অভিভাবকহীন এলজিইডি :  নেতৃত্বহীনতায় স্থবির দেশের বৃহত্তম উন্নয়ন সংস্থা 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

# প্রধান প্রকৌশলীর পদ শূন্য, যোগ্যতার চেয়ে প্রভাবশালী লবির দাপটেই চলছে পদায়ন ও পদোন্নতি — ব্যক্তি স্বার্থে থমকে যাচ্ছে রাষ্ট্রের উন্নয়নচাকা #


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক :  বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সড়ক, সেতু, বিদ্যালয়, বাজার, পানি নিষ্কাশনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের নেপথ্যে কাজ করছে এই সংস্থাটি। কিন্তু বর্তমানে দেশের এই বৃহত্তম প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানটি নিজেই পড়ে গেছে অস্থিরতা ও নেতৃত্বহীনতার ঘূর্ণিতে।

প্রধান প্রকৌশলীর পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এর ফলে একদিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া মন্থর, অন্যদিকে কর্মকর্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে অনিশ্চয়তা ও হতাশা। মাঠপর্যায়ের প্রকৌশলীরা বলছেন, “এলজিইডি এখন অভিভাবকহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।”


বিজ্ঞাপন

যোগ্যতার চেয়ে প্রভাবের জয়জয়কার : অভিযোগ উঠেছে— প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন ও পদোন্নতিতে এখন যোগ্যতা নয়, প্রভাব ও ব্যক্তিস্বার্থই প্রধান নিয়ামক। যাদের প্রশাসনিক দক্ষতা, মাঠের অভিজ্ঞতা ও সততা দিয়ে প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যাওয়ার কথা, তারাই পড়ছেন উপেক্ষার শিকার।


বিজ্ঞাপন

এই অনিয়মের সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে একজন সিনিয়র ও দক্ষ কর্মকর্তা— প্রকৌশলী মো. জাবেদ করিম। মাঠ পর্যায় থেকে সদর দপ্তর পর্যন্ত সুনাম ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও প্রধান প্রকৌশলী পদে তাঁর নিয়োগে নানামুখী বাধা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের একাধিক সূত্র।

একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,  “এখন যোগ্যতার মূল্য নেই, কে কাকে খুশি করতে পারে সেটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বছরের পর বছর কাজ করে সুনাম অর্জন করছেন, কিন্তু প্রভাবশালী মহলের অনুকম্পা না থাকলে পদোন্নতির তালিকায় নাম ওঠে না।”

নীতি হারাচ্ছে প্রতিষ্ঠান : একজন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী বলেন, “জাবেদ করিমের মতো পেশাদার ও সৎ কর্মকর্তা যদি বারবার উপেক্ষিত হন, তাহলে এলজিইডির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। যারা মাঠে কাজ জানেন, তারাই উন্নয়নের মেরুদণ্ড শক্ত রাখেন। কিন্তু এখন সম্পর্কই যোগ্যতার বিকল্প হয়ে গেছে।”

অভ্যন্তরীণ এই ‘দলবাজি’ ও ‘লবিবাজি’ শুধু কর্মকর্তাদের মনোবলকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না— এতে প্রকল্প বাস্তবায়নেও দেখা দিচ্ছে বিলম্ব, বেড়ে যাচ্ছে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা।

“যোগ্যতার বদলে সম্পর্ক হলে ক্ষতি রাষ্ট্রের” :  একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব বলেন, “প্রধান প্রকৌশলীর পদ কেবল প্রশাসনিক নয়; এটি একটি নীতিনির্ধারণী অবস্থান। সেখানে অনভিজ্ঞ বা অযোগ্য কাউকে বসানো মানে পুরো দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ঝুঁকির মুখে ফেলা।”

তিনি আরও বলেন, সরকার যদি রাজনৈতিক বিবেচনা বা ব্যক্তি-সুবিধার বিনিময়ে পদায়ন করে, তবে এটি হবে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের জন্য বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত।

মাঠে ক্ষোভ, দপ্তরে অনিশ্চয়তা  :  এলজিইডির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে— সিনিয়র প্রকৌশলীদের অনেকে নিজেদের বঞ্চিত ও নিরুৎসাহিত মনে করছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন,  “যেখানে মেধা ও পরিশ্রমের মূল্য নেই, সেখানে কেউ আর নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করবে কেন?”

“এলজিইডি শুধু একটি দপ্তর নয়, এটি উন্নয়নের মেরুদণ্ড” : অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা মনে করেন, এলজিইডির নেতৃত্বে এমন একজনকেই আনতে হবে, যিনি মাঠ ও প্রশাসন— দুই দিকই বোঝেন, যিনি প্রকল্প বাস্তবায়নকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে পারেন। সেই যোগ্যতা, সততা ও নেতৃত্বগুণ প্রকৌশলী জাবেদ করিমের মধ্যে আছে— এমনটাই বলছেন তাঁর সহকর্মীরা।

একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন,  “এলজিইডিতে অন্যায় পদায়ন মানে রাষ্ট্রের উন্নয়নকেই ধাক্কা দেওয়া। সরকারের শীর্ষ পর্যায় চাইলে খুব সহজেই বুঝতে পারবে, কে যোগ্য আর কে নয়— প্রশ্ন হলো, তারা কি সত্যিই তা দেখতে চায়?”

শেষ কথা : নেতৃত্বহীনতার এই ধোঁয়াশা কতদিন স্থায়ী হবে— তা নিয়ে এখন দপ্তরের ভেতরে চলছে নানা গুঞ্জন। একদিকে থমকে থাকা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, অন্যদিকে যোগ্য কর্মকর্তাদের ক্ষোভ— সব মিলিয়ে এলজিইডি এখন এক সঙ্কটময় সন্ধিক্ষণে।

দেশের উন্নয়নের এই মূল সেতু প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ সঙ্কট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে— এর ধাক্কা সরাসরি পড়বে জাতীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ওপরই।

👁️ 269 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *