নকল ওষুধ কুরিয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সারা দেশে

এইমাত্র জাতীয় স্বাস্থ্য

ওষুধ কেনার আগে ইনভয়েস দেখার পরামর্শ

 

বিশেষ প্রতিবেদক : দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যান্ডের নকল ওষুধ প্রস্তুত করে কুরিয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সারা দেশে। সাধারণ ভোক্তা বোঝার কোনো উপায় নেই, তিনি আসল না নকল ওষুধ কিনছেন। শনিবার মিটফোর্ড কেন্দ্রিক নকল ওষুধ প্রস্তুতকারী চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ভেজাল ওষুধ।
বহুল প্রচলিত গ্যাসের ওষুধ ওমিপ্রাজল বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা বিদেশি রং ফর্সাকারী ক্রিম বা ব্যথা কমানোর ওষুধ মুভসহ আরও অনেক ওষুধ তারা তৈরি করছেন। বোঝার উপায় নেই, দেখতে হুবহু আসলের মতো। তবে আদতে সবই নকল। শনিবার ডিবির লালবাগ বিভাগ অভিযান চালিয়ে ১৬ ধরনের বিপুল পরিমাণ ওষুধ জব্দ করেছে। গ্রেপ্তার করা হয় মিটফোর্ড কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা ভেজাল ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাতকরণ চক্রের তিন সদস্যকে।
রোববার ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহাবুব আলম সাংবাদিকদের জানান, আটক তিন জনেরই রয়েছে একাধিক গোডাউন ও ফার্মেসি। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার ফার্মেসিতে চাহিদার ভিত্তিতে বাজারজাত করে আসছিল তারা। মো. মাহবুব আলম বলেন, শনিবার অভিযানে তিন সরবরাহকারীসহ প্রচুর পরিমাণে নকল ওষুধ জব্দ করা হয়। অভিযানে আই-পিল, নেপ্রোক্সিন প্লাস ৫০০+২০০ এমজি, বেটনোভেট-সি, প্রোটভিট ২০সহ বিভিন্ন রোগের নকল ওষুধ জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, সব থেকে বড় কথা হচ্ছে জনগণ যে এসব ভুয়া ওষুধ খেয়ে প্রতারিত হচ্ছে, সেখানে জনগণেরও একটি সচেতনতার দায়বদ্ধতা আছে। যেসব দোকানে ওষুধ বিক্রি হয় সেসব দোকানে ওষুধের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও বৈধ ওষুধের তালিকা ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেওয়া থাকে। ওষুধ কিনতে যাওয়ার সময় এসব তালিকা দেখার অধিকার সাধারণ ক্রেতাদের আছে। এছাড়া কোম্পানি ইনভয়েস প্রতিটি ফার্মেসিতে থাকে। ওষুধ বিক্রির সময় কোম্পানিগুলো এই ইনভয়েস ফার্মেসিগুলোকে দেয়। নকল ও ভুয়া ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে ফার্মেসিতে গিয়ে ক্রেতাদের অবশ্যই তালিকাগুলো দেখা উচিত। ইনভয়েস না দেখে ওষুধ কেনা উচিত নয়।
তিনি আরও বলেন, যারা নকল ওষুধ বিক্রি ও উৎপাদন করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। সামনে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ইউনানি ও হোমিওপ্যাথির লাইসেন্স নিয়ে যারা অবৈধ ওষুধ তৈরি করছে তাদের তালিকা আমরা তৈরি করেছি। তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সরবরাহকারী নাকি প্রস্তুতকারী জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিটফোর্ড এলাকায় তারা পাইকারি ওষুধের ব্যবসা করে। সেখান থেকে তারা সারা দেশে ভেজাল ওষুধ সাপ্লাই করে। যারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত আছে তাদেরও তালিকা করছি। আমাদের তালিকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরবরাহকারী বা উৎপাদনকারী সবাইকে আমরা তালিকাবদ্ধ করছি। ভেজাল ওষুধ তৈরি বন্ধ কেন করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার বলেন, বন্ধ হচ্ছে না বিষয়টি এমন নয়। এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। আমাদের পাশাপাশি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরও ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে।
মিটফোর্ডে এলাকা থেকে যারা সারা দেশে নকল ওষুধ পাঠাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে এবং সামনের দিনগুলোতেও অভিযান চলমান থাকবে। দেশে কয়টি প্রতিষ্ঠান ইউনানি লাইসেন্স নিয়ে নকল ও অবৈধ ওষুধ তৈরি করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের তালিকা অনুযায়ী প্রায় ৫০টির মতো রয়েছে। এগুলো অনেক সময় দেখা যায় বন্ধ থাকে। কিন্তু রাতের আঁধারে কারখানা খুলে তারা কার্যক্রম চালায়। পরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এ ওষুধ তারা সারা দেশে পাঠিয়ে দেয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ নাঈম গোলদার বলেন, অভিযানে জব্দ করা ওষুধের মধ্যে বেশিরভাগ হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন বিহীন ভেজাল ওষুধ। এর মাঝে একটি ওষুধ হচ্ছে পিডিএকটিন যা অনেক আগেই ব্যান করা হয়েছে। মানুষ কীভাবে ভেজাল ওষুধ চিনতে পারবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রারকৃত সকল ওষুধের লিস্ট আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে, সেখান থেকে জনগণ এ বিষয়ে জানতে পারে। আর জনগণকে অবশ্যই ইনভয়েস নম্বর দেখে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে হবে। ইনভয়েস নম্বর হলো ওষুধের সার্টিফিকেট। যে কোম্পানি থেকে ওষুধ ক্রয় করা হয় সে কোম্পানির ইনভয়েস ওষুধ ফার্মেসিকে সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে ফার্মেসিগুলো চাপের মুখে থাকবে। এতে নকল ওষুধের চাহিদা তারা দেবে না।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নাঈম গোলদারের দাবি, জনবল সংকটের পরও বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করছেন তারা।
তবে বাজারে নকল ওষুধের সরবরাহ কেন বন্ধ হচ্ছে না মেলেনি সেই প্রশ্নের সদুত্তর।
ভেজাল ওষুধ খেয়ে কিডনি বা লিভার জটিলতাসহ নানা সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা। তাই ফার্মেসি থেকে কেনার সময় ওষুধ প্রশাসনের রেজিস্টার্ড নম্বর দেখে নেওয়ার পরামর্শ পুলিশের।


বিজ্ঞাপন