
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক আবু নুর মোহাম্মদ সামসুজ্জামান

বিশেষ প্রতিবেদক : প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের লাগাম টানতে গিয়েই কি এখন অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন মহাপরিচালক আবু নুর মোহাম্মদ সামসুজ্জামান ? অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য—সংস্কার শুরু হতেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজ চক্র।
সংস্কার শুরু, তাতেই শুরু ষড়যন্ত্র : গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আবু নুর মোহাম্মদ সামসুজ্জামান মাঠপর্যায়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। ভুয়া বিল, নিম্নমানের নির্মাণকাজ, শিক্ষক হয়রানি, নারী সহকর্মীদের লাঞ্ছনার অভিযোগ—সবকিছুতেই শূন্য সহনশীলতা নীতির বাস্তব প্রয়োগ শুরু হয়। ফলাফল? দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগী সিন্ডিকেট আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

অনুসন্ধানে যা পাওয়া গেছে : এই প্রতিবেদনের অনুসন্ধান টিম দেশের বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কাজ করে দেখতে পায়— যেসব কর্মকর্তা শাস্তির মুখে পড়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে দুদক ও মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ গেছে, যাদের অবৈধ সুবিধা বন্ধ হয়েছে, তাদের একটি অংশই অনলাইন পোর্টাল ও কিছু অসাধু সংবাদমাধ্যমকর্মীকে ব্যবহার করে মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়াচ্ছে। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এসব তথাকথিত সংবাদে— যাচাই নেই, বক্তব্য একপাক্ষিক৷ এবং তথ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

মাঠপর্যায়ের বাস্তব চিত্র : আমরা রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, গাজীপুরসহ একাধিক উপজেলায় গিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের বক্তব্য প্রায় অভিন্ন—“এত সহজে কোনো মহাপরিচালকের কাছে আগে পৌঁছাতে পারিনি। উনি আমাদের সমস্যা শুনেন, সমাধান দেন।” “আগে ফাইল ঘুরত, এখন সিদ্ধান্ত হয়।” “দুর্নীতিবাজদের ভয়—এই কারণেই উনাকে নিয়ে অপপ্রচার।”
দৃশ্যমান উন্নয়ন, কথায় নয়, কাজে : অনুসন্ধানে দেখা যায়— নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে গতি এসেছে, নিম্নমানের ঠিকাদারি কাজ বাতিল হয়েছে, শিক্ষার মান উন্নয়নে কার্যকর মনিটরিং শুরু হয়েছে,, শিক্ষক বদলি ও পদায়নে স্বচ্ছতা বেড়েছে এবং এই পরিবর্তনই মূলত ক্ষুব্ধ করেছে সুবিধাভোগীদের।
কে এই মহাপরিচালক ? আবু নুর মোহাম্মদ সামসুজ্জামান—
১৮তম বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা, রংপুর জেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম, দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে সরকারি দায়িত্ব পালনকারী, ব্যক্তিজীবনে নির্লোভ, সৎ ও কর্মঠ, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে, তার অধিকাংশের কোনো দালিলিক ভিত্তি নেই—এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক সূত্র।
মহাপরিচালকের অবস্থান : এ বিষয়ে মহাপরিচালক স্পষ্ট ভাষায় বলেন—“প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সুনাম রক্ষা আমার দায়িত্ব। যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে, তাদের বিষয়ে সরকার অবগত। অপপ্রচার চলতে থাকলে আমি অবশ্যই আইনি পথে যাব।”
প্রশ্ন এখন একটাই : সংস্কার চাইলে কেন অপপ্রচার? দুর্নীতি বন্ধ হলেই কেন চরিত্র হনন? বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নতুন কিছু নয়—যেখানেই স্বচ্ছতা আসে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
শেষ কথা : প্রাথমিক শিক্ষায় যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, তা থামাতে অপপ্রচারই এখন সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে একটি কুচক্রি মহল। কিন্তু প্রশ্ন হলো—মিথ্যা দিয়ে কি সত্যকে থামানো যায়? সময়ই এর উত্তর দেবে।
