
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি— দেশের লাখো ওষুধ ব্যবসায়ীর প্রাণের সংগঠন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই সংগঠনটিকে ঘিরে দেখা দিয়েছে বিভাজন, অনৈক্য ও অস্বচ্ছ কর্মকাণ্ডের এক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি।

কয়েকজন সম্মানিত সদস্য এবং জেলা পর্যায়ের কিছু নেতা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে সভাপতি ঘোষণা করে তাঁর প্রতি “শতভাগ আস্থা” ব্যক্ত করেছেন। এটা শুনতে যেমন ইতিবাচক, বাস্তবে তেমনই জটিল প্রশ্নও তৈরি করেছে। কারণ, যারা এই একতরফা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন, যারা সংগঠনের ভেতরের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ তুলছেন— তাদেরই ‘সংগঠনবিরোধী’ বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে!
গঠনতন্ত্র কোথায়? : সদস্যদের অভিযোগ— সমিতির গঠনতন্ত্রের ধারাগুলোকে বারবার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে কোনো বার্ষিক সাধারণ সভা হয়নি, আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা হয়নি, এমনকি অফিসে বাইরের লোকজন নিয়ে গোপন মিটিং পর্যন্ত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে— এসব কি সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে?

ঢাকা জেলা শাখার পরিস্থিতিও একই —-২৯ বছর ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি, সাধারণ সভা হয়নি, আয়-ব্যয়ের জবাব নেই। দীর্ঘদিন ধরে এক ‘মামু-ভাগ্নে কমিটি’ই চালিয়ে আসছে সবকিছু। সম্প্রতি পরিচালনা পরিষদের সভায় এই পুরোনো কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলেও, কয়েকদিন পর রহস্যজনকভাবে বিলুপ্ত কমিটিকেই পুনর্বহাল করা হয়! এটি কোন ধারায় সম্ভব— তারও জবাব নেই কারও কাছে।

ভুল তথ্য ও মিথ্যা আশ্বাসের অভিযোগ : ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রচার চালানো হয়— “শিল্প সমিতি নাকি ১৯% কমিশন দাবী মেনে নিয়েছে।” কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, দাবি আদায় হয়নি। বরং ১৯% আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটিকেই অকালে ‘মৃত্যু’ ঘটানো হয়েছে। এখন আবার ২৫% দাবির প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ কেমিস্টদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে— এমন অভিযোগও উঠেছে।
সাধারণ কেমিস্টদের মতে, “শতভাগ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন— এমআরপি বাস্তবায়ন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত, প্রশাসক নিয়োগ— এসব নিয়ে বর্তমান কমিটি একটিও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।”
মতবিরোধ মানেই বহিষ্কার : সংগঠনের অভ্যন্তরে মতবিরোধ নতুন নয়, কিন্তু এখানে মতভিন্নতা প্রকাশ করলেই ‘বহিষ্কার’! যে সদস্যরা বর্তমান কমিটির কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাদের সভা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, অপবাদ দেওয়া হচ্ছে, এমনকি জেলা পর্যায়ে তাদের কাজ করতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমান পরিচালনা পরিষদের প্রায় ১৪–১৫ জন সদস্য অনুপস্থিত বা নিষ্ক্রিয়, তবু তাদের ছাড়া একতরফা সিদ্ধান্তে সমিতি চলছে— যা অনেকের চোখে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি।
সমাধান কী? : অসন্তুষ্ট সদস্য ও সাধারণ কেমিস্ট সমাজের অভিমত— “এখন সময় এসেছে এই অনিয়মের অবসান ঘটানোর। বর্তমান পরিচালনা পরিষদকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে হবে। সরকারের উচিত দ্রুত একজন প্রশাসক নিয়োগ করে সমিতি পরিচালনা করা এবং নিরপেক্ষ ভোটার তালিকার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা।”
কারণ এই সমিতি শুধু একটি সংগঠন নয়— এটি লাখো কেমিস্টের জীবন-জীবিকার প্রতিচ্ছবি।
তাদের আশা, এই প্রাচীন ও সম্মানিত সংগঠনটি পুনরায় তার গৌরব ফিরে পাবে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে।
শেষকথা : বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির আজ যে অবস্থান— তা সাধারণ কেমিস্টদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয়। নেতৃত্বে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং ন্যায়ের চর্চা ফিরিয়ে আনাই এখন সময়ের দাবি। কেমিস্ট সমাজ জেগেছে— এবার সময় নেতৃত্বের জবাব দেওয়ার।
