!!  গণপূর্তের ব্যর্থতায় এবারো কিরণ বাহিনীর দখলমুক্ত হল না নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ  !!   উচ্ছেদ অভিযানে থেকে পিছু হটল গণপূর্ত   !! শিক্ষার্থীদের ক্ষোভে ফেটে পড়া ক্যাম্পাস !!  নোয়াখালী পূর্তভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা !! 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি  (নোয়াখালী)  :   নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের বহুল প্রতীক্ষিত ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ আবারো অনিশ্চয়তার মুখে। দীর্ঘ এক যুগ ধরে কিরণ বাহিনীর দখলে থাকা মেডিকেল কলেজের জায়গা আজও মুক্ত হলো না গণপূর্ত অধিদপ্তরের রহস্যজনক পিছু হটার কারণে! শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভ, “আমরা উন্নয়নের জন্য লড়ছি, আর গণপূর্ত দুর্বল প্রশাসনের হাতে বন্দী!”


বিজ্ঞাপন

উচ্ছেদ অভিযানের আগেই থেমে গেল সব কিছু  :  সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আজ (১১ নভেম্বর) সকালে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে দখল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করেছিল। এর আগেই অনেক দখলদার রাতভর তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয় অবশেষে হয়তো কিরণ বাহিনীর দখলমুক্ত হবে তাদের ক্যাম্পাস। কিন্তু সকাল গড়াতেই আসে ধাক্কা।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দীন হঠাৎ ফোন করে জানান, “আজ উচ্ছেদ অভিযান সম্ভব নয়।” কবে সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়েই ফোন কেটে দেন। এই ঘটনার খবর মুহূর্তেই আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসজুড়ে। শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে, “আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের মেডিকেল কলেজ কিরণের গুন্ডাদের হাতে বন্দী থাকবে কেন?”


বিজ্ঞাপন

দুয়েকদিনের মধ্যেই ঘেরাও কর্মসূচি  :  বিকেলে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, “গণপূর্ত অধিদপ্তর আমাদের স্বপ্ন ধ্বংস করছে। এই অবহেলা মেনে নেওয়া হবে না।” সর্বসম্মতিক্রমে ঘোষণা আসে, “দুয়েকদিনের মধ্যেই আমরা নোয়াখালী পূর্তভবন ঘেরাও করব।” শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, “সরকারি প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, অথচ বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে রেখেছে কিরণের দখলদার বাহিনী। আমরা চুপ থাকব না।”


বিজ্ঞাপন

এক যুগের প্রকল্প, তবুও অগ্রগতি শূন্য  :  ২০০৮: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে কলেজ প্রতিষ্ঠা।  ২০১৪: ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ পরিকল্পনা অনুমোদন।  ২০১৭: তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।  ২০২৪: ২৪৮ কোটি টাকার নতুন বরাদ্দ ঘোষণা।  বাস্তব অগ্রগতি — শূন্য।
২,১০৩ কোটি টাকার প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ ছিল ১,৪৪০ কোটি টাকা। সরকারের প্রস্তুতির ঘাটতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতায় ভারত সেই ঋণ প্রত্যাহার করে নেয়। ২০২৩ সালে একনেক পুনরায় অনুমোদন দিলেও পরের মাসেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক রহস্যময় চিঠিতে প্রকল্প স্থগিত করে দেওয়া হয়, কোনো কারণ ছাড়াই।

কিরণ বাহিনীর দখলদারিত্বঃ উন্নয়নের পথে কাঁটা  : ১২ বছর আগে অধিগ্রহণকৃত জমির চারপাশে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণের পরপরই সাবেক আওয়ামী এমপি মামুনুর রশীদ কিরণ ও তার অনুসারীরা দেয়াল ভেঙে ৮–১০ স্থানে অস্থায়ী বসতি গড়ে তোলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই জায়গাগুলো কিরণের গুন্ডাবাহিনীর সদস্যদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর কিরণ পালিয়ে গেলেও তার বাহিনী আজও সেখানে দাপটের সঙ্গে বসবাস করছে। দখলদারদের একাধিকবার প্রশাসনের নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা লাঠিসোটা হাতে কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতিরোধ করে। এবারের উচ্ছেদ ব্যর্থতায় তারা আরও সাহস পেয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

ক্ষোভে ফেটে পড়া শিক্ষার্থীরা বলছে, ‘আমরা চুপ থাকব না!’
ক্যাম্পাসজুড়ে এখন একটাই স্লোগানঃ “দখলদার মুক্ত করো, নির্মাণকাজ শুরু করো!” চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা প্র্যাকটিক্যাল করতে ১০ কিলোমিটার দূরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে যাই। কিরণদের কারণে আমাদের পড়াশোনা, চিকিৎসা সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে।” আরেকজন বলেন, “গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা হয় অযোগ্য, নয়তো কিরণ বাহিনীর প্রভাবের ভয়ে থেমে গেছে।”

নোয়াখালীবাসীর প্রশ্ন  : কতকাল দখল থাকবে উন্নয়ন ?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই হাসপাতাল শুধু একটি ভবন নয় এটি নোয়াখালীর মানুষের জীবন ও মর্যাদার প্রতীক। প্রশাসনিক ব্যর্থতা এখন সরাসরি জনস্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হয়েছে।” নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক পরিষদের এক সদস্য বলেন, “আমরা চাই অবিলম্বে উচ্ছেদ অভিযান। আর যদি না হয় তবে শিক্ষার্থীরা যেভাবে মাঠে নেমেছে, পুরো জেলা অচল হয়ে যাবে।”

শেষ কথা: নোয়াখালী এখন উত্তাল ! বহুল প্রতীক্ষিত হাসপাতাল প্রকল্প আজও থমকে আছে, আর দখলদারদের ছায়ায় চলছে গণপূর্তের ‘অজুহাতনীতি’। শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে, নোয়াখালীবাসীর ধৈর্য শেষ। “গণপূর্তের ব্যর্থতা নয়, এটি জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।” নোয়াখালী চায় ন্যায়, চায় উন্নয়ন আর নয় দখল, আর নয় ভয়!”

👁️ 114 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *