ভয়াবহ রূপ নিতে পারে করোনা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

পরিস্থিতির অবনতি হলে ফের বিধিনিষেধ


বিজ্ঞাপন

বিশেষ প্রতিবেদক : কঠোর বিধিনিষেধ শেষে চিরচেনা রূপে ফিরেছে রাজধানী ঢাকা। বিধিনিষেধ শিথিলের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সড়কে দিনভরই লেগে ছিল যানজট। কোথাও কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। রাস্তাঘাট, ফুটপাত, কাঁচাবাজার, অলিগলি, শপিং মল, অফিস-আদালতপাড়ায় ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। মানুষের ভিড়ের কারণে চাইলেও সামাজিক দূরত্ব মানার সুযোগ নেই। মাস্কও ব্যবহার করছেন না অনেকেই। এ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এতে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
রাজধানীর মিরপুর, ভাষাণটেক, ইসিবি চত্বর, মগবাজার, মৌচাক, কাকরাইল, পল্টন, শাহবাগ, নিউমার্কেট, পান্থপথ ও কারওয়ান বাজার এলাকায় দেখা গেছে সড়কে যানজট। ফুটপাতে বসেছে ভাসমান চা-সিগারেটের দোকান। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মাছবাজার সর্বত্রই মানুষ আর মানুষ। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই। যাদের কাছে মাস্ক ছিল তারাও তা সঠিকভাবে পরেননি।
এদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে দেশে ফের কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) আরোপ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও খারাপ হলে সরকারের পরবর্তী কৌশল কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুটি কৌশলই আমরা অবলম্বন করব। একটা হলো বিধিনিষেধ বা লকডাউন দেয়া। আরেকটি হচ্ছে ছেড়ে দেয়া। কিন্তু সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।
সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, আক্রান্ত বাড়তে থাকলে এবং মানুষ না মানলে আবার লকডাউন দেয়া হবে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে বাড়লেই, যেমন অস্ট্রেলিয়াতে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে, কারফিউ দেয়া হয়েছে। আমেরিকাতে দেয়া হয়েছে। দেয়া হচ্ছে কেন? কারণ এর কোনো বিকল্প নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দুটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি টিকাকরণ, অপরটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক ব্যবহার করা। দেশে দ্রুততম সময়ে টিকাদান সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ টিকা আসছে তা দিয়ে সব মানুষকে দিতে দেড় থেকে দুই বছর লাগবে। এর আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক ব্যবহারের ওপরই অধিকরত গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু বিধিনিষেধ শিথিলের পর থেকেই বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আতঙ্কের বিষয় হলো, মানুষ মাস্ক ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে না। এভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ ও মৃত্যু আরও বাড়বে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যমকে বলেছেন, জীবন-জীবিকার সমন্বয় করতে গিয়ে বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার বিকল্প ছিল না। কারণ দীর্ঘদিন কঠোর বিধিনিষেধ চালু থাকলে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট বাড়ে। কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেলে জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। করোনায় প্রতিদিন যত মানুষের মৃত্যু হয়, তখন তার চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হবে ক্ষুধায়।
তিনি বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। যখন যে পরিমাণ টিকা আসছে তার ওপর ভিত্তি করে বিতরণ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রায় দুই কোটি মানুষকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় ৫০ লাখের মতো মানুষের দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে দেশে আরও ১৫ কোটি ডোজের মতো টিকা চলে আসবে। এর মধ্য দিয়ে দেশে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় চলে আসবে। সবার প্রতি আহ্বান থাকবে, পর্যাপ্ত টিকা দেওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সবাই মাস্ক ব্যবহার করুন।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১ জুলাই দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে ট্রেন, বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ঈদুল আজহা ঘিরে ১৫ থেকে ২২ জুলাই বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে চলে এসব যাত্রী পরিবহন। তবে ২৩ জুলাই থেকে আবার বিধিনিষেধ জারি হলে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ থাকে।

👁️ 5 News Views