
নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে ধারাবাহিক এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করছে। সম্প্রতি নওগাঁ, কক্সবাজার ও নোয়াখালী জেলায় পরিচালিত তিনটি পৃথক অভিযানে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ উদঘাটন করেছে কমিশন।

নওগাঁয় ভারতীয় নাগরিকদের পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের সন্ধান : নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব প্রদানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, নওগাঁ একটি অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানকালে টিম অফিস হতে অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রেকর্ড সংগ্রহ করে এবং নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস ও বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও অতিরিক্ত তথ্য নেয়। দৈবচয়নের ভিত্তিতে কিছু আবেদন যাচাই করে টিম দেখতে পায়, অসাধু যোগসাজশে বিধিবহির্ভূতভাবে পাসপোর্ট প্রদানের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে। সংগৃহীত রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ শেষে কমিশনের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবে টিম।


কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সরকারি ওষুধ বাণিজ্যের প্রমাণ : অপরদিকে, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ওষুধ ফার্মেসিতে বিক্রয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কক্সবাজার একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযান চলাকালে দেখা যায়—হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ থাকা সত্ত্বেও রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। দুদক টিম রোগী, স্বজন, প্রসূতি সেবা বিভাগের ইনচার্জ এবং স্টোর কিপারের কাছ থেকে সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়। এছাড়া সেবা প্রদানে নানাবিধ অনিয়ম ও হয়রানিরও প্রমাণ মেলে। টিম এখন হাসপাতালের ওষুধ বিতরণ ও মজুদের রেকর্ডপত্র যাচাই করছে।

নোয়াখালীতে আনসার-ভিডিপি ব্যাংকে ভুয়া ঋণ কেলেঙ্কারি : একই দিনে দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, নোয়াখালী আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের সেনবাগ ও দত্তেরহাট শাখায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযোগ ছিল, ভুয়া ব্যক্তির নামে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
রেকর্ড যাচাইয়ে টিম প্রাথমিকভাবে ছয়টি ভুয়া ঋণের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়। অন্যান্য ঋণ হিসাব যাচাই প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তিনটি অভিযানে সংগৃহীত তথ্য ও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে কমিশনের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, “যেখানেই অনিয়ম বা দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যাবে, সেখানেই আমরা অভিযান চালাব। কোনো দুর্নীতিবাজই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
এই ধারাবাহিক অভিযানে দুদকের কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের আস্থা আরও সুদৃঢ় হয়েছে বলে স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা মন্তব্য করেছেন।
