
মোস্তাফিজুর রহমান, (জামালপুর) : জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৩ নভেম্বর ২০২৫) বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে অপারেশন থিয়েটারের পাশের একটি কক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দ্রুত খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঘটনার সময় অপারেশন থিয়েটারে স্থানীয় বীর ধানাটা গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের স্ত্রী রত্না বেগমের সিজার অপারেশন চলছিল। এ সময় গাইনি ডাক্তার রাশেদা পারভীন মুন্নি, এনেস্থেশিয়া কনসালটেন্ট শাহরিয়ার ইসলাম, স্বাস্থ্য সহকারী ওবায়দুল্লাহ, ওয়ার্ড বয় ফরিদ এবং সিনিয়র নার্স সুবেদা খাতুন অপারেশন থিয়েটারে দায়িত্বে ছিলেন।
অপারেশন চলাকালে নবজাতককে বের করার কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ আগুন ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে চিকিৎসক ও কর্মীরা রোগীকে সেলাই না করেই থিয়েটার ছেড়ে বেরিয়ে যান।

এসময় সিনিয়র নার্স সুবেদা খাতুন নবজাতককে কোলে নিয়ে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন, আর অচেতন অবস্থায় থাকা মা রত্না বেগমকে পরে পেটে সেলাই করে অন্য কর্মীরা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। অল্পের জন্য মা ও শিশু বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান।

এ ঘটনায় হাসপাতালের ভিতরে চরম বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। রোগী ও স্বজনরা চিৎকার-চেঁচামেচি করে হাসপাতাল ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন। ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও অন্তত ১০ লক্ষাধিক টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারণেই এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তারা জানান, বহুদিন ধরে হাসপাতালের পুরোনো ও ত্রুটিপূর্ণ এনালগ বৈদ্যুতিক বাল্ব উত্তপ্ত হয়ে আগুনের সূত্রপাত ঘটায়।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকারি হাসপাতালের নামে কোটি টাকার অবকাঠামো কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই—এ যেন অব্যবস্থাপনার চরম দৃষ্টান্ত।”
এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণ ও সুধী সমাজ অবিলম্বে তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন যাতে ভবিষ্যতে এমন অব্যবস্থাপনার জন্য অগ্নিকাণ্ড বা কোন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এ ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
