পৌত্তলিক ভারতে ছড়িয়ে পড়ল ইসলামের আলো

অন্যান্য

নিজস্ব প্রতিনিধি : সিন্ধু উপকূলের রাজা দাহিরের নৌ ডাকাতেরা আরবদের সবকিছু লুট করে নিল। নারী শিশুসহ বন্দী করল সবাইকে। নির্যাতিতা আরব কন্যা নাহিদ রক্ত দিয়ে চিঠি লিখলেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এর কাছে। আর্তনাদ ও উদ্ধারের আবেদন নিয়ে হাজ্জাজের কাছে রওয়ানা হল যুবায়ের নামে এক অভিযাত্রী। খবর শুনে আগুনের মতো জ্বলে উঠলেন হাজ্জাজ। শপথ নিলেন রাজা দাহির কে উচিত শিক্ষা দিতে।


বিজ্ঞাপন

অথৈ সাগর বিস্তার দূরত্ব দুর্গম পথ আর খলিফা ওলিদ ইবনে আব্দুল মালিকের বিরোধিতা সত্ত্বেও অত্যাচারী সিন্ধু রাজের বিরুদ্ধে শুরু হলো লোহমর্ষক অভিযান।

কিন্তু অপরিচিত ভারত আর বিশাল পৌত্তলিক শক্তির কাছে পরপর ব্যর্থ হলো দুটি অভিযান। শাহাদাত বরণ করলেন দুটি সেনাপতি সহ অসংখ্য মুজাহিদ।

অবশেষে নিজের ভাইপো ও জামাতা মাত্র ১৭ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইবনে কাসিম কে সেনাপতি করে অপরাজেয় সিন্ধু রাজের বিরুদ্ধে পাঠালেন হাজ্জাজ। বিপুল শক্তির অধিকারী সিন্ধু রাজের বিরুদ্ধে এক কিশোর সেনাপতি.. ।

নির্ভীক চিত্তে বিজয়ের কঠিন সংকল্প নিয়ে শুরু হলো মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু অভিযান। শুরু হলো একের পর এক কঠিন নিরাপত্তা বলয়ে বেষ্টিত বিধর্মীদের দূর্গ দখল, আরব মিনজানিক যন্ত্রের সামনে টিকতে পারল না পৌত্তলিক শক্তি। রনাঙ্গনে পৌত্তলিক দাহির বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠিন যুদ্ধ হলো, জয় হলো মুসলিমদের। দাহিরের ছিন্ন মস্তক পাঠানো হলো খলিফার কাছে।

মুহাম্মদ বিন কাসিমের ব্যবহার ও উদারতায় দলে দলে পৌত্তলিকরা আশ্রয় নিল ইসলামের ছায়াতলে, পৌত্তলিক ভারতে ছড়িয়ে পড়ল ইসলামের আলো।

কিন্তু মুহাম্মদ বিন কাসিমের ভাগ্য তারা দ্রুত উত্থানের সাথে সাথে দ্রুত অস্ত যেতে চলেছিল। ভারতে অবস্থানের সময় মারা গেলেন আপন চাচা ও শ্বশুর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, অল্প সময়ের ব্যবধানে মারা গেলেন খলিফা ওলিদ ইবনে আব্দুল মালিক। খলিফা হলেন ওলিদ ইবনে আব্দুল মালিকের ভাই সুলাইমান।

ব্যক্তিগত রাগে রক্ত পিপাসু সুলাইমান নির্দেশ দিলেন মুহাম্মদ বিন কাসিম কে গ্রেফতার করে তার কাছে নিয়ে যেতে। সিন্ধু বিজয়ী, পৌত্তলিক ভারতে ইসলামের আলো প্রজ্জ্বলকারি, অসংখ্য মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা, লক্ষ লক্ষ বঞ্চিত নিপীড়িত মূর্তিপূজার অন্ধকারে থাকা ভারতবাসীকে তাওহীদের পথ নির্দেশকারি, ইতিহাসের ক্ষণজন্মা কিশোর সেনাপতি অধোবদনে হাতকড়া পরানোর জন্য দুই হাত প্রসারিত করে দিলেন। মুসলিমদের বিভক্ত হয়ে যাওয়ার ভয়ে ইসলামের স্বার্থে স্বেচ্ছায় গ্রেফতার হলেন মুহাম্মদ বিন কাসিম।

খলিফা সুলাইমান, সালিহ ইবনে আব্দুর রহমান নামক এক খারেজি কে ধারালো তরবারি দিয়ে মুহাম্মদ বিন কাসিম কে মারার জন্য পাঠালেন। বিন কাসিম সর্বশেষ আফসোস করে বলেন, হে সময়! বড়ো দুঃখ হয়; তুই মর্যাদাবানদের প্রতি খুবই অবিশ্বস্ত।

যে বীর ইসলামের শত্রুদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিতেন, সেই বীর সেনানী নির্মমতার শিকার হয়ে স্বজাতির গাদ্দারদের হাতে মাত্র ২২ বছর বয়সে নিহত হলেন। শহিদ হলেন সিন্ধু বিজয়ী ইতিহাসের ক্ষণজন্মা কিশোর সেনাপতি মুহিউদ্দীন মুহাম্মদ বিন কাসিম। ভারতের জমিনে চমকে দিয়েছিল যে সিতারা সে হঠাৎ নিভে গেল।

উমাইয়া খলিফা সুলাইমান শুধুমাত্র সিন্ধু বিজয়ী মুহাম্মদ বিন কাসিম কে শহিদ করেনি, চীন বিজয়ী সেনাপতি কুতাইবা বিন মুসলিম, স্পেন বিজয়ী সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ ও মূসা বীন নুসায়ের সহ অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষদের হত্যা করেছেন।‌