ওসির মদদে বনানীতে সংঘঠিত হচ্ছে অপরাধ!

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক :  রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বনানী থানা এলাকা। এই  থানার অধীনে সবচেয়ে অপরাধ প্রবণ এলাকা হচ্ছে কড়াইল বস্তি ও সাততলা বস্তি। বস্তি দুটিকে বলা যায় অপরাধের স্বর্গরাজ্য! চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িতরা আস্তানা গেড়েছে বস্তি দুটিতে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বনানী থানা এলাকার ভয়ংকর সব অপরাধের তথ্য।
অভিযোগ এসেছে, পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যরাও জড়িয়ে গেছে অপরাধী চক্রের সঙ্গে। বস্তির মাদক ব্যবসা, চোরাই গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ থেকে পুলিশ প্রতিনিয়ত চাঁদা তুলছে। ফলে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না এধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড।
অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের এক নেত্রীকে পূর্ণবাসন করে দিবে বলে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছেন বনানী থানা ওসি মোঃ রাসেল সারোয়ার। বস্তি গুলোতে পূর্বের তুলনায় মাদকের আনাগোনা বেড়ে গেছে ভয়াবহ রূপে। দেখা যায়, বনানীতে হাঁটাচলার মাঝেই চলে মাদক বেচাকেনা। অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে আমলে নেননা থানার ওসি।
এদিকে পুলিশকে ম্যানেজ করে বনানী থানা এলাকায় অবৈধভাবে চলছে কয়েক হাজার অটোরিকশা। থেমে নেই ফুটপাত দখল! পুরো থানা এলাকায় দখলের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাঁটাচলার জায়গা নেই। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। প্রকাশ্যেই পুলিশকে ফুটপাত থেকে চাঁদা তুলতে দেখা যায়। অটোরিকশা থেকেও মাসিক চাঁদা চলে যায় ওসির টেবিলে।
জানা গেছে, অটোরিকশার মালিক আর ফুটপাত দখল পুলিশের মধ্যে মধ্যস্থতা করে ‘লাইনম্যান হাফিজ’ ও ফাঁড়ির সবচেয়ে পুরনো ক্যাসিয়ার ইব্রাহিম। তারা একটি নির্দিষ্ট টাকা থানায় দিয়ে বিষয়টি ম্যানেজ করে।
বনানী থানা এলাকায় একাধিক মাদক স্পট রয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ মাদক ব্যবসায়ীর ছড়াছড়ি।
কিছুদিন আগে বনানী থানা এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বস্তিবাসী থানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছিল। সেই ঘটনা অবশ্য কৌশলে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেন ওসি‌। অন্য একটি ঘটনার আসামি গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে বলে চালিয়ে দেন ওসি।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। বনানী ২৩নং রোড সংলগ্ন নার্সারী ভিতরে গোপন ঘর রয়েছে। সেখানে জুয়ার আসর বসে প্রতিদিন রাতে। আমতলী, কাকলী, সৈনিক ক্লাব হলের রেলওয়ের পিছনে অবস্থান করে একদল তরুণী। তারা পেশায় পতিতা। তাদের নিয়ে সোর্স জাকিরের নেতৃত্বে চলে ছিনতাই। জানা যায় সবকিছু থানা পুলিশের মদদেই হয়। সেখানে মাসোয়ারা নির্ধারিত করা।
বনানীর বেদে বস্তি, গোডাউন বস্তি ও এরশাদ নগর বস্তিতে মাদক ব্যবসার মহাজন সোর্স শহিদ। ১১ নাম্বার  রোডে পতিতা সালমার নিয়ন্ত্রণে ছয় সদস্যের নারী টিম দেহ ব্যবসা করে। এটার নাকি আবার ইজারা নিয়েছে সোর্স সোহেল।
নেভিগেট ২৩ নাম্বার রোড নার্সারীতে ফাঁড়ির সামনে অপরাধী ইব্রাহিম-হাফিজের আস্তানা। টঙ্গী থেকে এসে প্রতিনিয়ত অপরাধ সংঘটিত করেন তারা। দিনে ওখানে ভাতের হোটেল ও চায়ের দোকান। আড়ালে রাতে চলে অসামাজিক কার্যক্রম। দেহ ব্যবসার পাশাপাশি চলে ছিনতাই, ফিটিং বাণিজ্য, সহ নানান অপরাধ। স্থানীয় ও পথচারীদের অভিযোগ, মানুষকে ধরে নিয়ে গোপন ঘরে  নির্যাতন করা হয়। রাত যত গভীর হয় নার্সারীর ভিতরে অপরাধ তত বাড়ে।
বনানীর স্বপ্ন মোর, কাঁচাবাজার এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধভাবে রাস্তা দখল করে শতশত দোকান গড়ে উঠেছে। সাধারণ পথচারী ভোগান্তি সীমাহীন। তবু নজরে পড়ে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
সূত্র জানায়, ফাঁড়ির সামনে নার্সারি থেকেও মোটা অংকের চাঁদা যায় থানায়। সেখানে রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। গভীর রাতে এখানে জুয়ার বোর্ড চলে। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা সেখানে আড্ডা জমায়। সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে পথচারীদের উপর। ফিল্মী স্টাইলে করে ছিনতাই।
সরেজমিনে বনানী থানায় গিয়ে দেখা যায়, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের ঘনঘন থানায় যাতায়াত। তারা নাকি পুলিশের সোর্স।
জানা যায়, চিহ্নিত সন্ত্রাসী কোপ সোহেল সাততালা বস্তি নিয়ন্ত্রণ করে। কুমিল্লা পট্টির নিয়ন্ত্রণ বিল্লালের।
মাদকের তালিকাভুক্ত আসামি পুলিশের সোর্স শিমুলের ছোট ভাই পলাশ প্রকাশ্যে মাদক বেচাকেনা করছেন কড়াইল স্যাটেলাইট ব্রিজ পাড়ে। আরো রয়েছে,  সোর্স রাসেল, বারগিরা সুমন, শ্রমিকলীগ সহ-সভাপতি রেশমি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ওসি মোঃ রাসেল সারোয়ার বলেন, ‘এই থানা এলাকায় সব ধরনের লোকই বাস করে। বস্তিগুলোতে নিম্ন আয়ের লোক থাকায় সেখানে কিছু ক্রাইম বেশী হয়। তবে আমরা সবসময় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করি।’ পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার থানা এলাকায় এ ধরনের কোনো অবৈধ কাজ এবং চাঁদাবাজি হয় না। আপনি যেটা জানেন, সেটা ভুল জানেন। অটোরিকশার অথবা ফুটপাথ থেকে আমি একটি টাকাও খাই না।’
👁️ 41 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *