মানবতা ভুলুন্ঠিত : ব্যাংক ঋনের কবলে এমপিও ভুক্ত শিক্ষক

জাতীয় জীবন-যাপন শিক্ষাঙ্গন

আক্তারুজ্জামান : বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৪/০৩/২০২২০ ইং তারিখের ডিএফআইএম সার্কুলার -১ এ সকল তফসীলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী/ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি আদেশ জারী করেন। করোনা প্রভাবে মানুষ আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হবে বিধায় বাংলাদেশে ব্যাংক ঐ সার্কুলারে ০১/০১/২০২০ হইতে ৩০/০৬/২০২০ পর্য্ন্ত বিদ্যমান ঋন/লিজ/অগ্রিমের শ্রেনিমান অপরিবর্তিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করার কথা বলেন। যাহা ১৯/০৩/২০২০ দৈনিক প্রথম আলো সহ জাতীয় পত্রিকা ও বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশ ব্যাংক দেশ আর্থিক বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে ঋন গ্রহীতাদের জন্য বিশেষ সুবিধার ঘোষনা দিয়েছে। এই ঘোষনা অনুযায়ী যদি কোন ঋন গ্রহীতা আগামী জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ না করেন, তাহলে ঋনের শ্রেনিমানে কোন পরিবর্তন আনা যাবে না এবং তাকে খেলাপী হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
একজন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখার ক্ষেত্রে প্রধানশিক্ষক ১০% কর্তন বাদে মাসিক বেতন উত্তোলন করেন সর্বোচ্চ ৩১০০০/= টাকা, একজন সহকারী শিক্ষক বেতন (যিনি ২২০০০/= টাকা স্কেলে) উত্তোলন করেন ১০% কর্তন বাদে ২৩০০০/= টাকা এবং একজন সহকারী শিক্ষক (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) ১৬০০০/= টাকায় বর্তমানে ইনক্রিমেন্ট সহ ১০% কর্তন বাদে উত্তোলন করেন ১৭০০০/= এর একটু বেশী। প্রশিক্ষণ বিহীন একজন অনার্স/মাস্টার্স নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক মাসে পান ১০% কর্তন বাদে ১২৫০০/= মত। এর উপর যদি ব্যাংক ঋনের কিস্তি কর্তন করে, তাহলে কেউ পাবে অর্ধেক টাকা । বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনা সত্বেও গত মার্চ মাসেও কর্তন হয়েছে। আগামী মাস গুলোতে যাতে কর্তন না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহন এখনি দরকার । তা না হলে যারা জাতির বিবেক তৈরিতে নিজেদের তিলে তিলে শেষ করছেন, দেশের জন্য, তারা যদি কষ্টে থাকে, অভুক্ত থাকে, এ লজ্জা গোটা দেশের, গোটা জাতির । বর্তমানে যেখানে ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ, তাই একজন গ্রামের শিক্ষকের অন্য আয়ের রাস্তাও বন্ধ। এই সামান্য টাকা দিয়ে একজন মানুষ গড়ার কারিগর কিভাবে জীবন যাপন করবে, তা যেমন ভাববার বিষয়, তেমনি তাদের এই অসহায়ত্ব কারও কাছে প্রকাশহীন বটে।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী যেখানে প্রণোদনার ঘোষনা দিয়েছেন, এবং এই পরিস্থিতিতে দেশে যাতে টাকার প্রবাহের কোন সমস্যা না হয়, সেদিকেও নির্দেশনা দিচ্ছেন, সেখানে একজন শিক্ষকের এই অসহায়ত্ব কি প্রশাসন থেকে শুরু করে কারও চোখে পড়ে না। আমরা জাতি হিসেবে একজন শিক্ষকের জন্য কি করেছি বা করতে পেরেছি?
শিক্ষকদের মনে প্রশ্ন হাজার হাজার কোটি ঋন খেলাপীরা ঋন পায়, তাদের কিছু হয় না। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে তারা ব্যাংক ঋন গ্রহন করে, অথচ তাদের কিছুই হয় না। কিন্তু যাদের একাউন্ট থেকে প্রতিমাসে ঋনের কিস্তির টাকা অটো কর্তন হয়, তাদের এই সুযোগটি দিতে দেশের কি আর্থিক অবষ্থা দুর্বিসহ হবে? প্রশ্ন সকল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের।
শিক্ষকদের চাওয়ার কিছু নেই। পাবার ও কিছু নেই। তারা শুধু চায় আগামী কোরবানীর ঈদ পর্যন্ত যাতে ব্যাংক ঋনের কিস্তি স্থগিত থাকে। পরিস্থিতি অনুকুলে আসলে আবার কর্তন শুরু করবে। এব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।


বিজ্ঞাপন