৩৭ ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল হলেও থেমে নেই নকল ও ভেজাল ওষুধের উৎপাদন

স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাম্প্রতিকালে মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের চলমান অভিযানের ধারাবাহিকতায় ঔষধ প্রশাসন সারাদেশে এবং র‌্যারের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উদ্যোগে ওষুধ প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ দিকে দেশের ওষুধ উৎপাদনকারী ৩৭টি কোম্পানির লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। শর্ত পূরণ না করা ও মানহীন ওষুধ উৎপাদন করায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে। এগুলোর মধ্যে ১২টি অ্যালোপ্যাথি, ১৪টি ইউনানী ও ১১টি আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানি। এর মধ্যে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। গত মঙ্গলবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং লাইসেন্সিং অথরিটি (ড্রাগস) মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এসব কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়।


বিজ্ঞাপন

আদেশের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাময়িক লাইসেন্স বাতিল হওয়া কোম্পানিগুলো তাদের ওষুধ উৎপাদন, বিক্রি, মজুদ, বিতরণ ও প্রদর্শন করতে পারবে না। চিকিৎসকরা এসব কোম্পানির ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখতে পারবেন না। কেমিস্টদেরও বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সর্বসাধারণকে এসব কোম্পানির ওষুধ কেনাবেচা ও ব্যবহার না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অ্যালোপ্যাথিক কোম্পানি :ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নন্দনপুর এলাকার মেসার্স মনোমেদী বাংলাদেশ লি. নামে কোম্পানির উৎপাদন লাইসেন্স (ঝেব-৩৬৬) সাময়িক বাতিল করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান রাজধানীর মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের উৎপাদন লাইসেন্স (জৈব-১৭৭) সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের কামালপুর এলাকার মেসার্স মার্কার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং একই জেলার কুড়িবাড়ি এলাকার মেসার্স বায়োস ফার্মাসিউটিক্যালস, পিপলস ফার্মা, বিস্ট্রল ফার্মা, হলমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস, সাভারের তেঁতুলঝোড়া এলাকার নোভাস ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদন লাইসেন্স (জৈবও অজৈব) বাতিল করা হয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুরের দক্ষিণ ধনুয়া এলাকার মনিকো ফার্মার সব ধরনের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। নরসিংদীর ১৬/১ ভাগদী এলাকার ফিনিক্স কেমিক্যাল ল্যাবরেটরিজের (বাংলাদেশ), একই জেলার শিবপুরের বিসিক শিল্প এলাকার কারারচরের টেকনো ড্রাগসের (ইউনিট-৩) সব ধরনের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরে বিস্ট্রল ফার্মার বিস্ট্রল ডেল্টা ট্যাবলেটের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।

আয়ুর্বেদিক কোম্পানি :আয়ুর্বেদিক কোম্পানির মধ্যে ঝালকাঠি জেলার কবিরাজ রোড এলাকার সেবাশ্রী ঔষধালয়, গাজীপুরের কোনাবাড়ীর বিসিক শিল্পনগরী এলাকার ট্রেডিংটন কেমিক্যাল ওয়ার্কস, রংপুরের নিউ শালবন এলাকার দ্য মৌভাষা ইসলামিয়া ঔষধালয়, কুমিল্লা সদরের থানারোড এলাকার আর বল আয়ুর্বেদিক ফার্মেসি, গাজীপুরের বি-৮৪, বিসিক শিল্প এলাকার রেডিয়েন্ট নিউট্রিসিউটিক্যালস (আয়ুর্বেদিক ডিভিশন) উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের ১২/দুর্গাবাড়ী এলাকার শ্রী কৃষ্ণ ঔষধালয় (আয়ুর্বেদিক) ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ স্থগিত করা হয়েছে। রাজশাহীর শাহমখদুম উত্তর নওদাপাড়া এলাকার অরিজিন ল্যাবরেটরিজের (আয়ুর্বেদিক) আমলকী রসায়ন (তরল), অরিটলিন তরল (বলারিস্ট) এবং হার্বেজিন সেমিসলিডের (শুক্র সঞ্জীবনী মোদক) নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। বগুড়ার নিশিন্দারা এলাকার নিকো আয়ুর্বেদিক ল্যাবরেটরিজের নিকোডক্সের (ভীমরস) নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। ঢাকার শ্যামপুরের পূর্ব জুরাইন এলাকার নবীনবাগের দিহান ফার্মাসিউটিক্যালসের (আয়ুর্বেদিক) ট্যাবলেট জাতীয় আইটেমের উৎপাদন স্থগিত করা হয়েছে। নরসিংদীর বিরামপুরের ঔষধি ল্যাবরেটরিজের কারখানায় ভস্মজাতীয় আইটেম উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ স্থগিত করা হয়েছে। ময়মনসিংহের বিসিক শিল্পনগরী এলাকার মুন ফার্মাসিউটিক্যালসের ক্যাপসুল লিলা বিলাস ২৫০ মিলিগ্রাম, ক্যাপসুল যৌবন শতদল ২৫০ মিলিগ্রাম, ক্যাপসুল রতি বিলাস বটী ৫০০ মিলিগ্রাম, ক্যাপসুল বৃহৎ বাত চিন্তামনি ১২৫ মিলিগ্রাম, ক্যাপসুল মকরধ্বজ রসায়ন ২৫০ মিলিগ্রাম, ক্যাপসুল মহাশংখ বর্টী ২৫০ মিলিগ্রাম, ক্যাপসুল বৃহৎ পূর্বচূর্ণ রস ১৫০ মিলিগ্রাম, সিরাপ লৌহসব এবং সিরাপ লিকোরিনের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ স্থগিত করা হয়েছে।

ইউনানী কোম্পানি :রংপুরের জিলএল রায় রোড এলাকার বি. এন. ল্যাবরেটরিজ, চাঁদপুর সদরের বাবুরহাট বিসিক শিল্পনগরী এলাকার অরিক্স ইউনানী ল্যাবরেটরিজ, ময়মনসিংহ ৯ নম্বর এমএম সিংহ রোড (তেরী বাজার) এলাকার ফয়েজী দাওয়াখানা, ফেনীর তাকিয়া রোড এলাকার বেঙ্গল ইউনানী দাওয়াখানার উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। ঢাকার খিলগাঁও নন্দীপাড়া শেখের জায়গা এলাকার র‌্যাপিটেক ইউনানী ল্যাবরেটরিজ, টঙ্গীর ইসলামপুরের ৪২, ইশানদি সরকার রোড এলাকার মল্লিক ইউনানী ল্যাবরেটরিজ, কুমিল্লার রেইস কোর্সের ১২০৩, হোসেন লজ এলাকার নিউটন ল্যাবরেটরিজের সব ধরনের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ স্থগিত করা হয়েছে। পাবনার আটঘরিয়ার সিংহরিয়া এলাকার একে ল্যাবরেটরিজের শরবত জিনসিন (বাণিজ্যিক নাম- এক্সোজিন সিরাপ) শরবত মিছালির (বাণিজ্যিক নাম এ কে প্লেক্স সিরাপ) নিবন্ধন সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। গাজীপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিপাড়া রোড এলাকার আল সাফা ল্যাবরেটরিজের এস এরমল (তরল), আরক (গাওজাবান), বগুড়া সদরের মালগ্রাম এলাকার সবুজ হেলথ ল্যাবরেটরিজের শরবত জিনসিনের (বাণিজ্যিক নাম সাফা জিনসিন সিরাপ), চকসূত্রাপুর এলাকার নিরাময় হেলথ ল্যাবরেটরিজের আরক মাউল লাহম (তরল) আইটেমের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরের জেবিএল ড্রাগ ল্যাবরেটরিজের জেসিলভা (ক্যাপসুল হাব্বে আম্বর মোমিয়ায়ী), নিশিক্যাপ (ক্যাপসুল হাব্বে নিশাত), জেবিএল বয়জা (সেমিসলিড হালওয়া বয়জা) ও সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার নতুনপাড়ার গুডহেলথ ল্যাবরেটরিজের হাব্বে হায়াতীন মুরাক্কাব (ক্যাপসুল বাণিজ্যিক নাম লুমাটন), হাব্বে হায়াতীন মুরাক্কাব জওয়াহারদার ক্যাপসুল (বাণিজ্যিক নাম ইপিওজি), আরক আজীব (তরল) (বাণিজ্যিক নাম জি আজীব), কুরছ রিয়াহিন ক্যাপসুল (বাণিজ্যিক নাম জিএইচ ২০), মরহম আজীব (মলম) (বাণিজ্যিক নাম টাররাসিল) আইটেমের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ স্থগিত করা হয়েছে।

থেমে নেই নকল ও ভেজাল ওষুধের উৎপাদন : সাম্প্রতিকালে মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের চলমান অভিযানের ধারাবাহিকতায় ঔষধ প্রশাসন সারাদেশে এবং র‌্যারের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উদ্যোগে ওষুধ প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দেশব্যাপি বিভিন্ন জেলাশহরগুলোর ফার্মেসীসহ দেশের পাইকারি ও খুচরা ওষুধ মার্কেটগুলোতে অভিযান পরিচালনা করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঢাকা কলেজগেট, শ্যামলী, মিডফোর্ট, উত্তরা, বাড্ডা, গাজীপুর, খুলনা, যশোর, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, রংপুর, চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরসহ অন্যান্য জেলা। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে, বগুড়া জেলার ওষুধ শিল্পে তালিকাভুক্ত ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হারবাল কোম্পানীর মধ্যে ৩৪টি কোম্পানী থাকলেও ৬/৭টি কোম্পানী মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন করছে বলে জানা গেছে। বাকীগুলোর অবস্থা জাঁকজমক নকল-ভেজাল ও অবৈধ ওষুধ বাজারজাতের কল্যাণে। বিশেষ করে, রেমেক্স ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, কিউব ফার্মাসিউটিকাল ইউনানী, নিকো আয়ুর্বেদিক, জনতা ড্রাগ ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, কনফিডেন্স ফার্মাসিউটিকাল আয়ু, আরকে ইউনানী, এডল্যাব ফার্মাসিউটিকাল আয়ু, ইউনিজেম ফার্মাসিউটিকাল ইউনানী, ফেয়ার ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস ল্যাব: ইউনানী, বিজি ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, পিএম ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, নিরাময় ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, ফার্মাজেম ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, রেডরোজ ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, ইউনিকেয়ার বাংলাদেশ ইউনানী, ইউনিয়ন ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, উত্তরা ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, ইষ্টল্যান্ড ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, লিবারেট ল্যাবরেটরিজ আয়ু, দি ওরিয়েন্ট ল্যাবরেটরিজ আয়ু অন্যতম।
ময়মনসিংহের নকল ও ভেজালকারী মো. কামরুল ইসলাম যুবদল, বিএনপি ও সমন্বিত সড়ক পরিবহনের নেতা বলে পরিচয় দেয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কোম্পানীর লেভেল কার্টুন নকল করে ওষুধ উপাদন করে আসছে বলে সূত্র মতে জানা যায়। যার মধ্য রয়েছে জেসিআই, সবুজ ফার্মাসিউটিক্যাল, জেনিয়াল ইউনানী, প্রিভেন্টিস বাংলাদেশ ইউনানী, এমী ল্যাবলোটরী আয়ু, কনফিডেন্স ফার্মাসিউটিক্যাল (আয়ু), ভিগো ল্যাবলোটরী, একরাম ল্যাবলোটরীসহ বিভিন্ন কোম্পানীর ওষুধ, যা সরাসরি স্টার মেডিকেল হল, রনি মেডিকেল হল, জয়দের মেডিকেল হল, পারুল মেডিকেল হল, একতা ফার্মেসী, কামরুল মেডিকেল হল, সায়মন ড্রাগস, শিরিন মেডিকেল হল, গৌরঙ্গ বাজার কিশোরগঞ্জের উজ্বল হোমিও হলে সরাসরি বিক্রয় করছে, এছাড়া ময়মনসিংহের দূর্গাবাড়ি কামরুলের নিজের দোকান সৃজন ফার্মেসীতে সরাসরি নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা ঔষধ তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর মালিকগণ অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই।
রেমেক্স ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর জেলরেক্স, নুজাভিট-প্লাস, জিন্যাপ, আমরেক্স, ইরোক্যাপ, মেনোসেফ, ভিক্যাল-প্লাস, লিউসেইফ, ইরোক্যাপ, কনেক্স, টুগ্রেইন, ম্যাফাক্যাল, নিমটেক্স, ফেরোভাল, জাইভেন, আইপোমেট ও রেনসিড ওষুধ উৎপাদনে ক্ষতিকারক উপাদান ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। গত। ০৩/০৪/২০১৯ ইং তারিখ বগুড়ায় সাত মাথার খান মার্কেটের ৪র্থ তলায় কোম্পানীর গোডাউনে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ৭ লাখ টাকা মূল্যের যৌনবর্ধক ওষুধ ও অবৈধ ফুডসাপ্লিমেন্ট জব্দ করেন। তাছাড়া বিএসটিআই’র লোগো লাগিয়ে শ্যাম্পু ও সাবান বিক্রির অভিযোগে গোডাউন সিলগালা করে জরিমানা করেন। তারপরও রেমেক্স ল্যাবরেটরিজ এর পুরানো ব্যবসার কারসাজী এখনও বন্ধ হয়নি।
ফেয়ার ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর ৭টি ওষুধ জেনেরিক নামে অনুমোদন থাকলেও ট্রেড নামে বাজারজাত করছে এসিভিট, এ্যাকটিভিট, ফেবিটন, ফাইলেক্স, ফিউমা, সেব-প্লস, জিনসিন-এফ, নিশাত-এফ, পিওর-৩০, সাইট্রিনা, কাইলোসিন, ফাইলেক্স, জিজিটন, নিমটেক্স, মোকাব্বি ও আইরোফেন সিরাপ। কোম্পানীর মাজুন সুপারী প্যাক সেমিসলিড হলেও লিকুইড হিসেবে বিক্রির অভিযোগ ওঠেছে। তাছাড়া ক্যাপসুল-ট্যাবলেট উৎপাদনের অনুমতি না থাকলেও ভিটামিন ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। জিনসিন-এফ, নিমটেক্স, ফাইলেক্স, আতফাল, নিশাত-এফ, পাওয়ার-৩০, একটিভিট, ফেভিটন, সেব-প্লাস এর অনুমোদন না থাকলেও প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। গত ১৩/১১/২০২০ ইং তারিখ বগুড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফেয়ার ল্যাবরেটরীজের কারখানায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকার অবৈধ ও ভেজাল ওষুধ জব্দ করে ৩০ হাজার টাকা জরিমান করেন। ইতোপূর্বে সাবেক ড্রাগ সুপার ইকবাল হোসাইন প্রায় ১ লাখ টাকার অবৈধ ওষুধ জব্দ করে ২লাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন। মালিকানা পরিবর্তন ও নবায়নবিহীন কোম্পানীর কারখানা সিলগালা না করায় স্বঘোষিত কোম্পানীর মালিক বেলাল হোসেন ভেজাল। ব্যবসায় এখনও সক্রিয়।
কিউব ফার্মাসিউটিকাল ইউনানীর নাম ও প্রডাক্টের নাম। ড্রাগের ওয়েব সাইটে না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি বাজারজাত করছে। কিউভিট-প্লাস, এক্সেল-পাওয়ার, এ-টু-জেট ভিটামিন, আমলা-১০, ভিগার, গ্যাস্টোলিন, ভিড়াপেক্স, কিউ-ফ্রাম, ক্যাল-কিউ, জিনসিন, হাব্বে নিশাত, দিনার, কিউ-নুকরা, কিউ-রাল জি, কুড়চি ও কিউ-প্রোফেরন। প্রতিটি ওষুধের লেবেল-কার্টুনে হারবাল ভিটামিন, মিনারেল ও এ-টু-জেড লাগিয়ে বাজারজাত করছে। আর কিউভিট-প্লাস ও জিনসিন-এ ভিটামিন এ ও সি অভাবজনিত রোগের শ্লোগান দিয়ে যৌনবর্ধক ওষুধ বিক্রি করে আসছে।
ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস ল্যাবরেটরিজ ইউনানী প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইউ-প্লেক্স, আমলা, এনার্জী-গেইন, তুলশী, ম্যাক্স-গোল্ড বিক্রি করলেও এসব ওষুধ ট্রেডনামে। অনুমোদন নেই। এমনকি ড্রাগের ওয়েব সাইটে কোম্পানীর নাম ও প্রডাক্টের। নামের তালিকা না থাকলেও ২০ প্রকারের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতের। অভিযোগ ওঠেছে। ইউনিজেম ফার্মাসিউটিকাল ইউনানীর বাজারজাত করা। ইনোভিট-গোল্ড, ইউনিফেরন, জিনজেম-জিনসিন, স্টামিনা-৩, সেফজেম, ইউনিফোর্ট, ইউনি-এক্স, রুচিক্যাপ ও ইউনিক্যাল-ডি, নামের ওষুধে। ক্ষতিকারক উপাদান মেশানোর অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, ইউনিড়াগ ইউনানীর ইউনি-লাহাম ও ইউনিফেরন নামের ২টি ওষুধ নকল করে বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি নাকি সবার আগে এই ওষুধের অনুমোদন নিয়েছে। ড্রাগের ওয়েব সাইটের তালিকায় প্রডাক্টের নাম না থাকা। প্রসঙ্গে জানা গেছে, ইউনিকেয়ার ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর নামে প্রস্তাবনা আবেদিত হলেও প্রডাক্টের তালিকা আপগ্রেড করা হয়নি।
জনতা ড্রাগ ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর বাজারজাত করা ইউরোটিন, ইউনিটন, জে-ফেম, এক্সটাপ্লেক্স, ফেরিন, হানিলেক্স, অস্টোডি, হার্টেক্স, স্পীলীনা, মিল্ক-থিসল জিনসিং ওষুধের ছবি অনলাইনে প্রচার করে ডিলার নিয়োগ ও ওষুধ বিক্রির বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন কোম্পানীর এমপিও পারভেজ ও আরিফ। এ ধরণের অনলাইন প্রচারণা ড্রাগ আইনবহির্ভূত অপরাধ।
নিকো আয়ুর্বেদিক ল্যাবরেটরিজের বাজারজাত করা নিকোরোক্স-ডিএস, লিভোরিস্ট, নিকোফেম, ইনোমেট, নিকো-জিংক, নিকো-প্লেক্স, নিকোডেক্স ও ফিভাবিল নিয়ে নানা ধরণের বিতর্ক উঠেছে।
ইউনিয়ন ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর নিজস্ব প্রেস থাকায় বগুড়ার অধিকাংশ কোম্পানীর নকল লেবেল-কার্টুন ছাপিয়ে দিতেন। পরবর্তীতে র্যাব ও ডিবির অভিযানে অনৈতিক কর্মকা- বেরিয়ে আশে তবুও ইউনিফেরন, ইউনিসেব, ইউনিপেপ, ইউনিকফ, ইউ-জয়েন, লিভাটন বাজারজাত করছেন তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এসব ওষুধে ক্ষতিকারক উপাদান মেশানোর অভিযোগ ওঠেছে।
এডল্যাব ফার্মাসিউটিকাল আয়ুর ট্রেড নামের অনুমোদন না থাকলেও বাজারজাত করছে সিনোভিট-এ, জুম-এক্স, ইরোফোর্ড, এম-ট্যাব, ভিমাক্স-এন, এক্সকোর নামের ওষুধ। অপরদিকে রেডরোজ ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে সাবেক ড্রাগসুপার শফিকুর রহমান কারখানা সিলগালা করার পর প্রায় ৩ বছর যাবৎ মালিকানা পরিবর্তন ও নবায়ন ছাড়াই ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। বর্তমানে রংপুর ও দিনাজপুরে যেসব ওষুধ বিক্রি করছে তার অধিকাংশ ওষুধ ট্রেড নামের অনুমোদন নেই।
ইষ্টল্যান্ড ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, পিএম ল্যাবরেটরীজ ইউনানী একইভাবে নকল ভেজাল ও অনুমোদনহীন ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতে সক্রিয় রয়েছে।
উল্লেখ্য, এসব কোম্পানীর ওষুধ বগুড়া অঞ্চলে বিক্রি না হলেও নওগা, খুলনা, চিটাগাং, সিলেট, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও নারায়নগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে।