ভূইগড়ের ভন্ডপীর শামীম ও ভন্ডমুরীদ কায়কোবাদ এর তথ্যসন্ত্রাস নাটক

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী রাজনীতি সংগঠন সংবাদ সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত নাম এখন ভূইগড় দরবার শরীফের ভণ্ডপীর হিসেবে পরিচিত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শামীম আখতার।


বিজ্ঞাপন

একদিকে আধ্যাত্মিকতার মুখোশ, অন্যদিকে দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্য আর রাজনৈতিক সহিংসতার পৃষ্ঠপোষকতা—এই দ্বৈত চরিত্রে তিনি রূপ নিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের “ছদ্ম পীর” হিসেবে।

তার ঘনিষ্ঠ মুরিদ ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ কায়কোবাদ এখন ভণ্ডপীরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কমিশন এজেন্ট, যিনি ঢাকাজুড়ে টেন্ডার ও বদলি বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন পুরো একটি সিন্ডিকেট।


বিজ্ঞাপন

মানববন্ধনে ছাত্র–জনতার দাবিঃ ভণ্ডপীরকে গ্রেপ্তারের হুঁশিয়ারি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের দায়ে অভিযুক্ত গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী ও ভূইগড় দরবারের পীর মোঃ শামীম আখতার–এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।


বিজ্ঞাপন

“সাধারণ ঠিকাদার ও ছাত্র–জনতা” ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বক্তারা দাবি করেন,  “এই ভণ্ডপীর ছাত্র হত্যায় অর্থ–সহায়তা দিয়েছেন, অথচ এখনো বহাল তবিয়তে চাকরিতে আছেন—এটা বিচার বিভাগের জন্য চরম অবমাননা।”

তারা বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার ওপর গুলি চালানোর সময় এই পীর তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী নুসরাত হোসেন লিটন (কিংডম বিল্ডার্স)–এর মাধ্যমে মোহাম্মদপুর এলাকায় বিপুল অর্থ বিতরণ করেছিলেন। এই অর্থের একটি বড় অংশ গণপূর্তের ঠিকাদারি কমিশন থেকে সংগৃহীত বলে অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ ১৬ আগস্ট মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে সাবেক সচিব শাহ কামালের বাসা থেকে ১২৭ কোটি টাকা উদ্ধার করে, যা গণমাধ্যমে তিন কোটি বলা হলেও স্থানীয়দের ভাষায় আসল অঙ্ক আরও অনেক বেশি। পরদিন শাহ কামাল ও নুসরাত হোসেন লিটন গ্রেফতার হন। বক্তারা বলেন, “যে ভণ্ডপীরের টাকা ছাত্র হত্যা আর রক্তের রাজনীতিতে ব্যবহৃত হয়েছে, তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে চাকরি থেকে অপসারণ করতে হবে।”

কায়কোবাদের সিন্ডিকেট  : দুর্নীতির নেটওয়ার্কে মুরিদদের রাজত্ব  প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের নিকটতম মুরিদ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ কায়কোবাদ গণপূর্তের ইএম সার্কেল–২–এ কর্মরত। তার অধীনে থাকা ইএম বিভাগ–৪, ৫ ও ৭ এখন পুরোপুরি কমিশন বাণিজ্যের ঘাঁটি।

সূত্র জানায়, প্রতিটি প্রাক্কলন অনুমোদনে ৫% ঘুষ, দরপত্র অনুমোদনে “উপহার” দিতে হয়, ২০% কমিশন ছাড়া কোনো কাজ এগোয় না। এমনকি ঠিকাদারদের ফাইল আটকে রেখে ঘুষ আদায় করা হয় নিয়মিতভাবে। চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে এসে কায়কোবাদ নিজের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের নিয়ে ঢাকায় গড়ে তুলেছেন “ভণ্ড দরবার সিন্ডিকেট”—যার সদস্য মোহন, আলী আকবর, নিজাম দরবেশ প্রমুখ। তারা সবাই সাংবাদিক পরিচয়ে কায়কোবাদের প্রচারণা চালায় এবং ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করে প্রকৃত অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের “তথ্যসন্ত্রাসী” আখ্যা দেয়।

অভিযোগ রয়েছে, প্রধান প্রকৌশলীর নাম ভাঙিয়ে অন্তত ছয়জন নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করেছেন কায়কোবাদ। এই অর্থের অংশ চলে যায় শামীম আখতারের “দরবার” তহবিলে।

ভণ্ডপীরের সম্পদের পাহাড়  :  তদন্তে উঠে এসেছে—
শামীম আখতারের নামে ও পরিবারের মাধ্যমে রাজধানীতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, প্লট ও একাধিক বাড়ি রয়েছে। অন্যদিকে মুরিদ কায়কোবাদও এখন বহুমূল্যের সম্পদের মালিক: মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট, ঢাকার পাশে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন, শেরপুরে শতাধিক বিঘা জমি, বিদেশে পাচার করা অর্থে গড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দুদকের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ভণ্ডপীর ও মুরিদ কায়কোবাদ যৌথভাবে ১৪০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

রাজনীতি বদলে মুখোশও বদল  :  আওয়ামী যুগে শামীম–কায়কোবাদ ছিলেন “ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর ভক্ত”। এখন সরকার পরিবর্তনের পর তারা নিজেদের “বিএনপি–ঘনিষ্ঠ” হিসেবে প্রচার করছেন। গণপূর্তের অভ্যন্তরে বিএনপি–পন্থী কিছু প্রকৌশলীকে টার্গেট করে ঘুষ ও সখ্যের মাধ্যমে নতুন অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভাষায় “ভূইগড় দরবারের ভণ্ডপীরদের মুখোশ পাল্টালেও চরিত্র পাল্টায়নি।”

সচেতন মহলের দাবি  : ভণ্ডপীরদের জবাবদিহি হোক
দুদক ও মন্ত্রণালয়ের হাতে রয়েছে ভণ্ডপীর শামীম আখতার ও মুরিদ কায়কোবাদের দুর্নীতির অডিও–ভিডিও প্রমাণ। কিন্তু রহস্যজনকভাবে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মানববন্ধনের বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—“অভিযুক্ত ভণ্ডপীরকে গ্রেপ্তার ও চাকরি থেকে অপসারণ না করলে ছাত্র–জনতা আরও কঠোর আন্দোলনে নামবে।”

গণপূর্ত অধিদপ্তর আজ ভূইগড় দরবার শরীফের রক্ত–দুর্নীতির কবলে যেখানে প্রধান প্রকৌশলী পীরের আসনে বসে দুর্নীতির জারি করেন, আর মুরিদ কায়কোবাদ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টাকা তোলেন। এই দুজনের হাতেই ছাত্র–জনতার রক্তের দায় ও গণপূর্তের নৈতিক পতনের ইতিহাস লেখা হচ্ছে। সত্য প্রকাশের সময় এখন—ভণ্ডপীরের মুখোশ খুলে তার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

👁️ 71 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *