ড্যাফোডিল কোম্পানির ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগ : আজিমপুরের মসজিদের লিফ্টে ভরসা নয়, ভয়  ?  

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক :  বাংলাদেশে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়ম নতুন নয়। তবে ধর্মীয় স্থাপনা—বিশেষ করে মসজিদের মতো পবিত্র স্থাপনার ক্ষেত্রেও যদি দুর্নীতির ছায়া নেমে আসে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। ঠিক এমনই ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর আজিমপুর এ-জোন মসজিদের লিফ্ট ক্রয় নিয়ে।


বিজ্ঞাপন

এই লিফ্ট ক্রয়ের পুরো প্রক্রিয়ায় ড্যাফোডিল ইলেকট্রিক কোম্পানি এবং কিছু সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল জালিয়াতি, ভুয়া প্রত্যয়নপত্র জমা, ট্যাক্স ফাঁকির সুবিধা নেওয়া এবং নিম্নমানের লিফ্টকে অতিরিক্ত দামে অনুমোদনের অভিযোগ উঠেছে।

মাত্র ১৫ লাখ টাকার সস্তা লিফ্ট—কিনতে হবে দেড় গুণেরও বেশি দামে !  দরপত্র আইডি নম্বর ১১৬৪৯৩৬–এর আওতায় ড্যাফোডিল ইলেকট্রিক কোম্পানি অংশগ্রহণ করে সুশিলী নামের একটি চীনা লিফ্ট ব্র্যান্ড নিয়ে। অভিযোগ অনুযায়ী— বাজারদর ১৫ লাখ টাকার লিফ্ট, সরকারের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ৪৯.৮৮ লাখ টাকায়, অর্থাৎ প্রায় ৩৫ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয় সরকারের ঘাড়ে।


বিজ্ঞাপন

এমনকি একই ধরনের কাজ ইএম বিভাগ–৬–এ জমা পড়লেও সেখানকার মূল্যায়ন কমিটি এই ব্র্যান্ডকে নন-রেসপন্সিভ ঘোষণা করে বাতিল করে দেয়।


বিজ্ঞাপন

তাহলে আজিমপুরে কেন গ্রহণ করা হলো? সেটিই এখন বড় প্রশ্ন  :   TUV/DNV ছাড়াই মান যাচাই—‘ডি ক্যাটাগরির’ লিফ্ট কীভাবে হলো অনুমোদিত ?

দরপত্রের স্পেসিফিকেশনে স্পষ্টভাবে লেখা— ডি ক্যাটাগরির লিফ্টে TUV / DNV বা সমমানের আন্তর্জাতিক মানসংস্থা থেকে প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক।

কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী— প্রস্তাবিত ব্র্যান্ডের কোন কম্পোনেন্টেরই এমন প্রত্যয়নপত্র জমা দেওয়া হয়নি। বরং EURO CERT–এর কিছু কাগজ জমা দেওয়া হয়েছে অন্য লিফ্ট কোম্পানির নামে। অর্থাৎ, ভিন্ন কোম্পানির পার্টসের কাগজ জুড়ে দিয়ে পুরো লিফ্টকে বৈধ দেখানোর চেষ্টা। এটি যদি সত্য হয়— তাহলে এটি সরাসরি ডিজিটাল জালিয়াতির শামিল।

দুই কোম্পানির দুই TIN— কিন্তু মালিক একজন ! ট্যাক্স ফাঁকির অভিযোগ :  আরও ভয়ঙ্কর অভিযোগ হলো— ড্যাফোডিল ইলেকট্রিক কোম্পানি এবং ড্যাফোডিল ইলেকট্রিক কোম্পানি লিমিটেড—দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে।

একটিতে দরপত্রে অংশগ্রহণ অন্যটির লাইসেন্স ও কাগজপত্র জমা :  দুই প্রতিষ্ঠানের TIN ভিন্ন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভিন্ন, কিন্তু মালিক একজনই। অভিযোগকারীদের দাবি— এটি ট্যাক্স ফাঁকির উদ্দেশ্যে তৈরি ডুয়েল-স্ট্রাকচার, যা সরকারি ক্রয় আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।

কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন: আত্মীয়তার সম্পর্কের প্রভাব ?অভিযোগ আরও আছে— গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইএম বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক। তিনি নাকি কোম্পানির মালিকের আত্মীয়।

অভিযোগকারীরা দাবি করেছেন—এই আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে তিনি ইএম বিভাগ–৩–এর সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীকে চাপ সৃষ্টি করে নন-কমপ্লায়েন্ট লিফ্টকেও রেসপন্সিভ হিসেবে অনুমোদন করিয়েছেন।যদিও এ বিষয়ে কোনো কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আজিমপুরের মুসল্লিদের প্রশ্ন : মসজিদের ক্ষেত্রেও কি রেহাই নেই ?  মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় মুসল্লিদের দাবি “এত বড় অনিয়মের মাধ্যমে নিম্নমানের লিফ্ট বসানো হলে মুসুল্লিদের জীবনের নিরাপত্তা কোথায় ? আর ধর্মীয় স্থাপনার অর্থেও যদি দুর্নীতি হয়—তাহলে রক্ষা কোথায়?” তারা পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করে উচ্চমানের, প্রত্যয়নপ্রাপ্ত লিফ্ট পুনঃক্রয়ের দাবি জানিয়েছেন।

কেন জরুরি তদন্ত ?  এই ঘটনায় তিনটি গুরুতর প্রশ্ন উঠে আসে—নিম্নমানের লিফ্ট কেন উচ্চ দামে অনুমোদিত হলো? কেন ট্যাক্স ফাঁকির অভিযোগ থাকা কোম্পানির কাগজপত্র মূল্যায়ন করা হলো? PPR লঙ্ঘনের অভিযোগে এখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?

এমন অভিযোগ সঠিক হলে—সরকারের আর্থিক ক্ষতি, ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তা ঝুঁকি, মান নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এবং ডিজিটাল জালিয়াতি ও ট্যাক্স ফাঁকি, সবই মিলে এটি পরিণত হতে পারে একটি বড় দুর্নীতির ঘটনায়।

উপসংহার : অভিযোগ তদন্ত না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সন্দেহ থেকেই যাবে** এই পুরো প্রক্রিয়ায় এত অনিয়ম, প্রশ্ন এবং অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও যদি এখনো তদন্ত না হয়—তাহলে এটি প্রমাণ করবে যে— সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অংশ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এতে জড়িত।

মসজিদের মতো পবিত্র স্থাপনার ক্ষেত্রেও যখন এমন অভিযোগ ওঠে, তখন স্পষ্টই বোঝা যায়—দুর্নীতি কত গভীর হয়েছে এবং তা কতটা নির্লজ্জ রূপ নিয়েছে।

👁️ 89 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *