দুদক ও মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ কামনা  : নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের শীপ সার্ভেয়ার মাহবুবুর রশীদ মুন্নার মাসিক অবৈধ আয় ৩০ লক্ষ টাকা !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক  :  নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নৌ-প্রকৌশলী ও সার্ভেয়ার মাহবুবুর রশীদ মুন্নার বিরুদ্ধে প্রায় একডজন গুরুতর অভিযোগ জমা পড়েছে নৌ পরিবহন মনন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে। এসব অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে সত্যতাও পাওয়া গেছে।


বিজ্ঞাপন

জানাগেছে, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ অফিসের নৌ প্রকৌশলী ও শীপ সার্ভেয়ার মাহবুবুর রশীদ মুন্না অবৈধপথে কেবলমাত্র নৌযান সার্ভে খাতেই প্রতিমাসে কমপক্ষে ৩০ লক্ষ টাকা অবৈধ আয় করছেন।

কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকেই তিনি অভিনব কায়দায় সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করছেন। অন্যদিকে নৌপথে চলাচলকারী মানুষের জীবন বিপন্নের পথ সুগম করে দিচ্ছেন। সরকার যে লক্ষ্য অর্জনে তাদেরকে নিয়োগদান করেছে এবং বেতন ভাতা দিচ্ছে সেই লক্ষ্যের বিপরীত মেরুতে তিনি অবস্থান নিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন

এতেকরে সরকার যেমন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমন নৌযান মালিকরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সব থেকে বড় আশংকার কথা হল- নৌপথের যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে এই দুর্নীতিবাজ নৌ প্রকৌশলী ও শীপ সার্ভেয়ারের কারণে।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগের বর্ণনায় জানা গেছে, এই নৌ-প্রকৌশলী সাবেক দুই দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী যথাক্রমে মইন উদ্দিন জুলফিকার ও এস এম নাজমুল হকের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। তাদের পদাংক অনুস্মরণ করে এবং পরামর্শ মোতাবেক নানা কৌশলে অনিয়ম -দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। তাদের সম্পর্ক প্রভুভক্ত গুরু শিষ্যের মতই বিদ্যমান।

প্রায় দিনই তারা সন্ধ্যারপর ঢাকা বনশ্রী আফতাব নগরের একটি নির্জন বাড়ীতে অথবা পাঁচ তারকা হোটেলে একত্রে মিলিত হয়ে শলাপরামর্শ করেন। কিভাবে অতি অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া যায় তার দীক্ষা নিয়ে থাকেন। নৌ সেক্টরের বারোটা বাজিয়ে নিজেদের বিত্তবিলাসী জীবন পরিচালনার মাষ্টারপ্ল্যান করা নিয়েই ব্যস্ত থাকছেন।

সুত্রমতে,এই প্রকৌশলী প্রতিদিন গড় ৩০ টি করে নৌযান সার্ভে করে থাকেন। নথিপত্র ঘেটে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সার্ভেয়ার মুন্না প্রতিদিন ২০ টি নৌযানের সার্ভে করেছেন। আর এসব নৌযানের সার্ভে ও ফিটনেস সনদ প্রদান বাবদ জাহাজের প্রকারভেদে প্রতিটি থেকে ঘুষ নেন ৩০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা। এক্ষেত্রে তারা পুরাতন, অকেজো, লক্করঝক্কর, মেয়াদ উত্তির্ণ নৌযানের মালিকদের সাথে দালাল মাধ্যমে দামদর নির্ধারণ করে থাকেন।

আরো জানা গেছে, ৩০ বছরের উর্ধে বয়সি জাহাজ নামে মাত্র নকশা জমা রেখে জাহাজের কাঠামো ও যান্ত্রিক পরীক্ষা- নীরিক্ষা না করেই ওই জাহাজকে ৫/৭ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নতুন জাহাজ হিসাবে রেজি: প্রদান করা হচ্ছে। অন্যদিন নৌযানের গ্রসটন কমিয়ে পরস্পর যোগসাজষে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৩০/৪০ মিটার দৈঘের মালবাহী ও বালুবাহী জাহাজকে ২৮/৩০ মিটার দৈর্ঘ মাপে রেজি: প্রদান করে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আত্মসাৎ করছেন। ২০১৮ থেকে ২০২৫ অর্থ বছরে নতুন রেজি: প্রদানকৃত মালবাহী ও বালূবাহী নৌযানগুলোর ফাইল নীরিক্ষা করলেই এই জাল জালিয়াতির প্রমান মিলবে।

অন্যদিকে যেসমস্ত নৌযানের উপকুল অতিক্রমের যোগ্যতা নেই সেই সমস্ত নৌযানকে অর্থের বিনিময়ে উপকুল অতিক্রম বা চলাচলের অনুমতি প্রদান করে প্রতিটি থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা উৎকোচ আদায় করা হচ্ছে।

এছাড়া নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রশাসনিক আদেশ থাকা সত্বেও নৌযানের মালিকানা পরিবর্তনে বিধি ভংগ করে ৭/৮ লাখ টাকার বিনিময়ে মালিকানা পরিবর্তন করে রেজি: সনদ প্রদান করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত বিধি হল: জাহাজ নির্মাণেরপর ২ বছরের মধ্যে মালিকানা পরিবর্তন করা যাবে না। অথচ নানা অজুহাতে সেই বিধি ভংগ করা হচ্ছে।

আরো জানা গেছে, জাহাজ নির্মাণ হওয়ার আগেই সরে জমিনে পর্যবেক্ষণ না করেই অর্থের বিনিময়ে সার্ভে এবং রেজি: প্রদান করা হচ্ছে। কিললেইংক বা জাহাজ নির্মাণের স্ট্রাকচার পর্যবেক্ষণ না করেই কিললেইংক সনদ ইস্যু করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জাহাজ প্রতি ঘুস নেওয়া হচ্ছে ৩/৪ লক্ষ টাকা।

সুত্রমতে, নারায়ণগঞ্জের নৌ প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান মুন্নার ফ্যামেলী ঢাকায় থাকেন। তিনি কোন দিনও দুপুর ২ টার আগে নারায়ণগঞ্জ অফিসে যান না। আবার ৫ টার আগেই বাসায় ফিরে আসেন। তা হলে তিনি প্রতিদিন ১০ টি করে নৌযান কখন সার্ভে করেন। তিনি প্রতিটি ত্র“টিপূর্ণ নৌযানের সার্ভে সনদ দিতে ঘুষ নিচ্ছেন ৩০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা। রেজি: বাবদ নিচ্ছেন ১ থেকে ৩ লক্ষ টাকা। আর এসব মক্কেল জোগাড় করে দিচ্ছেন সাবেক সার্ভেয়ার মইনুদ্দিন জুলফিকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌ প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান মুন্না গত ৫ বছরে ৩ হাজার নৌযান সার্ভে ও রেজি: দিয়েছেন। হেড অফিসের ফাইল চেকআপ করলেই তার প্রমান মিলবে।

অন্যদিকে সার্ভেয়ার মাহবুবুর রশীদ মুন্না সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঘুষ গ্রহনের দায়ে সাময়িক বরখাস্ত ও দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত) এস এম নাজমূল হকের অতি প্রিয় সাগরেদ বা ডান হাত হিসাবে নৌ অধিদপ্তরে পরিচিত। তারা দুইজন একই গোয়ালের গরু হিসাবে খ্যাত। দু’জনের চরিত্রেরও ভীষন মিল রয়েছে।

সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সাথে প্রকৌশলী এস এম নাজমুল হকের দহরম মহরম সম্পর্ক থাকাকালে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন থেকে মাহবুবুর রশীদ মুন্নাকে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে এটাচমেন্টে নিয়ে আসেন। শর্ত থাকে যে, নাজমুলের কথামত তিনি সব কাজ করবেন। মুন্নাও সেই শর্তে অংগীকারবদ্ধ হয়েই নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে যোগদানের সুযোগ পান। সেই থেকে তাদের মধ্যে গুরু শিষ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। সেটি আজো অটুট রয়েছে। দুদকের ফাঁদে ঘুষের ৫ লক্ষ টাকাসহ নাজমুল গ্রেফতার হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলেও মুন্না কিন্তু আজো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। তিনি বরখাস্ত থাকা সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এসএম নাজমুলের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক ফাইল ওয়ার্ক করছেন। ফলে নাজমূল ক্ষমতার বাইরে থেকেও ঠিক আগের মতই সার্ভে ও রেজি: বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। কেবল সার্ভে আর রেজি: নয়, তিনি মাষ্টার ,ড্রাইভার পরীক্ষাতেও সমানতালে পাশ বানিজ্য করে যাচ্ছেন। তার সকল প্রকার কর্মে সাহায্য করছেন এই মাহবুবুর রশীদ মুন্না।

জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ নৌযান সার্ভে,ফিটনেস পরীক্ষা, রেজিস্ট্রেশন এবং নৌযান সার্ভে সনদ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি করে তিনি অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আর সে সব টাকায় রাজধানীর আফতাব নগরে ৫ কাঠার প্লট কিনে বহুতলা বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করছেন। তার প্লট নং বাসা নং ১৮, রোড নং ৫,ব্লক-এম, অফতাবনগর,ঢাকা। নিজের জন্য আছে একখানা গাড়ি আবার স্ত্রী সন্তানের জন্যও একখানা গাড়ি ক্রয় করেছেন। এছাড়া তার শেয়ারে শীপ/ জাহাজ ব্যবসা রযেছে। গত ৬ মাস ধরে তিনি নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের চীফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য জামায়াতের নেতাদের সাথে কোটি টাকার চুক্তি ও একাধিক বৈঠক করেছেন।

তিনি দেখতে তামিল ভিলেনদের মতো হলেও নিজ প্রযোজনায় প্রায় ১.৫ কোটি টাকা খরচ করে ভাগ্য নামে একটি সিনেমাও নির্মাণ করেছেন। সেই সিনেমার নায়িকা হিসেবে আওয়ামী লীগের মহাক্ষমতাধর নেতা শেখ সেলিমের রক্ষিতা নায়িকা নিপুণকে কাস্টিং করেন। এটা ছিল শেখ সেলিমের নির্দেশ। সিনেমাটি দর্শক মহল প্রত্যাখ্যান করে। ফলে পুরো ১.৫ কোটি টাকাই জলে গেছে। এই সিনেমা দেখানোর জন্য তিনি নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে নৌযান সার্ভে (ফিটনেস পরীক্ষা) ও রেজিস্ট্রেশনের কাজ করা (এজেন্ট)দেরকে দর্শক নিয়ে যেতে চাপ দেন। এজেটগণ তার চাপে দর্শক ভাড়া করে সিনেমা হলে নিয়ে যেতে বাধ্য হন।

মাহবুবুর রশীদ মুন্না বনশ্রীর আফতাব নগরের প্লট কিনে যে বহুতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন, সেই বাড়িতে বসেই যত দুনম্বরী কাজ আছে সেগুলো সমাধান করেন। তার এই বাড়িতে এস এম নাজমূলও নিয়মিত আসা যাওয়া করেন। সরেজমিনে না গিয়ে এখানে বসেই নৌযানের কাগজপত্র সহি -সম্পাদনা করেন। এই ফ্ল্যাটে নৌ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাও মাঝে মধ্যে মেহমান হয়ে থাকেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। মুন্না কাগজপত্র যাচাই বাছাই না করে এমন কি জাহাজটি না দেখেই ঢাকায় বসে প্রতিদিন গড়ে ২০ টি জাহাজ সার্ভে করেছেন যা একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা। গত এক বছরে তিনি প্রায় ৬ হাজার নৌযান সার্ভে করেছেন। হেড অফিসের ফাইল নীরিক্ষা করলেই তার প্রমান পাওয়া যাবে। আর এসব মক্কেল যোগাড় করে দিয়েছেন ঘুষ নেওয়ার অপরাধে বরখাস্ত থাকা প্রকৌশলী এস এম নাজমূল হক। মুন্না এক একটি ক্রুটিপূর্ণ জাহাজ সার্ভে সনদ দিতে ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা ঘুস নিয়ে থাকেন। আর রেজি: বাবদ প্রতি নৌযানে নেন ১ লক্ষ টাকা।

সম্প্রতি এসব অভিযোগ উল্লেখপূর্বক জনৈক ব্যাক্তি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ,সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য শীপ সার্ভেয়ার মাহবুবুর রশীদ মুন্নার সেল ফোনে কল করলে তিনি কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে আফতাব নগরে এসে তার সাথে দেখা করতে বলেন।

👁️ 201 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *