সাটুরিয়ার চাঞ্চল্যকর এসিড নিক্ষেপ মামলার একমাত্র আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

অন্যান্য এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ গত ২৯ জানুয়ারি, ১ টা ১০ মিনিটের সময় মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন ভিকটিম সাথী আক্তার (২৫) নামের এক নারী এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়।


বিজ্ঞাপন

এসিডে ভিকটিম সাথীর মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে, সাথীর ছোট বোন ইতি আক্তার (৮) ও মা মোছাঃ জুলেখা বেগম (৩০) এর শরীরের বিভিন্নস্থানে ঝলসে যায়।

সাথী সহ তার পরিবারের লোকজনের চিৎকার-চেঁচামেচিতে আশপাশের লোকজন এসে হাজির হয় এবং সাথীকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।


বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে সাথীর অবস্থা অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করা হয়। বর্তমানে সাথী অ্যাসিডে ঝলসানো মুখ ও শরীর নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


বিজ্ঞাপন

উক্ত ঘটনায় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস্ মিডিয়াসহ এলাকায় ব্যপক চাঞ্চ্যল্যের সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রæতিতে র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যারের গোয়েন্দা তথ্য ও স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে জানা যায়, উক্ত হত্যার মূল অভিযুক্ত নাঈম মানিকগঞ্জ সদর থানাধীন সাকরাইল এলাকায় অবস্থান করছে।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার ১ ফেব্রæয়ারি ৫ টা ১০ মিনিটের সময় মানিকগঞ্জ সদর থানাধীন সাকরাইল বাজার এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চাঞ্চল্যকর এসিড সন্ত্রাস মামলার একমাত্র আসামী মোঃ নাঈম মল্লিক (৩০), জেলা-মানিকগঞ্জ’কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী’কে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বিগত আড়াই বছর পূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ নাঈম মল্লিকের সাথে সাথী আক্তার (২৫) এর বিবাহ হয়।

বিয়ের পর হতে সাথী বুঝতে পারে যে নাঈম প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তখন থেকেই ভিকটিম সাথী আক্তার নাঈমকে ভালভাবে চলাফেরা করার জন্য বলে এবং অনৈতিক কর্মকান্ডে বাধা প্রদান করে।

এর ফলে নাঈম ক্ষিপ্ত হয়ে সাথীর সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে এবং সাথীকে বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে। গ্রেফতারকৃত আসামী সাথীর ভরণ-পোষন বন্ধ করে দেয় যার প্রেক্ষিতে সাথী বাবার বাড়ীতে আশ্রয় গ্রহণ করে।

এই ঘটনায় উভয় পক্ষের মুরুব্বিদের মাধ্যমে একাধিকবার সালিশের আয়োজন করে মিমাংসা করে দেওয়া হলে তারা আবার সংসার শুরু করে।

কিন্তু নাঈম মরুব্বিদের দেওয়া শর্ত না মেনে সাথীর সাথে পূর্বের মত একই রকম আচরণ করতে থাকে। এর ফলে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে সাথী গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে নাঈমকে তালাক নোটিশ প্রেরণ করে।

তালাক নোটিশ পাওয়ার পরপরই আসামী নাঈম ক্ষিপ্ত হয়ে সাথীকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশসহ নানান রকম ভয়-ভীত ও হুমকি প্রদান করতে থাকে।

একপর্যায়ে গত ২৯ জানুয়ারি, রাত আনুমানিক ১ টার সময় আসামী নাঈম ভিকটিম সাথীর বাবার বাড়িতে গিয়ে সাথীর শয়ন কক্ষের জানালা দিয়ে এসিড ছুড়ে মারে।

নাঈমের ছোড়া এসিড সাথীর মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে, সাথীর ছোট বোন ইতি আক্তার (৮) ও মা মোছাঃ জুলেখা বেগম (৩০) এর শরীরের বিভিন্নস্থানে লাগে। নাঈম এই ঘটনার পর দৌড়ে পালানোর সময় ভিকটিম সাথীর মা জুলেখা বেগম জালানা দিয়ে নাঈমকে দৌড়ে চলে যেতে দেখে। ঘটনার পরপরই আসামী নাঈম আত্মগোপনে চলে যায়।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার এড়াতে সে ছদ্দবেশে সময়ে সময়ে স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। প্রচন্ড শীত থাকায় শীতের পোশাক পরে মাথা ও মুখমন্ডল ঢেকে পরিচয় গোপন করার কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কাছে উক্ত এসিড সন্ত্রাসের সাথে গ্রেফতারকৃত আসামী সরাসরি জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য সাটুরিয়া থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এই ধরনের নৃশংস অপরাধীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের জোরালো অভিযান অব্যাহত থাকবে।

👁️ 16 News Views