয়। যে মামলাটি একনও বিচারাধীন রয়েছে। নার্গিস বেগম বর্তমানে ঐ ইউনিয়নের ১ নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক তার শারিরিক অসুস্থতার জন্যে মাঝে মাঝে দায়িক্ত দেন নার্গিস বেগমের উপর।
বিষয়টি নিয়ে মোছাঃ নার্গিস বেগম বলেন, দুদকে মামলার বিষয়টি সত্য। তবে চাউল গুলো বিতরণের জন্যে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু সাধারন জনগন সেটি বুঝতে না পেরে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে শুভরাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সব মিথ্যা। একটি অভিযোগেরও কোনো সত্যতা নেই। আপনি প্রমাণ করে দেন আমি কারোর নিকট থেকে টাকা নিয়েছি, আমি টাকা ফিরিয়ে দেব। এ গুলো আমার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুর রহমান জানান, এ বিষয়ে আমার নিকট কেউ কোনো অভিযোগ দেয় নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বিজ্ঞাপন

 

👁️ 4 News Views