মুল ফটক থেকে শুরু হয় বাণিজ্য

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয় সারাদেশ

কারাগারে এগারো খাতে প্রতিদিন আয় লাখ টাকা

ইসমাঈল হুসাইন ইমু : কারাগারের মূল ফটক থেকে ভেতরে সব মিলিয়ে প্রতিদিন লাখ টাকার বাণিজ্য হয়। বেশি হয় সকাল আটটার আগে এবং বিকেল পাঁচটার পরে।
বন্দীর সঙ্গে সাধারণ সাক্ষাৎ, বিশেষ সাক্ষাৎ, হাসপাতালে থাকা, আসামির জামিন, বন্দী রোগী বাইরের হাসপাতালে পাঠানো, পুনরায় গ্রেপ্তার, খাবার বা টাকা পাঠানো, মালামাল তল্লাশি, মোবাইলে কথা বলা, ভাল সিট পাওয়াসহ বিভিন্ন খাতে বন্দিদের টাকা গুনতে হয়। ভিআইপি বন্দিদের ক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকা আর সাধারণ বন্দিরে কাছ থেকে দর কষাকষি করে যায় পাওয়া যায়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের প্রায় সব কারাগারেই একই অবস্থার কথা জানা গেছে। বিশেষ করে বিভাগীয় কেন্দ্রীয় কারাগারেই বেশি বাণিজ্যের খবর পাওয়া গেছে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৯ জুলাই থেকে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এখানে প্রায় সাত হাজার বন্দী রয়েছে। সপ্তাহের প্রতি কর্মদিবসে এখানে এক হাজারের বেশি সাক্ষাৎ প্রার্থী আসেন। টাকা দিয়ে কেন এ সুযোগ নেন জানতে চাইলে হাজতি ও কয়েদিদের স্বজনেরা বলেন, স্বজনকে একটু দেখলে ভালো লাগে। টিকিট কেটে দূর থেকে ছায়াও দেখা যায় না, কথাও বলা যায় না। তারা জানান, ভেতরে ভাল খাবার পাঠানো বা টাকা পাঠাতে হলেও মোটা অংকের কমিশন দিতে হয় কারাক্ষীদের। এছাড়া কারাগার স্থানান্তরের জন্যও মোটা অংকের টাকা দিতে হয়।
বেশকিছুদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে আসা একজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, যেকোন একটি মামলা তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। ওইদিন বিকেলে কারাগারে নেয়া হলে আমাদানিতে রাত্রিযাপন শেষে সকালে রাইটাররা তাকে কে কোন ওয়ার্ডে নেবেন তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরমধ্যে কয়েদিদের কেউ কেউ জানতে চান ভাল টাকা পয়সা দিতে পারলে ভাল থাকতে পারেবন। আবার একজন বলেন, রাইটারের সঙ্গে তাল মিলেয়ে তাকেন ভাল থাকবেন। না হলে সাধারন বন্দি (চোর, ছিনতাইকারি ও হত্যা মামলার আসামীরা) আপনাকে শুতেও দেবেনা। এছাড়া কারাগারের খাবারের মান ভালনা। তাই টাকা খরচ করলে ভাল খাবার সরবরাহ করা হবে। এসব কথা শুনে তিনি রাজী হন। পরে তাকে একটি ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। সেখানে অনেক বন্দির মধ্যে তাকে আলাদা একটি সাদা বিছানার চাদরে ঢাকা বিছানায় বসতে বলা হয়। এরপর জানতে চান মামলার অবস্থা। তিনি বলেন, ততক্ষণে তিনি বুঝতে পারেন সহজে জামিন হবেনা এমন মামলার আসামীদেরই এরা বেশি তদারকি করেন। কারণ বেশিদিন ধরে একজনের কাছ থেকেই টাকা আয় করা যাবে। এছাড়া মোবাইলে কথা বলা, পোশাক আনানো ও বাইরের খাবার আনা নেয়ার জন্য টাকা দিলেই মিলতো সবই।
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এসব অনিয়ম কিছুটা ছিল, ব্যবস্থাপনায় সমস্যা ছিল। কিন্তু কেরানীগঞ্জে এ ধরনের কোনো অনিয়ম বা বাণিজ্য নেই। বিশেষ করে মাদক বা সাক্ষাৎকার নিয়ে কোনো বাণিজ্য হচ্ছে না। উচ্চপর্যায়ের নজরদারি রয়েছে। তবে দুএকটি ঘটনা থাকতে পারে।


বিজ্ঞাপন
👁️ 7 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *