সাহেদও কুপোকাত

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র সারাদেশ স্বাস্থ্য

সাহেদের দম্ভোক্তি ৬ মাসের বেশি আটকে রাখা যাবে না
*সাহেদের প্রতারণায় ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিচ্ছে র‌্যাব
*ঘন ঘন জায়গা পরিবর্তন করছিলেন সাহেদ
*ডিগ্রি নেই তারপরও ল’চেম্বার ছিল সাহেদের
*গোঁফ কামিয়ে বোরকা পরে পালাচ্ছিলেন সাহেদ

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা পরীক্ষায় প্রতারণার মামলায় বহুল আলোচিত বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বোরকা পড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় বুধবার ভোরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি অবৈধ অস্ত্রসহ তিনি গ্রেফতার হন।
র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বুধবার সকালেই এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে অস্ত্রসহ সাহেদ গ্রেফতারের পর র‌্যাবের একটি বিশেষ টিম দু’টি হেলিকপ্টার যোগে বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টায় তাকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর রাজধানীর পুরাতন বিমানবন্দরে র‌্যাব কর্মকর্তাগণ সংবাদ মাধ্যমে গ্রেফতারের বিবরণ দেন। পরে সেখান থেকে গ্রেফতারকৃত সাহেদকে নিয়ে কুর্মিটোলা র‌্যাব সদরদপ্তরে যান। পরে সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর সিএইচএল বায়তুল এহসান নামের একটি বহুতল ভবনে র‌্যাব অভিযান চালায়। এই ভবনের পঞ্চম তলায় সাহেদ করিমের একটি গোপন অফিস রয়েছে বলে র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সাহেদ করিমের এই অফিস সম্পর্কে তাদের আগে জানা ছিল না। অভিযানের সময় ভবনটির ভেতরে ও বাইরে র‌্যাবের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। এরআগে ভোর ৫টার দিকে সাহেদ করিমকে সাতক্ষীরায় গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তিনি নৌপথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে র‌্যাব দাবি করছে।
সাহেদের প্রতারণায় ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিচ্ছে : র‌্যাব ডিজি
রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগীদের সহায়তা প্রদান করছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাবে) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাবের হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ভুক্তভোগী যারা আমাদের কাছে আসছেন তাদেরকে আমরা আইনানুগ পরামর্শ দিচ্ছি। সহায়তা করছি, কীভাবে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় যাবেন বা আমাদের কাছে যদি আসতে চান আমরা সে সহায়তা প্রদান করছি।’ ‘পালিয়ে থাকার সসয় আমরা তাকে ফলো করেছি, সব পয়েন্ট যদি আমরা জানতে পারতাম তাহলে তখনই তাকে ধরতে পারতাম। আমরা যখনই জানতে পেরেছি এবং তাকে পিনপয়েন্ট করতে পেরেছি তখনই তাকে আমরা অ্যারেস্ট করেছি।’
ছয় মাস পরেই আবার বেরিয়ে আসবে এ ধরনের কথা সাহেদ বলেছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমার ঠিক জানা নেই। অনেক কথা বলেছেন, যেটা আমরা তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বলতে চাচ্ছি না। তদন্তে—র স্বার্থে এই কথাগুলো আমরা না বলাই শ্রেয় মনে করছি।’ এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আজকেই সাহেদ করিমকে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।
গোঁফ কামিয়ে বোরকা পরে পালাচ্ছিলেন সাহেদ : রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ মুহূর্তে সীমান্তবর্তী ইছামতী নদীতে নৌকায় ওঠার সময় তাকে ধরে ফেলে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব। এ সময় সাহেদ কালো বোরকা পরা অবস্থায় ছিলেন। তার কোমরে তিন রাউন্ড গুলি ভর্তি অবস্থায় একটি অবৈধ পিস্তাল বলে র‌্যাব জানিয়েছে।
র‌্যাবের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারেন যে, তারা সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে সাহেদ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা ওই এলাকায় ওত পেতে থাকে। একপর্যায়ে ভোর ৫টা ১০ মিনিটের দিকে তাকে সাতক্ষীরার দেবহাটার সীমান্তবর্তী ইছামতী নদীতে কাদামাটি পেরিয়ে একটি নৌকায় উঠার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে তাদের কাছে খবর ছিল যে, সাহেদ গোঁফ কেটে বোরকা পড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। আর ওই তথ্যের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিগ্রি নেই, তারপরও ল’চেম্বার ছিল সাহেদের: জানা গেছে, প্রতারক সাহেদের আইন বিষয় কোনও ডিগ্রি নেই। তারপরও ল’চেম্বার করেছিল রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম। উত্তরায় ১১ নম্বর এক বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে তার চম্বার। তার ওই চেম্বারে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে জাল টাকা উদ্ধার করেছে। বাড়িটির কেয়ারটেকার তারা মিয়া জানান, গত ‘দুই মাস আগে বাড়ির চার তলার একটি ফ্ল্যাট ৩০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিলেন সাহেদ। বাড়ির মালিকের নাম মালিক ইয়াহিয়া খান।
ঘন ঘন জায়গা পরিবর্তন করছিলেন সাহেদ : ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তনের কারণে মোহাম্মদ সাহেদের কাছাকাছি কয়েকবার পৌঁছানো সম্ভব হলেও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি র‌্যাব। র‌্যাবের এডিজি অপারেশন কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার হেলিকপ্টার যোগে সাহেদকে ঢাকার আনার তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘গত ৯ দিন ধরে আমরা তাকে ফলো করেছি। কিন্তু সে ঘন ঘন জায়গা পরিবর্তন করছিল। এজন্য কয়েকবার আমরা তার খুব কাছাকাছি যাওয়ার পরও ধরতে পারিনি। এছাড়া সে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও ফেলে দিয়েছিল। অবশেষে বুধবার ভোররাতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
‘আমাকে ৬ মাসের বেশি আটকে রাখা যাবে না’ সাহেদের দম্ভোক্তি: প্রতারক রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব। বুধবার সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনার পর সাহেদকে প্রথমে র‌্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় বেশ কয়েকবার দম্ভোক্তি করেন তিনি।
র‌্যাব কর্মকর্তাদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সাহেদ বলেন, ‘আমাকে ছয় মাসের বেশি সময় আটকে রাখা যাবে না।’ নিজের পত্রিকার লাইসেন্স আছে উল্লেখ করে যেসব সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদকর্মীরা তার ছবি তুলছে এবং সংবাদ প্রকাশ করছে তাদেরও দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় প্রতারক সাহেদ।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাহেদ একজন ঠান্ডা মাথার প্রতারক। তিনি আগেও জেলে গেছেন। ফলে আইনি বিষয়গুলো তার ভালোভাবেই জানা। সে নানা সময় নানা কথা বলছে। বিভ্রান্তিকর তথ্যও দিচ্ছে। তাতে সহায়তাকারী কয়েজন দালালের সন্ধান র‌্যাব পেয়েছে। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে র‌্যাবের গণমাধ্যম পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেছেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। পরীক্ষা ছাড়াই করোনার সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল তারা। আর ছয় হাজার ভুয়া করোনা পরীক্ষার সনদ পাওয়ার প্রমাণ পায়। গত ৭ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশে র‌্যাব রিজেন্ট হাসপাতাল ও তার মূল কার্যালয় সিলগালা কওে দেয়। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয়। এরপর থেকে সাহেদ পলাতক ছিলেন।


বিজ্ঞাপন