এলবিয়ন গ্রুপ: প্রোপাগান্ডার আড়ালে ঘনীভূত অনিয়মের জাল—ডেটাবেসসহ এক বিস্তৃত অনুসন্ধান

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত চট্টগ্রাম জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি (চট্টগ্রাম) :  একদিকে কর্পোরেট ব্র্যান্ডিং, গ্ল্যামারাস ভিডিও, সাজানো সংবাদ ও বিজ্ঞাপনের ঝলক—অন্যদিকে ব্যাংকিং অনিয়ম, সন্দেহজনক লেনদেন, অতিমূল্যায়ন, নিউজ ম্যানেজমেন্ট এবং মালিকপক্ষের আইনি জটিলতা।


বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের বহুমুখী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এলবিয়ন গ্রুপ বর্তমানে এই দুই বিপরীত বাস্তবতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের ইমেজ রক্ষায় আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ব্যস্ত, কিন্তু তথ্য, ডেটাবেস ও তদন্তের নথি বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন গল্প।

এই রিপোর্টে এলবিয়ন গ্রুপের প্রোপাগান্ডা ও মাঠের বাস্তবতা তুলনামূলকভাবে উন্মোচন করা হলো।


বিজ্ঞাপন

প্রোপাগান্ডার ঝড় : ‘সততা, স্বচ্ছতা ও সাফল্য’—সাজানো এক কর্পোরেট ইমেজ : গত চার মাসে এলবিয়ন গ্রুপের মিডিয়া উপস্থিতি হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।


বিজ্ঞাপন

তিনটি প্রধান লক্ষ্য ছিল— ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের তদন্তকে ধামাচাপা দেওয়া, মালিকপক্ষের গ্রেপ্তার–সংবাদকে দুর্বল করা,. ইমেজ মেকওভার তৈরির মাধ্যমে জনমতের নিয়ন্ত্রণ।

বিভিন্ন অখ্যাত অনলাইন মিডিয়া, ইউটিউব চ্যানেল, অঘোষিত PR এজেন্সি ও সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ–নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রুপটির “সাফল্যের গল্প”—“অ্যাওয়ার্ড”—“সমাজসেবামূলক উদ্যোগ” প্রচারের কাজ হয়।

কিন্তু এসব প্রচারণা যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে—ঠিক তখনই তদন্ত সংস্থার নজরে উঠে আসে একের পর এক অসঙ্গতি।

ডেটাবেস উন্মোচন– ব্যাংকিং অনিয়মের গভীরতা : নীচে সংকলিত Loan Exposure Database (2019–2025) তুলে ধরা হলো— বছর ব্যাংক অনুমোদিত ঋণ (কোটি টাকা) বিতরণ বকেয়া (%) অডিট মন্তব্য, ২০১৯ ব্যাংক-A 210 198 47% অস্বাভাবিক দ্রুত অনুমোদন, ২০২০ ব্যাংক-B 320 315 62% শর্ত ভেঙে অর্থ বিতরণ, ২০২১ ব্যাংক-C 150 150 71% জামানত অতিমূল্যায়ন, ২০২২ ব্যাংক-D 275 260 54% প্রকল্প ব্যয় মেলেনি, ২০২৩ ব্যাংক-E 340 332 66% আর্থিক অসংগতি, ২০২৪ ব্যাংক-A 410 407 58% নথির গরমিল, ২০২৫ বিভিন্ন 1,705 1,672 61% চার নথি তদন্তাধীন।

ডেটা বলছে– এলবিয়ন গ্রুপের ঋণ–ঝুঁকি মোটামুটি উচ্চতম পর্যায়ে : পরিশোধের তুলনায় বিতরণ অনেক বেশি, জামানত ও আয়–ব্যয়ের নথির মধ্যে বৈষম্য, অর্থাৎ প্রচার যতই হোক, ব্যাংকিং ভিত্তি ততই ঝুঁকিপূর্ণ।

মিডিয়া ম্যানিপুলেশন – প্রোপাগান্ডার পিছনের অ্যালগরিদম :নীচে Media Tracking Log (জুলাই–অক্টোবর ২০২৫) মাস ইতিবাচক/PR সংবাদ নেতিবাচক/তদন্তমূলক সংবাদ বিশ্লেষণ, জুলাই ১৮ ১১ গ্রেপ্তার–সংবাদের প্রতিক্রিয়া, আগস্ট ২৬ ৯ কর্পোরেট ব্র্যান্ডিং বেড়ে যায়, সেপ্টেম্বর ৩৪ ১৪ সাজানো ‘আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড’ প্রচার, অক্টোবর ৩৯ ১৭ প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে বিভ্রান্তিকর নিউজ।

ট্রেন্ড বিশ্লেষণ :  নেতিবাচক সংবাদ যত বাড়ে, এলবিয়নের প্রোপাগান্ডা–কন্টেন্ট দ্বিগুণ হয়। এটাই কর্পোরেট সংকট ব্যবস্থাপনার ক্লাসিক প্যাটার্ন—“overexposure to overshadow crisis”।

প্রকল্প ব্যয়ের গরমিল: অতিমূল্যায়নের ডেটা : Project Expense Examination (2020–2024) প্রকল্প অনুমোদিত বাজেট রিপোর্টেড ব্যয় যাচাইকৃত বাস্তব ব্যয় অতিরিক্ত ব্যয় (%) প্রকল্প–A 145 কোটি 179 কোটি 121 কোটি +48%, প্রকল্প–B 220 কোটি 247 কোটি 188 কোটি +31%, প্রকল্প–C 165 কোটি 202 কোটি 149 কোটি +36%, প্রকল্প–D 310 কোটি 357 কোটি 268 কোটি +33%

অডিটের মন্তব্য :অতিরিক্ত ব্যয় পুরোপুরি অযৌক্তিক এবং প্রকল্প–নথির সঙ্গে মেলে না। এলবিয়নের প্রচারণায় এসব প্রকল্পকে “মাইলস্টোন” বলা হলেও, ডেটাবেস বলে এগুলো অতিরিক্ত ব্যয়নির্ভর আর্থিক অসঙ্গতি।

আইনি জটিলতা: মামলার ডেটাবেস : Legal Case Log (2023–2025) মামলা নং বছর অভিযোগ অভিযুক্ত অবস্থা, 14/2023 ২০২৩ আর্থিক অনিয়ম শীর্ষ ব্যবস্থাপনা তদন্ত চলছে

07/2024 ২০২৪ ব্যাংক দুর্নীতি পরিচালক শুনানি চলছে,
33/2025 ২০২৫ ক্ষমতার অপব্যবহার নজরুল ইসলাম মজুমদার আদালত–অধীন, 41/2025 ২০২৫ মিডিয়া প্রভাব বিস্তার মিডিয়া সহযোগী তদন্তাধীন।

দৃষ্টিগোচর সামঞ্জস্য : ২০২৫ সালের PR–অভিযানের সাথে একই সময়ে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মালিকপক্ষের গ্রেপ্তার–সংবাদের পর প্রচারণা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে।

সন্দেহজনক লেনদেন: Financial Flow Database : ধরন সময়কাল অঙ্ক মন্তব্য +–১২টি অস্বাভাবিক লেনদেন জানুয়ারি–মে ২০২৪ ৬৪ কোটি সূত্র অস্পষ্ট,  ৭টি ক্রস-অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার ২০২৩–২০২৪ ৮১ কোটি তাৎক্ষণিক ভারসাম্যহীনতা, ৯টি বিদেশি পেমেন্ট ২০২৪ ৪৭ কোটি নথিভুক্ত সাপ্লায়ার নেই, শেয়ারহোল্ডিং পরিবর্তন–৪টি ২০২৫ — সংকট ব্যবস্থাপনা। লেনদেন–প্যাটার্নগুলো স্পষ্টতই রিস্ক ফ্ল্যাগ তৈরি করেছে।

প্রোপাগান্ডা বনাম বাস্তবতা: দুই মুখের দুই হিসাব :এলবিয়নের দাবি ডেটাবেস অনুযায়ী বাস্তবতা, “সততা আমাদের শক্তি” ৬১% বকেয়া ঋণ, অস্বচ্ছ নথি,“ব্যবসায়িক সাফল্য” অতিমূল্যায়ন ও অতিব্যয়,“ বহির্বিশ্বে স্বীকৃতি” বেশিরভাগই PR এজেন্সি–ম্যানেজড

“মিডিয়া স্বাধীনতা” অভ্যন্তরীণ নিউজ ম্যানেজমেন্ট “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র” একাধিক মামলা ও সন্দেহজনক লেনদেন।

উপসংহার : প্রোপাগান্ডা কি আসলেই ঢাকতে পারবে বড় সংকট ?  ডেটাবেস, অডিট-নথি, ফিনান্সিয়াল ট্রেইল, মিডিয়া ট্র্যাকিং—সব বিশ্লেষণ একই দিকে ইঙ্গিত করছে—এলবিয়ন গ্রুপের অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থা অস্বচ্ছ, ঋণ–ঝুঁকি ক্রমবর্ধমান,  প্রকল্প ও ব্যয়ে বৈষম্য বিশাল, মালিকপক্ষ আইনি ঝামেলায় জর্জরিত এবং  মিডিয়া ব্যবহার করে ইমেজ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত।

সাধারণ প্রচারণায় এগুলো ঢেকে রাখা যায় হয়তো কিছু সময়ের জন্য, কিন্তু ডেটা কখনোই মিথ্যে বলে না।

এখন প্রশ্ন— এলবিয়ন গ্রুপ কি সত্যিই নিজেদের রক্ষা করতে পারবে, নাকি প্রোপাগান্ডার আড়াল ভেঙে আরও বড় দুর্নীতি সামনে আসবে?

👁️ 89 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *