ডলার সঙ্কটে কাপছে অর্থনীতির ভীত

Uncategorized অপরাধ আন্তর্জাতিক

কুটনৈতিক প্রতিবেদক ঃ করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। একের পর এক আঘাতে মারাত্মক হুমকির মুখে পরছে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো। দেউলিয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কা। ভারত, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ লাগাতার হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার এবং ভারতের রিজার্ভ কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৬০০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।

কেন এই সঙ্কট তা বিশ্লেষণ করা যাক। মূলত মহামারির পরপরই বিশ্ব বাজারে ভোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘ সময় থমকে থাকা অর্থনৈতিও চলমান হতে শুরু করে। বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ শুরু করায় দেখা দেয় কাঁচামালের জোগান সংকট। আর জোগানের চেয়ে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় হু হু করে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি সকল ধরনের পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়াতে আমদানি রপ্তানিতেও হঠাত করে গতি আসে। আর এই চাপ সামাল দিতে গিয়ে বৃদ্ধি পায় কন্টেইনার ভাড়া।

এর উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে তলানিতে থাকা জ্বালানি তেলের দাম পৌঁছেছে চড়ম উচ্চতায়।
আর এই সকল আঘাত এসে পরছে আমদানি নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোর উপর।
প্রথমত আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বানিজ্য ঘাটতি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপর দিকে অধিক দামে জ্বালানি ক্রয়ের ফলে অতিরিক্ত চাপ পরছে রিজার্ভ এর উপর।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি একটু বিবেচনা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলারের মতো।

এ বছর বাংলাদেশ আনুমানিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করবে। সুতরাং বাংলাদেশের রিজার্ভ হওয়ার কথা ৫০+৫০=১০০ বিলিয়ন ডলার। কিন্ত বাংলাদেশের রপ্তানির চেয়ে আমদানি করে আরো বেশি। এ বছর আমদানির পরিমাণ ৮০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এত বেশি পরিমাণ আমদানির কারণ হচ্ছে তৈরি পোশাকের বিভিন্ন কাঁচামাল ক্রয় করতে হচ্ছে অধিক দামে, কন্টেইনার ভাড়াও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়াও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি ডলার খরচ হচ্ছে, সয়াবিনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত ডলার ব্যয় হচ্ছে। ১০ বিলিয়ন ডলারে যে জ্বালানি তেল ও ভোজ্য তেল আমরা ক্রয় করতে পারতাম সেখানে ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হচ্ছে। অর্থাত সমপরিমাণ পন্য ক্রয়ের জন্য দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

তাই দেশে রপ্তানির মাধ্যমে ৫০ বিলিয়ন ডলার ঢুকলেও বেড়িয়ে যাচ্ছে ৮০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাত অতিরিক্ত ৩০ বিলিয়ন ডলার চলে যাচ্ছে। এই ৩০ বিলিয়ন ডলারই বানিজ্য ঘাটতি। সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে জোগান দিচ্ছে। অর্থাত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বানিজ্য দায় মিটিয়ে বছর শেষে ২০ বিলিয়ন ডলারে নামার কথা। তবে তেমনটা হচ্ছেনা।
কারণ আরো বিভিন্ন উপায়ে ডলার দেশে ঢুকছে। প্রথমত রেমিটেন্স। রেমিটেন্স এর মাধ্যমে প্রায় ২০-২৫ বিলিয়ন ডলার আসতে পারে। তবুও বছর শেষে ৫-১০ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি থাকছে। সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে পরিশোধ হবে। এর জন্যই মূলত রিজার্ভ কমে আসছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত আমদানির পরিমাণ কমাতে হবে। পাশাপাশি এফডিআই (ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) এর ব্যবস্থা করতে হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আসলে দেশে ডলার ঢুকবে। ফলে রিজার্ভ বাড়বে।
আর রপ্তানি পন্যের কাঁচামাল, জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, জরুরী পন্য আমদানি বন্ধ করা যাবেনা। তবে কিছু পন্য আছে যেগুলো আমদানি দ্রুত বন্ধ করতে হবে কিছু সময়ের জন্য। যেমন: ফ্রিজ, টেলিভিশন, এসি, বৈদ্যুতিক পাখা, বিভিন্ন হোম এপ্লায়েন্স, বিলাসবহুল গাড়ি, তৈরি পোশাক। এসকল পন্য বাংলাদেশ নিজেই তৈরি করতে পারে। তাই এসকল পন্য আমদানি আপাতত কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা দরকার। তাহলে বানিজ্য ঘাটতিতে লাগাম টানা যাবে। পাশাপাশি ভোগ্য পন্যের প্রতি রুচির পরিবর্তন জরুরি। এবং কৃষি পন্য উৎপাদনেও বৈচিত্রায়ন জরুরি। যেমন সরিষার তেল উৎপাদনে মনোযোগী হওয়া। সকল ধরনের খাদ্যে সয়াবিনের ব্যবহার না করে বিভিন্ন খাদ্যে সরিষার ব্যবহার করলে বেশি পরিমাণে সয়াবিন আমদানি করতে হবেনা। এরকম বিভিন্ন উপায়ে আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে।
অনেকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পতনের জন্য মুখিয়ে আছে। কেন সেটা জানিনা। যেমনি অনেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য মুখিয়ে ছিল। এখন সকল ধরনের পন্যের মূল্য দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করুন। নিজের স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকে গুরুত্ব দিন।


বিজ্ঞাপন
👁️ 6 News Views