ডিডি প্রকল্পে শত কোটি টাকার লুটপাটের অভিযোগ : সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলক কারাগারে, প্রকল্প পরিচালক বালিগুর এখনো ক্ষমতার কেন্দ্রে !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  আইসিটি মন্ত্রণালয়ের “ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও ইনোভেশন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন (ডিডি)” প্রকল্পে প্রায় শত কোটি টাকা লুটপাট–অস্বচ্ছ ব্যয়–স্বজনপ্রীতি ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দ্বারা অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন প্রকল্পের সাবেক পরিচালক আবুল ফাতাহ মো. বালিগুর রহমান—যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)–এ সদস্য (যুগ্ম সচিব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।


বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে একই অভিযোগপত্র ও তদন্ত-সন্দেহের অংশ ছিলেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, যিনি এ মুহূর্তে কারাগারে। কিন্তু তার “ডান হাত” হিসেবে খ্যাত বালিগুর রহমান এখনও বহাল তবিয়তে সরকারি উচ্চপদে।

এ প্রশ্নে প্রশাসন ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট মহলে চলছে তীব্র আলোচনার ঝড়— “একই অভিযোগে পলক কারাগারে, কিন্তু বালিগুর কীভাবে এখনো ক্ষমতার বাইরে নন?”


বিজ্ঞাপন

স্বজনপ্রীতির চেইন : ‘পলকের স্ত্রী–বালিগুরের ভাতিজি’—অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে সম্পর্কের প্রভাব, সরকারি নথি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৫তম বিসিএস তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা বালিগুর রহমান ১৯৯৫ সালে চাকরিতে যোগ দেন।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগ রয়েছে— বাংলাদেশ বেতারে কর্মরত থাকা অবস্থায় তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী পলকের তদবিরে তিনি ২০১৮ সালে ২৫% কোটা ব্যবহার করে উপসচিব হন। বালিগুরের ভাতিজি পলকের স্ত্রীর আত্মীয়—এ সম্পর্কের সূত্রে তিনি ‘বিশেষ সুবিধা’ পেয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। পদোন্নতির পর অধিকাংশ সময় তিনি আইসিটি–সম্পর্কিত প্রকল্পেই পদায়িত ছিলেন। বিভিন্ন কর্মকর্তা দাবি করেছেন—“সম্পর্কের জোরে তিনি নিয়ম ভেঙে প্রকল্প বণ্টন, নিয়োগ, বাজেট ব্যয়সহ সব জায়গায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।”

ডিডি প্রকল্পসহ একাধিক বড় প্রকল্পে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ : মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, বালিগুর রহমান যেসব প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন, সেগুলোর বেশ কয়েকটিতে ব্যয়বহুল অডিট আপত্তি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগের তালিকায় আছে— ৮৩৭ কোটি: শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার (১১টি) ১,৮৮৬ কোটি: জেলা পর্যায়ে আইটি/হাই-টেক পার্ক স্থাপন, ৫৩৩ কোটি: শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার (২য় সংশোধিত) ৪৩১ কোটি: বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি–২, ৩৫৩ কোটি: ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও ইনোভেশন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন (ডিডি), ৭৪ কোটি: বিডিসেট প্রকল্প,
১,৫৩৪ কোটি: শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি, ১,১১৪ কোটি: শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার (১৪টি)  দুদক এসব প্রকল্পের ফাইল জব্দ করে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

অভিযোগ  : ৫% কমিশন–কাটমানি–বিদেশে অর্থ পাচার : আইসিটি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন— পলক–বালিগুর সিন্ডিকেট অনেক প্রকল্পে ৫% কমিশন নিতেন।

প্রকল্প টেন্ডার, ওয়ার্কঅর্ডার, পণ্য ক্রয়, ট্রেনিং ব্যয়—সব জায়গায় ‘কেন্দ্রীয় সিন্ডিকেট’ কাজ করত। নানা ঠিকাদারের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে।

একজন আইসিটি কর্মকর্তা বলেন— “পলকের প্রভাব থাকায় বালিগুরের বিরুদ্ধে মিডিয়া কিছু লিখতে সাহস করত না।” নৌপরিবহন অধিদপ্তরে গিয়ে আরও বড় অভিযোগ : জুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির পর বালিগুর রহমানকে নৌপরিবহন অধিদপ্তরে পরিচালক (প্রশাসন) পদে পাঠানো হয়।

সেখানেও অভিযোগের ঝড় : অভিযোগগুলো যথাক্রমে, ই-জিপি বাদ দিয়ে ম্যানুয়াল টেন্ডার—সিন্ডিকেটভিত্তিক ঠিকাদার নির্বাচন, এজি অফিস ও অডিটের নামে ৪% ঘুষ আদায় ” ঠিকাদারদের ১০% কর্তনকৃত নিরাপত্তা অর্থ ছাড়ে চাঁদাবাজি, তদন্ত কমিটির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় এবং কর্মকর্তাদের স্থায়ীকরণে ১ কোটি টাকার সিন্ডিকেট ডিমান্ড।

আকর্ষণীয় পদে বদলির জন্য জনপ্রতি ১ লাখ টাকা দাবি : এই অভিযোগের পর তাকে সরিয়ে বিসিএসআইআরে সদস্য করা হয়—যা দেখে অনেকেই স্তম্ভিত।

ঢাকায় ফ্ল্যাট–রাজশাহী ও বগুড়ায় জমিজমা—অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ  :  বালিগুর রহমান দাবি করেন— “আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। ঢাকায় আমার এক ছটাক জমিও নেই।”

তবে অনুসন্ধানী সূত্র বলছে— ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় প্রায় ৩,০০০ স্কয়ারফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে তার নামে বা বেনামে। রাজশাহী ও বগুড়ায় রয়েছে অধিক পরিমাণ সম্পদ। বিভিন্ন ঠিকাদারের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাঠানো হয়েছে—এমন অভিযোগও আছে।

সূত্রের দাবি—“২০১৮ সাল থেকে তিনি যেসব প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন—যে কোনো স্বাধীন তদন্তেই তিনি আইনি জটিলতায় পড়বেন।”

একই অপরাধে দুই বিচার?’—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার ক্ষোভ :  ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রশ্ন— “যেখানে পলক জেলে, সেখানে বালিগুর রহমান কীভাবে অবাধে উচ্চপদে? অন্তর্বর্তী সরকার কি তাকে তদন্তের বাইরে রাখতে চায়?”

শেষ কথা : ডিডি প্রকল্পসহ গুরুত্বপূর্ণ সব আইসিটি প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে যে অস্বচ্ছতা, সিন্ডিকেট, প্রভাব ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ছিল—পলকের গ্রেপ্তার–অবস্থান সেই অভিযোগকে আরও উসকে দিয়েছে।

এখন নজর একটাই— দুদকের তদন্ত কি বালিগুর রহমানের দিকে এগোবে?  নাকি তিনি প্রশাসনের ছত্রছায়ায় অদৃশ্য কোনো সুরক্ষা উপভোগ করে যাবেন?

👁️ 26 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *