
নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতি প্রতিরোধ, সরকারি সেবায় জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি রোধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে আয়োজন করে তাদের ১৮৭তম গণশুনানি।

এই গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, আর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী। উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, স্কাউট, বিএনসিসি সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
“দুর্নীতি নির্মূল কঠিন, তবে কমানো সম্ভব”—চেয়ারম্যান : দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন একা দুর্নীতি নির্মূল করতে পারবে না, তবে চাইলে সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্নীতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এজন্য জনগণ ও সেবাদাতাদের মধ্যে বিশ্বাস ও সম্পৃক্ততা গড়ে তোলা জরুরি।”

তিনি বলেন, “গণশুনানি কোনো সংঘর্ষের জায়গা নয়, এটি পারস্পরিক সম্পৃক্ততার ক্ষেত্র। আমরা চাই জনগণ ও কর্মকর্তারা একে অপরকে বোঝুক, সম্মান করুক এবং সেবার সম্পর্কটাকে মানবিকতার বন্ধনে আবদ্ধ করুক।”

সেবা দাতাদের উদ্দেশে চেয়ারম্যান আরও বলেন, “রাষ্ট্রের কাছে জবাবদিহির পাশাপাশি নিজের বিবেকের কাছেও জবাবদিহি থাকতে হবে। কেবল কাজ শেষ করলেই দায়িত্ব শেষ নয়; সততা ও নিষ্ঠাই সরকারি সেবার প্রকৃত মানদণ্ড।”
তিনি সাংবাদিকদের প্রশংসা করে বলেন, “প্রেসম্যানরা আসলে হুইসেল ব্লোয়ার। দুদকের মামলাগুলোর অর্ধেকের বেশি তদন্তের সূত্র আসে সাংবাদিকদের প্রতিবেদন থেকেই। তাই দায়িত্বশীল গণমাধ্যম দুর্নীতি প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।”
“দানবের গুণ মানুষের মধ্যে থাকতে পারে না”—কমিশনার :বিশেষ অতিথি মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, “জঙ্গলের আইন কখনো সভ্য সমাজের আইন হতে পারে না। দুর্নীতি হচ্ছে এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে মানুষ অন্যের প্রাপ্য বঞ্চিত করে নিজে লাভবান হয়—এটি দানবীয় প্রবৃত্তি। সেই প্রবণতা রোধে প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে সৎ হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “দুদক এখন ‘নো গিফট পলিসি’ বাস্তবায়নের পথে। কোনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট উপহার গ্রহণ করা অনৈতিক ও সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা চাই সরকারি কর্মকর্তারা এমন সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসুন।”

তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ও তদন্তে ১০টি অভিযোগ গৃহীত : গণশুনানিতে যশোর জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে মোট ১০৪টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৭৫টি অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত। ১০টি অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয় এবং বাকি অভিযোগগুলো প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সেবা বঞ্চিত জনগণ সরাসরি দুদক কর্মকর্তাদের সামনে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। কিছু ক্ষেত্রে কমিশন现场 ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যা উপস্থিত জনগণের মধ্যে সন্তোষের পরিবেশ সৃষ্টি করে।
সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারণা : গণশুনানির আগে দুদক যশোর জেলায় সপ্তাহব্যাপী গণসচেতনতামূলক প্রচারণা চালায়। এতে মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, বুথ ও অভিযোগ বাক্স স্থাপন, এবং স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়। এসব উদ্যোগে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়।
গণশুনানির লক্ষ্য : দুদকের এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো—সরকারি সেবায় জনগণের সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা,
কর্মকর্তাদের মধ্যে সততা ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করা,
দুর্নীতি প্রতিরোধে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে সম্পৃক্ত করা।
গণশুনানিতে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ায়। তারা প্রত্যাশা করেন, দেশের অন্যান্য জেলাতেও এ ধরনের গণশুনানি নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হবে, যাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও জনসেবার মানোন্নয়ন সম্ভব হয়।
