বাবাকে প্রেরণা যুগিয়েছেন মা

এইমাত্র জাতীয়

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী

 

বিশেষ প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রামে সবসময় পাশে থেকে প্রেরণা যুগিয়েছেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুকে সঙ্গিনী হয়ে সাহস দিয়েছেন, দেশের জন্য কাজ করার। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গতকাল ভিডিও কনফারেন্সে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে ধারণ করে বঙ্গমাতা সারাজীবন নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই ত্যাগ কখনো বৃথা যেতে দেয়া হবে না। বিলাসী জীবন নয়, বরং অসহায় মানুষের পাশে থাকার শিক্ষা প্রধানমন্ত্রী তার মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছেন বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৫৮ সালে মার্শল ল’ জারি হওয়ার পর আব্বা আলফা ইন্সুরেন্সে চাকরি করতেন। এই দু’বছর আমার মা সংসারের স্বাদ পেয়েছিলেন। কারণ তখন রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হওয়া স্বত্ত্বেও আমার মায়ের কোনো অহমিকা ছিল না। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার। অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার কর্মময় জীবনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেগম মতিয়া চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুনন্নেসা ইন্দিরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব হারিয়ে মা আমার দাদা-দাদির কাছেই মানুষ হয়েছেন। আমার পরিবারের সঙ্গে এমনভাবে মিশে ছিলেন যে, দাদিকে তিনি বাবা বলে ডাকতেন। একটা পরিবার তিনি পেয়েছিলেন, কিন্তু তার মনের মধ্যে যে শূন্যতা, পিতা-মাতার অভাব সেটি থেকেই গিয়েছিল। তবে স্বামীর কাছ থেকে তিনি যে ভালোবাসা পেয়েছেন, যে সমর্থন পেয়েছেন, সেটিও বিরল। আমার মায়ের যে কেউ নেই, বাবা কখনো তা উপলব্ধি করতে দেননি। তার মায়ের প্রতি খুব আস্থা-বিশ্বাস ছিল। বাবার প্রতিটি কাজে তিনি সমর্থন করেছেন, সাহস যুগিয়েছেন। সংসারের কোনো বিষয় নিয়ে তাকে বিরক্ত করেননি।
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বঙ্গমাতা সংসার ও সংগঠন দুটি সামলেছেন- সেটির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা যখন বাবার সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে যেতেন, সাহস দিয়ে বলতেন- সংসারের কথা যেন তিনি চিন্তা না করেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক ছিল। বাবার নির্দেশনা কারাগার থেকে সংগঠনের কাছে পৌঁছে দিতেন।
১৫ আগস্টের নৃশংস ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যা পারেনি, স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে সেই ঘটনা ঘটলো। পিতা-মাতা হারানো আমার মা সারাজীবন শুধু দিয়েই গেছেন। তিনি জানতেন, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসবে, তারা ভালো থাকবে। তাই বাবার আদর্শ তিনি ধারণ করে তার জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা একদিকে সংসার চালাতেন, অপরদিকে বাবা কারাগারে থাকায় তার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বাবা যখন প্রধানমন্ত্রী, আমার মায়ের এ নিয়ে কোনো অহমিকা ছিল না। সরকারি বাসভবনে বসবাস করেননি। যাতে সন্তানরা বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত না হয়। আমাদের সাধারণ জীবনযাপনে, মাটির দিকে তাকিয়ে চলার শিক্ষা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও নিজের হাতে রান্না করে বাবার জন্য টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার পাঠিয়ে দিতেন। ৬ দফা দাবির পর আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলার সময়ে দলকে সংগঠিত করে আন্দোলন গড়ে তোলা, ছাত্রসমাজের যে আন্দোলন; সেটিতে আমার মায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রয়েছে। আমি দেখেছি, কীভাবে এর পক্ষে জনমত তৈরি করেছেন। ৭ মার্চের ভাষণের সময়েও অনেকে অনেক কথা বলেছিলেন। মা বলেছিল, সারাজীবন জনগণের জন্য কাজ করেছ তুমি। তোমার মনে যা আসে তাই বলো।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সময়ে নির্যাতনের শিকার মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেলিন আমার মা। তাদের বিয়ে দিয়েছেন, সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ১ হাজার ৩০০টি সেলাই মেশিন, ১০০ ল্যাপটপ ও ১৩ হাজার উপকারভোগীদের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তিনি জাতির পিতার হত্যাকারীদের হাতে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিহত হন।
এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিনে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সকালে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বনানী কবরস্থানে এ শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা জানানো শেষে মোনাজাত, মিলাদ ও দোয়া পড়েন নেতাকর্মীরা।
এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল মতিন খসরু, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক সামসুন্নাহার চাঁপা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আ খ ম জাহাঙ্গির, রিয়াজুল কবির কাউসার, গোলাম রাব্বানী চিনু উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও শেখ ফজিলাতুন্নেছার মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ১৯৩০ সালের ৮ অগাস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তিনিও নিহত হন।
উল্লেখ্য, বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন অধ্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অনেক জটিল ও সংকটময় পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করেছেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে এগিয়ে নিতে গৃহবন্দি অবস্থায়ও তিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বঙ্গবন্ধু এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঘাতকের বুলেটে শহীদ হন তিনি।


বিজ্ঞাপন