অনুসন্ধানী প্রতিবেদন : উত্তরা দিয়াবাড়ি বিআরটিএ অফিসে আতিকুর–কাউসার সিন্ডিকেট: সেবা কেন্দ্রে দুর্নীতির দুর্গ

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক :  রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ির বিআরটিএ অফিস— নামটা শুনলেই সাধারণ গাড়ি মালিকদের মনে ভয় ও হতাশা ভর করে। যেখান থেকে সহজে ও আইন অনুযায়ী সেবা পাওয়ার কথা, সেখানে এখন চলছে ভয়ঙ্কর এক সিন্ডিকেটের রাজত্ব। আশিকুর রহমান (উচ্চমান সহকারী) ও কাউসার আলম (মোটরযান পরিদর্শক) এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেট আজ পুরো অফিসকে পরিণত করেছে দুর্নীতির অভয়ারণ্যে।


বিজ্ঞাপন

সেবা নয়, ঘুষই প্রধান শর্ত : তথ্য সংগ্রহের জন্য ভুক্তভোগী গাড়ি মালিক, স্থানীয় সূত্র ও অফিসের ভেতরের কিছু কর্মকর্তা যা জানিয়েছেন— তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো।

প্রতিটি কাজের জন্য দালালদের মাধ্যমে আগে টাকা দিতে হয়, তারপর কাজ হয়। অভিযোগকৃত ঘুষের হার যথাক্রমে,
রেজিস্ট্রেশন ক্লিয়ারেন্স- ৫,০০০–১০,০০০ টাকা। ফিটনেস নবায়ন- ২,০০০–৩,০০০ টাকা এবং নাম ট্রান্সফার- ৮,০০০–১২,০০০ টাকা। এই টাকা তোলেন অফিসে ঘুরে বেড়ানো অন্তত ১০–১২ জন দালাল। সংগৃহীত অর্থের বড় অংশ সরাসরি আশিকুর রহমান ও কাউসার আলমের কাছে পৌঁছে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।


বিজ্ঞাপন

সাংবাদিক পেটানো, সত্য গোপনের কৌশল : একজন সাংবাদিক অফিসে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে অফিসের ভেতরেই তার ওপর হামলা চালানো হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় মোবাইল ফোন, ভেঙে ফেলা হয় ক্যামেরা। পরে আবার ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা দেওয়া হয় ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে। মানবাধিকার সংগঠন ও সাংবাদিক মহল বলছে— এটি কেবল দুর্নীতি রক্ষার কৌশল নয়, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সরাসরি আঘাত।


বিজ্ঞাপন

আশিকুর রহমান – “রাজনীতির ছায়ায় অটল প্রভাবশালী কর্মকর্তা”  : সরকারি বদলি নীতিমালার পরও আশিকুর রহমান পাঁচ বছর ধরে একই পদে বহাল রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে— তিনি আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ছায়ায় থেকে নিজেকে অদৃশ্য শক্তিতে পরিণত করেছেন। শুধু তাই নয়, মিরপুর এলাকায় তার নামে দুটি ফ্ল্যাট কেনার তথ্যও সামনে এসেছে।

কাউসার আলম – মাঠ পর্যায়ের ‘রাজা’ :: অফিসের ভেতরে দালালদের সক্রিয় করার মূল ভূমিকা কাউসার আলমের। গাড়ির ফাইল আটকে রাখা, টাকা ছাড়া কাজ না করা— সবকিছু তার নির্দেশেই হয় বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগীরা জানান, “যদি টাকা না দাও, তোমার ফাইল মাসের পর মাস আটকে থাকবে।”

দালাল বাহিনী – প্রকাশ্য দাপট  : অন্তত ১০ জন দালাল— জাকির, রনি, বাপ্পি, রতন, জীবন ও শাহিন প্রতিদিন অফিসে অবস্থান করে। প্রকাশ্যেই তারা টাকা নেন, রসিদ দেন না। এমনকি নতুন দালালদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কীভাবে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলা যায়। প্রশ্ন উঠছে— এরা অফিসে প্রতিদিন কীভাবে এত নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করে?

প্রশাসনের রহস্যময় নীরবতা : এতসব অভিযোগের পরও বিআরটিএ প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। বরং স্থানীয়দের অভিযোগ— উপরের কিছু কর্মকর্তা নিয়মিত ভাগ পান। ফলে নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

সাংবাদিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনের দাবি :  আশিকুর রহমান ও কাউসার আলমকে অবিলম্বে বরখাস্ত করা, স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা, সাংবাদিকের ওপর হামলার আইনি প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা, দালালচক্র ভেঙে ফেলা এবং অফিসে সিসিটিভি ও অভিযোগ বক্স স্থাপন করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে।

সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর : একজন গাড়ি মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বিআরটিএতে গেলে সবাই জানে কাকে কত টাকা দিতে হবে। প্রতিবাদ করলে ফাইল আটকে দেয়।”
একজন ভেতরের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এখানে কাজ করতে গেলে নিয়ম নয়, মানুষ চেনে কাকে কত দিতে হবে— সেটাই নিয়ম।”

উপসংহার : উত্তরা দিয়াবাড়ি বিআরটিএ অফিসে দুর্নীতির এই চিত্র কেবল একটি অফিসের নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা ভেঙে পড়বে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *