এ মাসেই আক্রান্ত হবে ৫০ হাজার

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

আক্রান্ত ৯,৪৫৫ জন
সুস্থ ১,০৬৩ জন
মৃত্যু ১৭৭ জনের

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : চলতি মাসেই বাংলাদেশ থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দূর হয়ে যাবে বলে গত ২৭ এপ্রিল একটি গবেষণায় দেখিয়েছে সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইন (এসইউটিডি) এর ডাটা ড্রিভেন ইনোভেশন ল্যাব। বিশ্বব্যাপী ভয়াল থাবা বিস্তারকারী এই ভাইরাস নিয়ে এ গবেষণাটি কতটা কার্যকরী হতে পারে তা বিশ্লেষণ করেছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ও এমআইটিতে অধ্যয়নরত চার বাংলাদেশি গবেষক।
গত ২৭ এপ্রিল দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে করোনাভাইরাসের অবসান সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়। সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইন (এসইউটিডি) এর ডাটা ড্রিভেন ইনোভেশন ল্যাবের একটি গবেষণাকে উদ্ধৃত করে ওইসব খবরে বলা হয় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ১৯ মে মধ্যে ৯৭ শতাংশ কমে যাবে আর ৩০ মে’র মধ্যে কমবে ৯৯ শতাংশ। ভাইরাসের মতো করেই এই খবরটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে যারা এপিডেমিওলজি এবং ডাটা সায়েন্স সম্পর্কে ন্যূনতম মৌলিক জ্ঞান রাখেন তারা বুঝতে পারবেন এই গবেষণা থেকে বৈজ্ঞানিক সত্যতার অবস্থান অনেক দূরে।
এ দিকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, আগামী ৩১মে পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হতে পারে ৪৮ থেকে ৫০ হাজার। আর এই ভাইরাসের সংক্রমণে মারা যেতে পারে এক হাজার মানুষ।
রোববার সচিবালয়ে করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু রাখার বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে একথা জানায় আইইডিসিআর।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে বৈঠকটি সচিবালয়ে চলছে। বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ, এফবিসিসিআই এবং পুলিশের আইজিসহ আইইডিসিআর এর কর্মকর্তাবৃন্দ।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস আরও দুজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৭ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৬৬৫ জন। এতে দেশে ভাইরাসটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল নয় হাজার ৪৫৫ জনে।
রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচ হাজার ২১৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগের কিছু মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৬৮টি। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৮১ হাজার ৪৩৪টি। নতুন যাদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাদের মধ্যে আরও ৬৬৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন নয় হাজার ৪৫৫ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও দুজন। এদের একজনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছর, অপরজন ষাটোর্ধ্ব। একজন নারায়ণগঞ্জের, অপরজন রংপুরের বাসিন্দা। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৭ জনে। আর এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৬৩ জন।
গত শনিবারের বুলেটিনে জানানো হয়, বিগত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫২ জন।
প্রসঙ্গত গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হন ৮ মার্চ এবং এ রোগে আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় বুলেটিনে।
করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে। তবে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস ক্রমে গোটা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। চীন পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ। মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি। তবে সোয়া ১১ লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। নিয়েছে আরও নানা পদক্ষেপ। যদিও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় খুলেছে পোশাক কারখানা। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে কি-না, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।
তবে এর মাঝেও কিছু দেশ লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রদেশ এরইমধ্যে লকডাউন শিথিল করেছে। ইতালিও তুলছে মঙ্গলবার থেকে।
তবে যেখান থেকে সংক্রমণের সূত্রপাত সেখানে নেই লকডাউন। চীন এখন অনেকটাই স্বস্তিতে। গেল পাঁচদিন সেখানে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনে দেশটি এখন চেষ্টা চালাচ্ছে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌঁড়ে এগিয়ে থাকতে। বিশ্বব্যাপী করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে শতাধিক গবেষণা চললেও এখন পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি পেয়েছে মাত্র ১৭টি। এরমধ্যে চীনেরই রয়েছে তিনটি।
গবেষকরা আশার বাণী শোনালেও খুব শিগগিরই ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে এমন কোনো সম্ভাবনার কথা শোনাচ্ছে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।


বিজ্ঞাপন