ক্ষিপ্রগতিতে বাড়ছে করোনা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

সর্বোচ্চ আক্রান্তের দিনে মৃত্যুও বেড়েছে

 

এম এ স্বপন : প্রথম ঢেউয়ের চূড়ার সময়কেও যেন ছাপিয়ে যাচ্ছে কোভিড সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি। দেশে প্রথমবারের মতো গত ৭ দিনে গড় আক্রান্ত ৪ হাজারের বেশি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে আগামী এক সপ্তাহ বেশ গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সতর্ক না হলে সামনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ কিছু। সংক্রমণের লাগাম টানতে রোগী শনাক্তে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। প্রয়োজনে আরো কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত আইইডিসিআরের।
দেশে কোভিড সংক্রমণ বাড়ছে ক্ষিপ্রগতিতে। বর্তমান পরিস্থিতি ছাড়িয়ে গেছে আক্রান্ত শনাক্তের আগের সব চিত্র।
এ দিকে মহামারি করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৫২ জন। যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৪৬ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫ হাজার ৩৫৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১১ হাজার ২৯৫ জনে। করোনাভাইরাস নিয়ে বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
কোভিডের প্রথম ঢেউয়ে সংক্রমণ চূড়া ছিল গত বছরের জুন-জুলাই মাস। প্রথম ঢেউয়ে রোগী শনাক্তে ৭দিনের সর্বোচ্চ গড় ছিল গত ২ জুলাই, ৩ হাজার ৮১১ জন। তবে এবার ছাড়িয়ে গেছে আগের সব রেকর্ড। সবশেষ ৭দিনের গড় শনাক্ত এখন ৪হাজার ৯।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করেন, প্রথম ঢেউয়ের চূড়ার সময়ের তুলনায় বর্তমানে পরীক্ষা হচ্ছে দেড়গুণ বেশি হারে। এতে আক্রান্তও হচ্ছে বেশি। তবে শঙ্কার বিষয় হলো লাফিয়ে বাড়ছে শনাক্তের হারও। মঙ্গলবার প্রতি ১০০ জনে আক্রান্ত শনাক্ত হন ১৯ জন। সম্ভাব্য সব ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কঠোরভাবে না নিলে আগামীতে পরিস্থিতি আরো অবনতির শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বিএসএমএমইউয়ের ভাইরোলজিস্ট ও সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দ্রুত রোগী শনাক্ত করে তাদের আইসোলেট করা এবং যে বাড়িতে থেকে রোগী শনাক্ত হচ্ছে সেই বাড়িটি হোম কোয়ারেন্টাইন করে আমরা যদি কাজ করি তাহলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, এবার করোনার ধরন অনবরত পরিবর্তন হচ্ছে, ভাইরাসের ট্রান্সমিশন বেড়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এখনই যদি এটাকে টেনে নামানো না যায় তাহলে আমরা সবাই আসলে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাব।
সংক্রমণের লাগাম টানতে সরকার যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে, তা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সক্ষমতাও প্রমাণ করতে হবে। আর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে আরো কঠোর সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দিচ্ছে আইইডিসিআর।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, দুই সপ্তাহ দেখে জনস্বার্থে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় কোনো কঠোর অবস্থানে যেতে হয় আশা করি বাংলাদেশ সরকার সেই সব পদক্ষেপ নেবে।
বিএসএমএমইউয়ের ভাইরোলজিস্ট ও সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যে নির্দেশ দেই সেই নির্দেশনা প্রতিফলিত হচ্ছে কিনা সেটার দিকে আমরা খুব বেশি নজর দেই না।
ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ দিন দিন চাপ বাড়াচ্ছে হাসপাতালগুলোতেও তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
সর্বোচ্চ আক্রান্তের দিনে মৃত্যুও বেড়েছে : মহামারি করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৫২ জন। যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৪৬ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫ হাজার ৩৫৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১১ হাজার ২৯৫ জনে।
করোনাভাইরাস নিয়ে বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ২ হাজার ২১৯ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪২ হাজার ৩৯৯ জন।
এর আগে মঙ্গলবার দেশে আরও ৫ হাজার ৪২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান আরও ৪৫ জন।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বুধবার সকাল পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ হাজার ৮৫৪ জন। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন মোট ২৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৫ জন।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৫ লাখ ৪০ হাজার ৭১৩ জন। এ নিয়ে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১২ কোটি ৮৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫৮ জন। এছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার ১৫৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ১৩৮ জনের।
আক্রান্তে ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ২৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৮ জন এবং মারা গেছেন ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৩৬ জন।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ২১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৮৭ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৬২ হাজার ৫০২ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৫ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৯৫ হাজার ৩৩৭ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪৫ লাখ ৩৬ হাজার ৮২০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯৮ হাজার ৪৪২ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় যুক্তরাজ্য ষষ্ঠ, ইতালি সপ্তম, তুরস্ক অষ্টম, স্পেন নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে আছে। এছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।


বিজ্ঞাপন

 

 

👁️ 6 News Views