বিচার বিভাগে নারীর অংশগ্রহণ কেবল প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন নয়, বরং এটি ন্যায়বিচারের গুণগত উৎকর্ষ ও জনআস্থার বিশেষ প্রতীক ——-ব্যাংককে এক কনফারেন্সে বক্তৃতায় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি 

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক :  বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ –+ UNDP আয়োজিত Regional Convening on Judicial Leadership for Women Judges in Asia সংক্রান্ত “Shift Underway- Advancing Gender on the Bench for Sustainable Development” শীর্ষক কনফারেন্সে অংশগ্রহণের জন্য  ব্যাংকক অবস্থান করছিলেন।


বিজ্ঞাপন

গত বৃহস্পতিবার  ১৬ অক্টোবর,  এশিয়ার নারী বিচারকদের আঞ্চলিক এই সম্মেলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বিচার বিভাগের নেতৃত্বে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়নে এর প্রয়োজনীয়তার বিষয় তুলে ধরেন।

বক্তৃতায়  প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগে নারীর অংশগ্রহণ কেবল প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন নয়, বরং এটি ন্যায়বিচারের গুণগত উৎকর্ষ ও জনআস্থার বিশেষ প্রতীক। তিনি উল্লেখ করেন, নারী বিচারকরা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (Gender based violence), কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও পারিবারিক বিরোধের মতো সংবেদনশীল মামলায় মানবিক অন্তর্দৃষ্টি ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচারপ্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করে থাকেন।


বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের প্রতিবেদন (A/76/142) উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, নারী বিচারকরা ক্ষমতার ভারসাম্য ও মর্যাদার সূক্ষ্ম দিকগুলো অনুধাবন করতে বেশি সক্ষম, যা বিচার ব্যবস্থাকে আরও ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলে।


বিজ্ঞাপন

প্রধান বিচারপতি জোর দিয়ে বলেন যে বিচার কর্ম বিভাগে সত্যিকারের সমতা শুধু নিয়োগের মাধ্যমে আসে না, বরং এটি একটি রূপান্তরের প্রক্রিয়া। এ লক্ষ্যে তিনি স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়া, নারীবান্ধব পেশাগত পরিবেশ, মেন্টরশিপ নেটওয়ার্ক- এর উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে এশিয়ার বিচার বিভাগগুলোতে সমৃদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশের জেলা আদালতসমূহে (District Judiciary) ৬২৫ জন নারী বিচারক কর্মরত থাকলেও উচ্চ আদালতে তাঁদের সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে ১১৭ জন বিচারকের মধ্যে মাত্র ১২ জন নারী বিচারক রয়েছেন এবং এখনো বাংলাদেশে কোনো নারী প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হননি। এছাড়া, বাংলাদেশে আইন পেশায় নারীর সংখ্যা ১২ শতাংশেরও কম, যা পেশাগত অগ্রগতিতে নারীর সীমিত অংশগ্রহণের ইঙ্গিত বহন করে মর্মে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে ২৫ জনের মধ্যে মাত্র ৩ জন নারী বিচারক নিযুক্ত হওয়া প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে নারীবান্ধব বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় এখনো কিছু কাঠামোগত ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে তিনি নারীদের জন্য পেশাগত প্রস্তুতি, কার্যকর দিকনির্দেশনা ও নীতিগত সহায়তা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত হলে আইনি চিন্তাভাবনা আরও গভীর ও মানবিক হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে বিচার বিভাগে নারী নেতৃত্ব আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে পারিবারিক, শ্রম, সম্পত্তি ও পরিবেশ সংক্রান্ত মামলায় অধিক ন্যায়সঙ্গত ফলাফল নিশ্চিত করতে সক্ষম।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতাগোষ্ঠীর ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, নারীর বিচারিক নেতৃত্ব বিকাশে তাদের ভূমিকা নিছক সহায়তা নয়, বরং এটি এক প্রকারের অংশীদারিত্ব। বিশেষ করে, তিনি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP)-এর প্রশংসা করে বলেন যে বাংলাদেশে UNDP সুপ্রীম কোর্ট, সরকার ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে বিচার বিভাগের সক্ষমতা ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর পাশাপাশি, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির অবদানকেও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

প্রধান বিচারপতি  তাঁর বক্তৃতায় নারী বিচারকদের মেন্টরশিপ, প্রশিক্ষণ ও নেতৃত্ব বিকাশে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য আইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বার অ্যাসোসিয়েশন ও বিচারকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান । তিনি মন্তব্য করেন, ন্যায়বিচার তখনই পূর্ণতা পায়, যখন বিচার বিভাগে সমাজের সকল স্তর ও লিঙ্গের (gender) প্রতিনিধিত্ব সুষমভাবে প্রতিফলিত হয়।

উল্লেখ্য, সফরকালে  প্রধান বিচারপতি গত ১৫ অক্টোবর  থাইল্যান্ডের বিচারমন্ত্রী (Minster of Justice) Pol. Lt. General Ruttaphon Naowarat ( রুত্তাফন নাওয়ারাত) এর সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন।

এছাড়া, প্রধান বিচারপতি গত ১৫ অক্টোবর,  UNDP এর Deputy Regional Director for Asia and the Pacific, Mr. Christophe Bahuet এবং নেপালের Deputy Chief Justice, Sapna Pradhan Malla এর সাথে পৃথক পৃথক সাক্ষাতে মিলিত হন। ব্যাংকক সফর শেষে  প্রধান বিচারপতি আজ শনিবার  ১৮ অক্টোবর  দেশে ফিরেছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *