রক্ত নদী ধলেশ্বরী

বিবিধ

যুগল ইসলাম : চারদিকে থৈথৈ পানি মাসটি ভাদ্র, আবহমান বাংলায় এ মাসটি খুব গরম আবহাওয়া বিদ্যমান,গ্রামের নাম নতুন সোনাকান্দা কেরানীগঞ্জ থানার পশ্চিম কোণে এ গ্রামটির অবস্থান, পাশেই ধলেশ্বরী নদীর অববাহিকা, অশান্ত নদী বহে সেখানে ঢেউ খেলানো চমৎকার উপলব্ধি যেন নতুন কিছু প্রলোভনে আকৃষ্ট করেছে। আমার দাদি ছিলেন পরহেজগার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন তিনি আমাকে সব সময় কিছু না কিছু ইতিহাস বলে ঘুমিয়ে পড়াতে সহায়তা করতেন, আমার দাদা খুব কর্মঠ কৃষক ছিলেন আমার আব্বা চাচা মিলে তার দুই সন্তান কিন্তু কখনো তাদেরকে কাজ করতে দিতেন না, বাড়িতে অনেক গুলো গাভী গরু ছিল এগুলোর খাবার জোগান দিতে প্রায়শই দাদা( মুনি) কামলা নিয়ে কচুরিপানার ঘাস কাটতে যেতে হতো পাশের নদীর তীরে, নদীতে অনেক লাশের সারি দেখতে পেতেন সেই মর্ম কাহিনি বাড়িতে ফিরে দাদী এবং অন্য সবাইকে বলতেন এর মধ্যে আব্বা মুক্তি যোদ্ধায় অংশ গ্রহণ করতে তখন আগরতলা ট্রেনিং এ দাদা আব্বার খোঁজ খবর তার বন্ধুদের নিকট নিতেন মোস্তফা মহসিন মন্টু সাহেবের বাড়িতে দাদা আসা যাওয়া করতেন, এ নিয়ে দাদি খুব চিন্তা করতো কিন্তু দাদা সব সময় সাহস যোগাতেন বলতেন সোলেমান ঠিকই আসবে বীরের বেসে, সারা রাত গ্রামের কেউ তেমন একটা ঘুম আসতোনা পাহারা দিয়ে কাটাতো গ্রামের মানুষ গুলো, দুশ্চিন্তা আর ভয়ের মধ্যে দিন পার করেছে কোন রকমে,এর মধ্যে লোকজনের খাবারের সংকট দেখা যায় আমাদের পরিবারের সংখ্যা কম হওয়ায় খাবার উবৃত্ত থাকতো,তাই আমার দাদি আমাদের গ্রামের প্রত্যেক পরিবার কে গোলা থেকে ধান সামগ্রী দিতেন যাতে মানুষ খেয়ে পরে বাঁচতে পারে। এভাবেই কেটে গেল কয়েকমাস উৎকন্ঠা ভীতি নিয়ে গ্রামের মানুষ গুলো অতি কষ্টে অতিবাহিত করে, এর মধ্যে রাজাকার বাহিনীর উৎপাত আব্বা কোথায় গেছেন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো দাদা দাদিকে, দাদি বলেছিলেন সোলেমান ( আমার আব্বার নাম) ওর নানার বাড়িতে চলে গেছে, তারপরও অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তারমধ্যে আমার কাকার খবর টা রাজাকাররা ঠিক সময় রাখতো,১৯৭১ নভেম্বর শেষের দিকে হটাৎ মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গ্রামে অবস্থান নেয়, ধলেশ্বরী নদী দিয়ে প্রায়শই লঞ্চ নিয়ে দোহার নবাবগঞ্জ ও ফরিদপুরের কিছু অংশে চলাচল করতো পাকিস্তানি বাহিনী, সেটাই মূলত অত্র এলাকার মুক্তি যোদ্ধাদের নজরে আসে এজন্যই অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল আমাদের গ্রাম থেকে, সেজন্য আশেপাশের জেলা উপজেলার মুক্তিযুদ্ধারা সৈয়দপুর সোনাকান্দা অপারেশন নামে একটি যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন, একপাশে কেরানীগঞ্জের নতুন সোনাকান্দা অপর পাশে সিরাজদিখানের সৈয়দপুর
এপ্রান্তে নতুন সোনাকান্দার পাগলার বাড়ির খালের ধনচে খেতের ভিতর মুক্তিযুদ্ধারা আড়িপেতে থেকে যুদ্ধের শুরু করেন পাকবাহিনীর লঞ্চ নিমিষেই গোলাগুলিতে নিমজ্জিত করতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু পাকবাহিনীর একট দল আমাদের গ্রামের দিকে ঢুকে পড়ে আর নতুন সোনাকান্দা সহ পোড়া হাটি সহ পুরো গ্রামটি আগুন লাগিয়ে ঘর বাড়ি সব পুরিয়ে দিয়েছিলো,এতে গ্রামের মানুষ গুলো অতি কষ্টে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয়েছে, দাদি এতো সুন্দর করে আমাকে বর্ননা দিয়েছেন যা আমাকে আবেগ আপ্লূত করেছে, ওনি যখন কাঁদতে কাঁদতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করেছেন তা যেন একজন মুক্তিযুদ্ধা মা” ই বলতে পারেন, দাদি প্রায় দুই মাস রোজা রেখেছেন এমনকি গ্রামের সব মানুষ বঙ্গবন্ধুর জন্য রোজা রেখেছেন কারন তখন সবাই জানতো বঙ্গবন্ধু জীবিত নেই, আমার দাদি ছিলেন খুব বুদ্ধিমতী মহিলা,বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে অনেক কথা আমি তার মুখে শুনেছি। ওই যুদ্ধে অনেক অজানা লোক শহীদ হয়েছেন,ধলেশ্বরী নদীতে অনেক রক্ত মাখা লাশ উদ্ধার হয়েছে তারমধ্যে পাকবাহিনীর লাশ ও ছিলো, নতুন সোনাকান্দা গ্রামটিতে হাহাকার কাজকর্ম হীন জীবন নিয়ে মানুষের চিত্র কাহিনি অসম্ভব অস্থির মর্মান্তিক, ৭১ বিজয় এখনো নিঃশব্দে খুব বেশি কাঁদিয়ে বেড়ায় এই এলাকার জনপদ, তারপরে পরবর্তী তে কেয়ার কোম্পানি এই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে একটি করে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তৎকালিন এমপি বোরহান উদ্দিন আহমেদ গগন তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব দেয়া হয় মুক্তি যোদ্ধা সোলেমান সাহেবের নিকট, যা এলাকার লোকজন সবাই জানে,এরই সুত্র ধরে আমার আম্মা মনোয়ারা বেগম মিলন ১৯৯৬ সালে সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিল। তাই আমার ক্ষুদ্র পান্ডুলিপি হতে উক্ত লেখা লিখতে পারাটা ভাগ্যের ব্যপার, আজীবন লালিত স্বপ্ন দেখেছেন বঙ্গবন্ধু, যাতে বাংলাদেশের মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করেন,জীবনের অধিকাংশ সময়ে তিনি জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন শুধু এদেশের আপামর জনসাধারণ এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে, খুব ভালো বেসেছিল এদেশেকে এদেশের মানুষ গুলো কে, তার প্রতিদান আমরা দিতে পারিনি, আজীবন লালিত স্বপ্ন দেখেছেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সোনার বাংলা রুপ নিবে,সে দায়িত্ব বোধ করি বঙ্গবন্ধুর তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন, জয়তু শেখ হাসিনা, আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘ জীবি করুন,, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকুক প্রতি টি মানুষের অন্তরে এটাই একমাত্র কামনা।বাংলাদেশ বিনির্মানে বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ অপরিসীম, তার দেশপ্রেম প্রেরণায় বিশ্বের বিস্ময়! অনেক নেতা লেখক মনিষী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কর্ম নিয়ে গৌরব গাঁথা কাব্য সমাহার রচনা করেছেন,আর এর লেখা পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন চলবে,ইনশাআল্লাহ, কৃতি মানের মৃত্যু নেই।


বিজ্ঞাপন