বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক স্বীকৃতি আদায় ছিলো বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির প্রথম শর্ত

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিনিধি : আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে তাঁর পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সেই সময়ই কিছু সমস্যার মুখােমুখি হতে হয়।


বিজ্ঞাপন

এক. বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক স্বীকৃতি আদায়।

দুই. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিদেশি সাহায্য-সহযােগিতা অর্জন।

তিন. জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার সদস্যলাভ ।

চার. পাকিস্তানে আটকে পড়া সামরিক ও বেসামরিক বাঙালিদের উদ্ধার করা।

পাঁচ. ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচার। (Harun ur Rashid, Bangladesh Foreign Policy: Realities, Priorities and Challenges)

বঙ্গবন্ধুকে এসব বিষয় বিবেচনা করেই তার পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু জানতেন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনঃগঠন করা হলাে সে দেশটির পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ। তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও ক্যারিশমা এবং তার দল আওয়ামী লীগের সঠিক তৎপরতায় অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মােকাবেলায় যথেষ্ট ছিল। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এসব রাজনৈতিক বিষয়ের বাইরেও বঙ্গবন্ধুকে প্রয়ােগ করতে হয়েছিল বাস্তবমুখী ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও তৎকালীন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের রূঢ় বাস্তবতা। তা ছিল স্নায়ুযুদ্ধ। তিনি বন্ধুরাষ্ট্র সােভিয়েত ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরােধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়কেই সন্তুষ্ট রেখে একটি নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন বলেই তৎকালীন স্নায়যুদ্ধবিরােধী জোটনিরপেক্ষ শান্তি আন্দোলনের প্লাটফর্মে তিনি সহসাই বাংলাদেশকে তুলে ধরেছিলেন। ফলে প্রাথমিক সমস্যা মাথায় রেখে একই সাথে বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশের একটি নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান তুলে ধরে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা ছিল তার পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম লক্ষ্য।

একটি সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য কূটনৈতিক স্বীকৃতি আদায় অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬ ডিসেম্বর বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত এবং ৭ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করে। ফলে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলােসহ সকল দেশের কূটনৈতিক স্বীকৃতি আদায় করা ছিল পররাষ্ট্রনীতির একটি প্রধান তৎপরতা। ১৯৭৪ সালে লাহােরে ওআইসির সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর যােগদানের পূর্বেই কতিপয় মুসলিম দেশসহ মােট ১১৬টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ফলে ওআইসি সম্মেলনের পূর্বেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।