মোবাইল হারালেই হয়রানির আতঙ্ক!

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: হারিয়ে যাওয়া পুরাতন মোবাইল দিয়ে সাইবার অপরাধের ঘটনা ঘটছে। মোবাইল সেট থেকে পুরো ফাইল মুছে ফেললেও তা অনেক সময় ‘রিস্টোর’ করা সম্ভব হচ্ছে। আর এ সুযোগেই সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এলাকার ২৩ বছর বয়সী এক তরুণী তার আইফোন বিক্রি করতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আসেন। সেখানে তার মোবাইল সেটটি বিক্রির জন্য ৪০ হাজার টাকা দাম ঠিক করেন। ফোন সেটটি হাতে নিয়ে বুথ থেকে টাকা তোলার কথা বলে দৌড়ে পালিয়ে যান এক প্রতারক। সপ্তাহ না ঘুরতেই সেই ফোনটি কেনেন উত্তরার অনিক নামের এক যুবক। আইফোন হাতে পেয়ে প্রথমেই অ্যাপসের মাধ্যমে মুছে ফেলা ছবি ও ভিডিও রিস্টোর করেন তিনি। এরপর ওই ফোনে পেয়ে যান ওই তরুণীর স্পর্শকাতর কিছু ছবি। আর ছবিগুলো পেয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগের উপায় বের করে। পরে ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন অনিক। পরে ওই তরুণী দেরি না করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে যোগাযোগ করেন।
সিআইডি সাইবার পুলিশের সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান গণমাধ্যমকে জানান, ‘অনিকের ফেসবুক আইডি ট্র্যাক করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরো জানান, ‘সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের মোবাইল ফোনে, ফেসবুক পেজে বা সরাসরি দিনে ১২০০ থেকে ১৫০০ অভিযোগ পড়ে। কিছু কিছু অভিযোগ ফোনেই সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আবার কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনি পরামর্শ দিয়ে পরে তা নিয়ে কাজ করা হয়। আর বাকি অভিযোগের ভিত্তিতে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশি সেবা নিশ্চিত করি।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার সূত্র জানায়, যে সব ব্যক্তি তাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাদের বয়স ১৪ থেকে ৩০ বছর হবে। আর এদের অধিকাংশই যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। তার মধ্যে রয়েছে, বিদ্বেষ ছড়ানো, ছবি কেটে অশালীন ছবিতে বসানো, তরুণীদের যৌন হয়রানির হুমকি, ফেসবুক আইডি হ্যাক করে বাজে পোস্ট, অসামাজিক আবদার ইত্যাদি। পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা, গুজব ও অনলাইন পণ্য কেনা নিয়েও প্রতারণার অভিযোগ আছে।
সাইবার সেন্টার সূত্র জানায়, নীলফামারী জেলা নি¤œ আদালতে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দিয়েছেন এক আসামি। জেলার দেবিগঞ্জ থানা সোনাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ছেলে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে এক তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা করেন। আর রংপুর কাউনিয়ায় অনার্সে অধ্যয়নরত ওই তরুণীর ফেসবুকে গিয়ে তার ছবি সংগ্রহ করে ছবির মাথা কেটে অশ্লীল ছবির সঙ্গে সংযুক্ত করেন তিনি। এরপর সেই ছবি ইনবক্সে দিয়ে অসামাজিক প্রস্তাব করা হয়। সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের ফেসবুক পেজে এমন অভিযোগ আসার পর প্রযুক্তির সহায়তায় ফেক আইডির আসল মালিককে খুঁজে পায় সিআইডি পুলিশ। এরপর নীলফামারী সদর থানার পৌর মার্কেটের সামনে থেকে ছবি এডিট করার ডিভাইসসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। সিআইডি পুলিশ জানায়, এখন পর্যন্ত দিনে হাজারের বেশি অভিযোগ আসছে। এসব অভিযোগের বেশীর ভাগই হচ্ছে যৌন হয়রানির অভিযোগ। এমন একটি ঘটনার পেছনে দিনের পর দিন লেগে থাকতে হয়। আবার কোনোটি এক দিনে, আবার কোনোটি ১০ মাসে গিয়েও সমাধান করা যায়।
সিআইডির সদর দফতরের এক সূত্র জানায়, চলতি বছরের গত ৫সেপ্টেম্বর থেকে ১০অক্টোবর পর্যন্ত সাইবার পুলিশ সেন্টারের ফেসবুক পেজে ১৭হাজার ৭০৩টি অভিযোগ এসেছে। আর ফোনে অভিযোগ করেছেন ৩৮ হাজার ৬১০ জন ভুক্তভোগী। ফোনেই সমাধান হয়েছে ১২ হাজার ৫৬০টি অভিযোগের। বাকিগুলো নিয়ে এখনো কাজ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করে জানা যায়, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা থেকে অনলাইনে পণ্য বিক্রির নামে সবচেয়ে বেশি প্রতারণা হয়েছে। আর এই প্রতারণার মাধ্যমে অনেকে মোটা অঙ্কের টাকা কামিয়েছেন। আবার ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকায় সিআইডি বিশেষ নজরদারি করছে।
সিআইডি পুলিশ কর্মকর্তারা মোবাইল ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘যদি কেউ মনে করেন তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সাইবার পুলিশ সেন্টারের ফেসবুক পেজে মেসেজ করবেন। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা তাকে নির্দেশনা দেবেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যৌন হয়রানিমূলক কোনও ঘটনা ঘটলে একইভাবে অবহিত করা যাবে। আবার ঘটনাটি ঘটিয়েছে কে, তা জানা থাকলে সাইবার পুলিশ তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করবে। এছাড়া, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কেউ প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে সাইবার পুলিশ সেন্টারকে ফোন করে জানাবেন। সাইবার পুলিশ পরবর্তী করণীয় জানিয়ে দেবেন।


বিজ্ঞাপন

 

 

👁️ 7 News Views