নারী উদ্যোক্তার প্রকাশ্য উপস্থিতি  : অর্থনীতির বাইরে এক সামাজিক বিপ্লব

Uncategorized অর্থনীতি কর্পোরেট সংবাদ জাতীয় ঢাকা বানিজ্য বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

জয়া মাহবুব :  বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তারা আজ কেবল ব্যবসার অঙ্গনে নন—তারা সমাজ পরিবর্তনের নেতৃত্বেও আছেন। একসময় যখন নারীর ভূমিকা গৃহপরিসরেই সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তারা কর্মসংস্থান তৈরি করছেন, সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর এই পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে—নারী উদ্যোক্তাদের প্রকাশ্য উপস্থিতি।


বিজ্ঞাপন

প্রকাশ্য উপস্থিতি মানে শুধু প্রচারের আলোয় আসা নয়, বরং প্রভাব তৈরি করা। একজন নারী উদ্যোক্তা যখন নিজের সংগ্রাম, অর্জন ও স্বপ্নের কথা বলেন, তখন সেই গল্প অন্য নারীর মনে সাহসের আগুন জ্বালায়। দেখা যাওয়া মানেই কেবল দৃশ্যমানতা নয়—এটি সমাজে পরিবর্তনের বার্তা বহন করে।

আজ দেশের আনাচে–কানাচে হাজারো নারী উদ্যোক্তা আছেন—কেউ অনলাইনে ব্যবসা করছেন, কেউ ফ্যাশন, কৃষি, খাদ্যপ্রসেসিং বা শিক্ষা খাতে কাজ করছেন। কিন্তু তাঁদের অনেকেই এখনো আলোচনার বাইরে। এই নীরবতা ব্যক্তিগত নয়, বরং সামাজিক ক্ষতি। কারণ, যখন একজন নারীর সাফল্যের গল্প বলা হয় না, তখন অন্য নারীরা অনুপ্রেরণার উৎস হারায়।


বিজ্ঞাপন

রোল মডেল তৈরির শক্তি :  নারী উদ্যোক্তাদের প্রকাশ্য উপস্থিতি মানে রোল মডেল তৈরি। যখন তরুণীরা দেখে তাঁদের মতো একজন নারী সফলভাবে ব্যবসা চালাচ্ছেন, তখন উদ্যোক্তা হওয়ার সাহস জন্ম নেয়। সমাজও তখন ধীরে ধীরে বুঝতে শেখে—নেতৃত্ব কোনো লিঙ্গের বিষয় নয়, এটি যোগ্যতার প্রশ্ন।


বিজ্ঞাপন

প্রকাশ্য হওয়ার প্রয়োজনীয়তা এই দৃশ্যমানতা বাড়াতে প্রয়োজন সচেতন উদ্যোগ। প্রথমত, নারী উদ্যোক্তাদের নিজেদের গল্প বলতেই হবে—সোশ্যাল মিডিয়া, প্রদর্শনী, সম্মেলন বা সাক্ষাৎকারে। আত্মপ্রকাশ কোনো অহংকার নয়, বরং আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। দ্বিতীয়ত, নেটওয়ার্কিং বাড়ানো দরকার—একজন নারী উদ্যোক্তা অন্যজনের সঙ্গে যুক্ত হলে সহযোগিতা ও দৃশ্যমানতা, দুটোই বৃদ্ধি পায়। তৃতীয়ত, গণমাধ্যম ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নারীদের সাফল্যের গল্পগুলো নিয়মিতভাবে তুলে ধরতে হবে—কারণ অনুপ্রেরণা ছড়ানোর দায়িত্ব সমাজেরও।

সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন :  নারী উদ্যোক্তাদের প্রকাশ্য নেতৃত্ব কেবল অর্থনৈতিক সাফল্যের নয়, এটি মানসিকতার বিপ্লবও। পরিবার, সহকর্মী ও সমাজ যখন একজন নারীকে নেতৃত্বে দেখে, তখন ধীরে ধীরে দৃষ্টিভঙ্গিও বদলায়। নেতৃত্ব তখন লিঙ্গনির্ভর না হয়ে যোগ্যতানির্ভর হয়ে ওঠে।

এক নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি : শেষ পর্যন্ত নারী উদ্যোক্তাদের প্রকাশ্য উপস্থিতি অর্থনীতির চেয়ে বড় এক গল্প বলে—এটি আত্মবিশ্বাস, প্রভাব ও ভবিষ্যতের গল্প। যখন একজন নারী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন—“আমি আছি, আমি কাজ করছি, আমি পারি”—তখন সেটি শুধু একটি ব্যক্তিগত বার্তা নয়, বরং এক সামাজিক বিপ্লবের সূচনা।

প্রকাশ্য উপস্থিতি মানে কেবল আলোয় আসা নয়, বরং আলো জ্বালানো। সেই আলোয়ই গড়ে উঠছে নতুন বাংলাদেশ—যেখানে নারী উদ্যোক্তারা কেবল অর্থনীতির নয়, সমাজ পরিবর্তনেরও চালিকাশক্তি।

👁️ 23 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *