নবাব এলএলবি’র পরিচালক-অভিনেতা কারাগারে

অপরাধ আইন ও আদালত বিনোদন

বিনোদন প্রতিবেদক : মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘নবাব এলএলবি’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে পুলিশকে হেয় করার অভিযোগে এবং পর্নোগ্রাফি আইনে মামলায় চলচ্চিত্রটির পরিচালক অনন্য মামুন এবং অভিনেতা শাহীন মৃধাকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে অন্য আসামি স্পর্শিয়াকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) মধ্য রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ মিরপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) আদালতে নেওয়া হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

পুলিশ জানায়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক নাসিরুল আমিন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা (নম্বর ২১) দায়ের করেন। ওই মামলায় পরিচালক অনন্য মামুন, অভিনেতা শাহীন মৃধা ও চলচ্চিত্র নায়িকা স্পর্শিয়াসহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে তাদের আসামি করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেক আসামি চলচ্চিত্র নায়িকা স্পর্শিয়াকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ফজলুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, নবাব এলএলবি চলচ্চিত্রটি আংশিকভাবে অনলাইনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে ধর্ষণের শিকার হওয়া একজন নারীকে পুলিশ চরিত্রে অভিনয়কারী ব্যক্তি অশালীন ও আপত্তিকর ভাষায় প্রশ্ন করতে দেখা গেছে। এতে একদিকে যেমন পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে, তেমনি নারীর প্রতিও অবমাননা করা হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের পরিচালক ও একজন অভিনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশের উধ্বর্তন একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলচ্চিত্রটিতে একটি দৃশ্যে দেখানো হয় যে, ধর্ষণের শিকার একজন নারী থানায় মামলা করতে গেছেন। তখন সেখানে পুলিশের একজন এসআই তাকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন।

এই জিজ্ঞাসাবাদে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানাচ্ছে, যেটাকে পুলিশ একটি অপরাধ হিসাবে দেখছে এবং সেজন্য পর্নোগ্রাফি আইনের আওতায় মামলা করেছে।

পুলিশ বাহিনীকে ঐ দৃশ্যে হেয় করা হয়েছে বলেও পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন। অবশ্য পুলিশের অভিযোগ সম্পর্কে চলচ্চিত্রটির প্রযোজক বা সংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে ধর্ষণের শিকার এক নারী থানায় পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রশ্নোত্তর দেখানো হয়েছে। সেখানে ধর্ষণের বর্ণনা ও জিজ্ঞাসাবাদ অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় করা হয়েছে। যা সুস্থ বিনোদনের পরিপন্থী হওয়ায় পরিবার-পরিজনসহ একত্রে বসে দেখা সম্ভব নয় এবং যা জনসাধারণের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে। এই ভিডিওটি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর জন্য অত্যন্ত মানহানিকর এবং ভিডিওর মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে জনসাধারণের সম্মুখে অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি অনন্য মামুন পরিচালিত ‘নবাব এলএলবি’ চলচ্চিত্রটির অর্ধেকাংশ ‘আই থিয়েটার’ নামে একটি অনলাইন অ্যাপে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি চলচ্চিত্রটি পূর্ণাঙ্গভাবে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুক্তি দেওয়া অংশের একটি দৃশ্যে ধর্ষণের শিকার নারীকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। জিজ্ঞাসাবাদের ওই অংশটুকু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে ভাইরাল হলে সেখানে পুলিশ সম্পর্কে মানুষ নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বিষয়টি আমলে নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নবাব এলএলবি চলচ্চিত্রটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, মাহিয়া মাহি, অর্চিতা স্পর্শিয়া, শহীদুজ্জামান সেলিম ও শাহীন মৃধা। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে সেলিব্রেটি প্রডাকশন।