বিপজ্জনক ধাপে বিশ্ব

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা সারাদেশ স্বাস্থ্য

করোনা উপসর্গে এক সপ্তাহে ১০৭০ মৃত্যু

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : বিশ্ব করোনা মহামারির সংক্রমণ আরও বাড়ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বৃহস্পতিবার এক দিনেই নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের দেড় লাখের বেশি মানুষ। করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর এটিএকদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড।’
এই অবস্থায় করোনা ভয়াবহতা সম্পর্কে আবারও সতর্ক করেছেন সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানোম গেব্রেয়াসুস। তার মতে, বর্তমানে করোনার ‘নতুন ও বিপজ্জনক ধাপে’অবস্থান করছে বিশ্ববাসী।
শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে টেড্রোস বলেন, ‘আমরা এখন করোনার বিপজ্জনক ধাপে অবস্থান করছি।’ এ কারণে করোনা সংকমণ ঠেকাতে তিনি লকডাউনের ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার একদিনে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ করোনা মহামারি শুরুর পর এটিই সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নতুন সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে।
বৃহস্পতিবার শনাক্ত হওয়া রোগীদের অর্ধেকের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের। এরপর উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় দক্ষিণ এশিয়ার রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
টেড্রোস বলেন, ভাইরাস এখন দ্রুত ছড়াচ্ছে। এটা এখনও মারাত্মক অবস্থায় আছে এবং বেশিরভাগ মানুষ এখনও সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছে। বাড়িতে থাকার কারণে অনেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ফলে অনেক দেশ লকডাউন তুলে নেয়ার পক্ষে, যদিও এখনও দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনা। তাই সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ার মতো বিষয়গুলো এখনও গুরুত্বপূর্ণ।
ডব্লিউএইচও’র প্রধান আরও বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে শরণার্থীদের ওপর বেশি প্রভাব পড়বে। তারা বেশির ভাগই উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বাস করছেন।
এ দিকে মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট মারা গেলেন এক হাজার ৪২৫ জন। একই সময়ে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ২৪০ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল এক লাখ আট হাজার ৭৭৫ জনে।
শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
বুলেটিনে বলা হয়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ হাজার ৭৭৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় আগের কিছু মিলিয়ে ১৪ হাজার ৩২টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো পাঁচ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭৯টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ২৪০ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ আট হাজার ৭৭৫ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৭ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৪২৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৪৮ জন। সব মিলিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা এখন ৪৩ হাজার ৯৯৩ জন।
গত শুক্রবারের বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৫ হাজার ৪৫টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ২৪৩ জনের মধ্যে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুও কমেছে, কম নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তও হয়েছে কম। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড আছে ৫৩ জনের। সে তথ্য জানানো হয় ১৬ জুনের বুলেটিনে। আর সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড আছে চার হাজার আট জনের। এ তথ্য জানানো হয় ১৭ জুনের বুলেটিনে।
শনিবারের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ০৯ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগী বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
বুলেটিনে ডা. নাসিমা সুলতানা বরাবরের মতো করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
এদিকে পরিসংখ্যান বিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সারাবিশ্বে ৮৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৭ জন। অপরদিকে সেরে উঠেছেন প্রায় ৪৬ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৭ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছে ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৩৬ জন। এর মধ্যে খারাপ অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়। ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
উপসর্গে এক সপ্তাহে ১০৭০ মৃত্যু : করোনার উপসর্গ নিয়ে এক সপ্তাহে এক হাজার ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) একটি প্রকল্প বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি (বিপিও)। ৭ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত এ মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
শুক্রবার করোনা সংক্রমণের সময়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত সাপ্তাহিক হাইলাইটসে এ তথ্য প্রকাশ করে তারা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত এই সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এতে সবচেয়ে বেশি ৩১০ জন মারা যায় চট্টগ্রাম বিভাগে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ঢাকা বিভাগ। এখানে ২৭০ জন মারা যায়। সবচেয়ে কম ৩৩ জন মারা যায় ময়মনসিংহ বিভাগে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১৭৯ জন বেশি।
গত এক সপ্তাহে ১৬৪টি অসন্তোষ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৪৩ শতাংশই বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে, ৩১ শতাংশ ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তার দাবিতে, ১৪ শতাংশ লকডাউনের নিয়ম, বাসা ভাড়া ও টিউশন ফি সংশ্লিষ্ট, ৭ শতাংশ ত্রাণ সহায়তা বণ্টনে অনিয়ম এবং ৫ শতাংশ বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে।
আরও বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ১২৬ ঘটনায় ৫৪১ জন আহত ও ১৩ জন নিহত হয়েছেন। সামাজিক বিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে ১৯৬টি। বিভিন্ন বিষয়ে ৮৪টি গুজব ছড়ানোর ঘটনায় ৮৭ জনকে আটক করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন
👁️ 9 News Views