ঢিলেঢালা চেকপোস্ট মোড়ে মোড়ে জ্যাম

রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানী ঢাকার সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে দেখা গেছে যানবাহনের ভিড়। যা গত কয়েক দিন দেখা যায়নি। লকডাউনের অষ্টম দিন বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিটি সিগন্যালে এক থেকে দুই মিনিট করে অপেক্ষা করতে হচ্ছে যানবহানগুলোকে। এসময় রিকশার পাশাপাশি বেশ কিছু ভ্যানকে পণ্য পরিবহন বাদ দিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। সড়কে বের হওয়া মানুষের অধিকাংশই হচ্ছেন কর্মজীবী মানুষ। চেকপোস্টগুলোতেও দেখা গেছে যানবাহনের জট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী প্রায় প্রতিটি বাহনকেই জেরা করছেন। সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সকালে খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় গিয়ে দিয়ে দেখা গেছে কয়েকজন পুলিশ থাকলেও তারা কোনও কড়াকড়ি করছেন না। রিকশা আর ভ্যানে করে মানুষ নিজের গন্তব্যে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। লকডাউনের শর্ত অনুযায়ী এসব কর্মীদের জন্য নিজস্ব যানবাহনের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও কেউ তা করেনি। ফলে রিকশা বা হেঁটেই তারা গন্তব্যে যাচ্ছেন। এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে রিকশা ও ভ্যানগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
স্বাভাবিক সময়ে নগরীর ফকিরাপুল পানির টাঙ্কির সামনে অনেক ভ্যান গাড়ি দেখা যেতো। কিন্তু লকডাউনের কারণে তারা কোনও ট্রিপ পাচ্ছেন না। ফলে প্রতিদিন অফিস সময়ে আবাসিক এলাকাগুলো থেকে অফিস পাড়া পর্যন্ত অধিকাংশ ভ্যান যাত্রী পরিবহন করেন। রিকশার তুলনায় ভাড়া অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় যাত্রীও পাচ্ছেন বেশ। ভ্যানের চালক ও যাত্রী উভয়কেই খুশি মনে যেতে দেখা গেছে।
সকালে খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২০টি ভ্যান গাড়ি যাত্রী পরিবহন করছে। রেলগেট থেকে দৈনিক বাংলা পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকা। যাত্রীরাও এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। রাস্তায় সময়ও তেমন একটা বেশি লাগছে না। প্রতি ট্রিপে ৮ জন যাত্রী ১৬০ টাকা করে পাচ্ছেন ভ্যানচালক।
একই চিত্র দেখা গেছে মানিকনগর এলাকায়। সেখানে থেকে রিকশার পাশাপাশি বিভিন্ন ভ্যান গাড়িতে করে যাত্রী পরিবহন হচ্ছে। কথা হয় ভ্যানচালক নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে বিভিন্ন দোকানপাটে বিক্রি হওয়া ফার্নিচার বা বাসা বদলের মালামাল পরিবহন করতাম। এখন তেমন একটা ট্রিপ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই প্রতিদিন অফিস সময়ে মানুষ টানি। কয়েকটা ট্রিপ দিলে দিনের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
এদিকে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। এসব এলাকার মধ্যে ফকিরাপুল, রাজারবাগ, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া, বাড্ডা, দৈনিক বাংলা মোড়, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, মগবাজার অন্যতম। এসব এলাকায় ব্যক্তিগত বাহনের পাশাপাশি মানুষের উপস্থিতিও ছিলো বেশি। আলাপ করলে তারা জানান, অফিসে যাওয়ার জন্যই তারা বাসা থেকে বের হয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন কয়েক দিন কর্ম না থাকার কারণে বাসায় খাবার ফুরিয়ে গেছে। সে কারণে তারা কাজের সন্ধানে বের হয়েছেন।
রাজারবাগে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য আফসার উদ্দিন বলেন, সকালে অফিস সময়ে যানবাহনের একটু চাপ বেশি থাকে। তাছাড়া খিলগাঁও এলাকায় মানুষের বসবাস বেশি। যে কারণে এখানে চাপটা একটু বেশি।
দৈনিক বাংলা এলাকার চিত্রও একই দেখা গেছে। সিগন্যালটিতে এক থেকে দুই মিনিট করে মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছে।
লকডাউন এর অষ্টম দিনে এসে অনেকটাই ঢিলেঢালা রাজধানী ছেড়ে যারা বাইরে যাচ্ছেন তাদের জন্য তল্লাশি বিষয়টি। গাবতলী ঘুরে দেখা গেছে, চেকপোস্টগুলোতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকলেও অনেকেই অলস সময় পার করছেন পাশে বসে। আবার দু’একজন পুলিশ সদস্য যারা চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে আছেন তারা যানবাহনগুলোর বিষয়ে কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন না।
বৃহস্পতিবার রাজধানী থেকে বের হওয়ার এবং ঢোকার আমিনবাজার চেকপোস্ট ঘুরে দেখে এসব চিত্র দেখা যায়। তবে গণমাধ্যমের উপস্থিতি টের পেয়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট’র নেতৃত্বে চেকপোস্টে এসে তল্লাশি শুরু হয়।
এ বিষয়ে গাবতলী চেকপোস্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা গাড়িগুলোকে চেক করছি। কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি। চেকপোস্টে কোন ঢিলেঢালা দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।


বিজ্ঞাপন