সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা রাজধানী সারাদেশ স্বাস্থ্য

*দুই একদিনের মধ্যেই আসবে মশার ওষুধ
*ডেঙ্গু প্রতিরোধে ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ
*দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে: সাঈদ খোকন
*ক্ষমা চাইলেন মেয়র আতিকুল

এম এ স্বপন : সারাদেশেই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৩৪৮জন। এর মধ্যে ঢাকায় এক হাজার ২৮৪ এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ৬৪জন। সীমিত সংখ্যক হাসপাতালে সংকট থাকলেও বেশিরভাগ হাসপাতালে রয়েছে পর্যাপ্ত ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট। ঈদে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জনগণকে আতঙ্কিত না হওযার অনুরোধ জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এডিস মশা নিধনের ওষুধ দুই একদিনের মধ্যেই দেশে আসবে। বুধবার সকালে, মিরপুর মাজার রোডে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে এ কথা বলেন তিনি। এছাড়াও, শহরের সব জায়গায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি। কাদের বলেন, দু-চারদিনের মধ্যেই মশা নিধনের কার্যকর ওষুধ ঢাকায় আমরা পাবো। দায়সারা গোছের ওষুধ ছিটানোর প্রয়োজন নেই। যে ওষুধে সত্যিকার অর্থে মশক নিধন হবে, মানুষ আজ সেই ওষুধ চায়। আমরা লোক দেখানো কর্মসূচী দিয়ে জনগণকে ভাওতা দিতে চাইনা।
ডেঙ্গু ও এডিস মশা প্রতিরোধে সারা দেশের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে ৫৩ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের (বিসিজেএফ) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
জানা যায়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে সাড়ে ৭ কোটি টাকা করে এবং ঢাকার বাইরের সিটি করপোরেশনগুলোকে ৮ কোটি টাকা ও সারা দেশের পৌরসভাগুলোকে ৩০ কোটি টাকাসহ মোট ৫৩ কেটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থ ডেঙ্গু প্রতিরোধের কাজে ব্যয় হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করছে জানিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সাধারণত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয় মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। আমরা মার্চ থেকে মেয়রদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। উত্তরে সিটি করপোরশনকে ১ হাজার ৬শ’ লোক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছি। দক্ষিণেও তাদের চাহিদা অনুযায়ী লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মশার কার্যকর ওষুধ ব্যবহারের জন্য কমিটি হয়েছে, মশার পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ আছে এবং আমদানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কলকাতা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়েছি। আমরা ডেঙ্গু মোকাবিলায় নতুন শিক্ষা নিয়েছি, আমাদের ১২ মাসই কাজ করতে হবে। তবে ডেঙ্গু এই সময়ে বৃদ্ধি পায়। কলকাতায় ওয়ার্ড প্রতি ২৫ জন নিয়োগ দিয়েছে, আমরাও সেটি করেছি। আমরা সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছি।
বিসিজেএফ’র সভাপতি কাউসার রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বক্তব্য রাখেন।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় সব সংস্থা এক সঙ্গে কাজ করছে, খুব দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরে ডেঙ্গু প্রতিরোধী পদযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ডেঙ্গু নির্মূল না হবে, ততোদিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, সরকারের সকল সংস্থা নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই শহরের এবং এই দেশের মানুষ এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে।
ডেঙ্গুজ্বরে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। বুধবার রাজধানীর গুলশানে ডিএনসিসি নগর ভবনে মশক নিধন এবং কীটনাশক ছিটানো কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এতোদিন রাজধানী ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেলেও, এবার স্থানীয়ভাবেই আক্রান্ত হবার দাবি চাঁদপুরের রোগীদের। এমন পরিস্থিতিতে জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক।
একজন বলেন, আমরা কোন জায়গায় যায়নি, চাঁদপুরেই ছিলাম। আরেকজন বলেন, আমার বাচ্চাটা বাসায় থাকে। কিন্ত ডেঙ্গু তারে আক্রান্ত করছে। এখন আমি খুব আতঙ্কে আছি।
বরগুনায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এখন পর্যন্ত জেলায় শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে এখনো হাসপাতালে ভর্তি অনেকে। কিট স্বল্পতায় ব্যহত হচ্ছে ডেঙ্গু সনাক্তকরণ পরীক্ষা। একজন বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে এই হাসপাতালে চিকিৎসা চলে। কিন্ত ডেঙ্গুর কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে না।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা.হুমায়ুন শাহিন বলেন, ডেঙ্গুর শনাক্তের কীট শেষ হয়ে গেছে। আশা করি হয়তো আজকের মধ্যে কীট সংগ্রহ করতে সক্ষম হবো।
কিশোরগঞ্জে ৪শ’ ৪ জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্তরা বেশিরভাগ ঢাকা থেকে এলেও স্থানীয়ভাবেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এক রোগী বলেন, রোগীর পরিমাণ বাড়তেছে, কিন্ত আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ সুবিধা পাচ্ছিনা।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮০ জন রোগী। কোরবানির ঈদে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের এখানে কীটের কোন সংকট নেই। ঈদকে সামনে এই বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন।
বরিশালে গত ১৬ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ৪শ’ ৪৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ৬৯, চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৩৬ জন : বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গতকাল বুধবার হাসপাতালে ২৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ সংখ্যা ছিল ১৯৩ জন। হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬৯ জন। আর সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত মোট রোগীর মধ্যে পুরুষ ৪২ জন, নারী ২১ জন ও শিশু ৬ জন রয়েছে। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন ২৬ জন রোগী। এরমধ্যে ১৪ জন পুরুষ, ৭ জন নারী ও ৫ জন শিশু রয়েছে। এদিকে গোটা হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন ২৩৬ জনের মধ্যে পুরুষ ১৩৮, নারী ৭৪ ও শিশু ২৪ জন রয়েছে। গত ১৬ জুলাই থেকে সকাল পর্যন্ত বরিশাল মেডিক্যালে মোট ৪৪৬ জন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন ২১০ জন ও মারা গেছে দু’জন।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সুবিধার্থে হাসপাতালে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। যা মনিটরিং তিনিসহ মেডিসিন ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধানরা করছেন।


বিজ্ঞাপন
👁️ 2 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *