তেজগাঁও গণপূর্তে ‘অঘোষিত সম্রাট’ জাহাঙ্গীর আলম !! দুই বছরে শত কোটি টাকার সাম্রাজ্য !! অবৈধ সম্পদ, ভুয়া বিল, টেন্ডার-বাণিজ্য, বদলি-বাণিজ্য ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক :  তেজগাঁও গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (ইএম) জাহাঙ্গীর আলমকে ঘিরে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব অভিযোগ—অভিযোগকারীদের ভাষায় “মাত্র দুই বছরে সরকারি দপ্তরে চাকরি করে শত কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠা এক ‘অঘোষিত সম্রাট’।”


বিজ্ঞাপন

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভেতরে নানান অপতৎপরতা, চাপ সৃষ্টি, দলীয় প্রভাব খাটানো এবং প্রকল্পে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছেন—এমন অভিযোগ একাধিক সূত্রের। একইসঙ্গে অবৈধ সম্পদ, ভুয়া বিল ভাউচার, অনিয়ম-দুর্নীতি, টেন্ডার-বাণিজ্য, বদলি-বাণিজ্য এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদক ইতোমধ্যে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

টেন্ডার-বাণিজ্য ও বিল–বানিজ্যের ‘মহাযজ্ঞ’ এবং জিগাতলা প্রকল্পে ৮ কোটি টাকার বিল–বিতর্ক :  অভিযোগ অনুযায়ী— জিগাতলা প্রকল্পের ১,০০০ বর্গফুটের দুটি ভবনের ৮ কোটি টাকার কাজের বিল ঠিকাদার মাহবুব কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে আঁতাত করে ভাগাভাগি করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজের সঠিক ডেলিভারি ছাড়াই বিল অনুমোদন দেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন

উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর স্বাক্ষর ছাড়াই বিল উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্পের বেশ কিছু বিল নথিতে “বস্ক/অনুপস্থিত স্বাক্ষর” পাওয়া গেছে—যা নজিরবিহীন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। সূত্রের ভাষ্য—“প্রকল্পে প্রকৃত কাজের অর্ধেকও হয়নি। কিন্তু বিল হয়েছে পুরোপুরি!”


বিজ্ঞাপন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ারে ৩ গুণ দামে লাইট এবং এনার্জি গ্লাস কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজশে ৮ কোটি টাকা লুটের অভিযোগ  :  আরও বিস্ময়কর অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীর এর বিরুদ্ধে, গ্লাস টাওয়ারে ব্যবহৃত বিশেষ লাইটের দাম বাজারমূল্যের তিনগুণ দেখানো হয়, এনার্জি গ্লাস কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজশে অতিরিক্ত বিল উত্তোলন হয় বলে অভিযোগকারীদের দাবি, এই এক প্রকল্পেই ৮ কোটি টাকার অনিয়মের গন্ধ পাওয়া যায়।

একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন—“প্রতিটি লাইটের বাজার দাম ১ হলে দেখানো হয়েছে ৩। আর এই বাড়তি দুই–ভাগের বড় অংশই গেছে নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের পকেটে।”

কাজ না করেও বিল—ডিভিশন কাঁপানো ‘জাহাঙ্গীর-মডেল এবং দাপ্তরিক স্বাক্ষর ছাড়াই বিল প্রদানের অভিযোগ : অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আরও বিস্ময়কর তথ্য—দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর স্বাক্ষর ছাড়াই বিল প্রক্রিয়া ও অনুমোদন, উপ-বিভাগ ৪-এর কিছু কর্মকর্তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ন্ত্রণে এনে বিল–ফাঁকফোকর তৈরির অভিযোগ, একই ব্যক্তি প্রাকলন প্রস্তুত এবং প্রাকলন যাচাই—দুই দায়িত্বই পালন করতেন, যা অনিয়মের বড় উৎস

রায়েরবাজার বদ্ধভূমি উপকেন্দ্র প্রকল্প এবং ঝিগাতলা প্রকল্প—দু’টিতেই স্বাক্ষরবিহীন বিল প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগকারীদের দাবি। একজন প্রকৌশলী বলেন— “স্বাক্ষর আমাদের। টাকা তাদের!”

নিয়োগ বাণিজ্য ও নিজ এলাকা–কেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণ : রাজশাহীর ‘নেটওয়ার্ক’ ও অতিরিক্ত বেতন–কেলেঙ্কারির ও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ই/এম বিভাগের উপ-বিভাগ ৩ ও ৪—দুইটিতেই রাজশাহী এলাকার স্বজন–কেন্দ্রিক নিয়োগের অভিযোগ,

দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন—নিয়োগগুলো হয়েছে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে, অনেক কর্মীকে কাজ ছাড়া দ্বিগুণ বেতন দেওয়া হয়েছে, দায়িত্বরত হিসাবসহকারী বা বড়বাবুর জায়গায় ঠিকাদারের লোক দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগও আছে।

এমনকি প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনের কাজেও নিম্নমান, সময়মতো ডেলিভারি না দেওয়া, ভুল মালামাল সরবরাহ—এসব কারণে তিনি ক্ষুব্ধ হন, যা শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলমের বদলির কারণ হয়ে ওঠে বলে একাধিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন।

দ্রুত প্রমোশন, ভুয়া ডিউটি ও ‘অলৌকিক’ সম্পদ বৃদ্ধি ; ২০১২–১৬ সালে কাজে না গিয়েও বেতন”—এমন অভিযোগও রয়েছে। একাধিক কর্মকর্তার দাবি ——-২০১২–১৬ সালে বিআইডব্লিউটিএ–তে সহকারী প্রকৌশলী থাকাকালে তিনি নিয়মিত ডিউটি না করেও বেতন তুলেছেন,  এবং একই সময়ের মধ্যে তার সম্পদ অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

অবৈধ সম্পদের সম্ভাব্য তালিকা (অভিযোগভিত্তিক) : সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী —মোহাম্মদপুরে আলিশান বাড়ি, কুয়াকাটা ও কক্সবাজারে রিসোর্ট/ফ্ল্যাট, গ্রামের বাড়িতে বহু বিঘা জমি, মিরপুরে ৬ তলা বাড়ি, বসুন্ধরা আবাসিকে ৫ কাঠার ৩টি প্লট, পশ্চিম মনিপুরে মোল্লাপাড়ায় আলিশান বাড়ি (বাসা নং–৮৯), উত্তরা সেক্টর–১৩, রোড–৮ এ স্ত্রী–নামে ফ্ল্যাট (২য় ও ৩য় তলা), স্ত্রীর নামে কোটি টাকার দুইটি এফডিআর, শাশুড়ীর নামে সন্দেহজনক ব্যাংক লেনদেন, ব্র্যান্ড নিউ লেক্সাস হ্যারিয়ার গাড়ি, বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ।

দুদক সূত্র বলছে— “তার সম্পদ ঘোষিত আয়ের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি—সুতরাং অনুসন্ধান চলছে।”

দলীয় প্রভাব ও আন্দোলন দমনে অর্থ সহায়তা, রাজশাহীতে তার বিরুদ্ধে মিছিল : অভিযোগ রয়েছে— গত জুলাইয়ে রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে তিনি স্থানীয় একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তা দেন।
এর জেরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে মিছিল বের করে।

দুদক তদন্ত ও সচেতন মহলের দাবি :  গণপূর্ত, রাজনৈতিক মহল, প্রকৌশলী সমাজ এবং সচেতন নাগরিকদের দাবি—“অভিযোগ যেহেতু গুরুতর—দুদকের পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান, সম্পদ যাচাই, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্ক্যানিং এবং মানি–ট্রেইল তদন্ত অবশ্যই করা প্রয়োজন।”

দুদক সূত্র জানায়—অনুসন্ধান চলছে, প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ, সম্পদ জব্দ এবং মানি–ট্রেইল অনুসন্ধান করা হবে।

উপসংহার  : তেজগাঁও গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে ঘিরে যে বিস্তৃত অভিযোগে ছাওয়া নথিপত্র ও কর্মকর্তাদের বয়ান পাওয়া যাচ্ছে—তাতে স্পষ্ট যে বিষয়টি একজন ব্যক্তির অনিয়ম নয়, বরং একটি প্রাতিষ্ঠানিক সিন্ডিকেটের কাঠামো তদন্তের আওতায় আসছে।

সচেতন মহলের দাবি— “অভিযোগ সত্য হলে কঠোর বিচারের মাধ্যমে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সরকারি প্রকল্প আর ব্যক্তিগত লুটের মেলায় পরিণত না হয়।”

👁️ 80 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *