আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে বাংলাদেশের সামরিক মাসেল পাওয়ার বৃদ্ধি এখন অপরিহার্য

Uncategorized আন্তর্জাতিক


সামরিক বিশ্লেষক ঃ শান্তিতে থাকতে গেলে মাসেল পাওয়ার দরকার। এমন নয় যে ক্ষমতা চর্চা করতে হবে।শুধুমাত্র এই বার্তা ছড়ানো দরকার যে যদি কেউ ঝামেলা চায় তবে সে সত্যিকার অর্থেই ঝামেলা পাবে।
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে বাংলাদেশের সামরিক মাসেল পাওয়ার বৃদ্ধি এখন অপরিহার্য। এর কারন হল, ইকোনমিক শক্তির পথ অনুসরন করে সামরিক শক্তির বিকাশ অতটা হয়নি। এখনো সামরিক এসেটস বিবেচনায় বার্মার সাথে বাংলাদেশের ভারসাম্যে ঘাটতি রয়েছে।সম্প্রতি বার্মিজ জান্তার উদ্বত আচরন সেটাই প্রমাণ করে। বার্মার সাথে যুদ্ধ জড়ানো বা তাদের উসকানির ফাঁদে পড়ে অস্থিরতা সৃষ্টিতে বার্মার খুব বেশি ক্ষতি নেই। বার্মা এতটা উন্নত দেশ নয়। এমনিতেই বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন দেশ বলা চলে। ওদের চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের মত বড় শহর নেই। বড় ইকনোমি নেই। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগের অর্থনীতির আকার বার্মার থেকেও বেশি। আর সবথেকে বড় কথা হল, বার্মার জন জীবনে বিপর্যয়ে বা ঝুকিতে জান্তার কিছুই আসে যায় না। কিন্তু উসকানিতে পড়ে আমরা এরকম কিছু করলে তার আফটার ইফেক্ট আমাদের জন্য অনেক বেশি। বিশেষ করে বিশাল জনসংখ্যার এই দেশে প্রায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তাহলে উপায় কি? ওইযে বললাম। মাসেল পাওয়ার এ আপার হ্যান্ড মেইনটেইন করতেই হবে। ব্যাক্তিজীবনের সাথে অর্থনীতির উদাহরন যেমন দেয়া যায় সামরিক ক্ষেত্রেও সেটা সত্য।দেখবেন রাস্তায় একজন রিকশাচালক ভুল না করলেও প্রাইভেট কারের সাথে একটি আঘাত লাগলেই চালক এসে রিকশাচালক কে পেটায়। একটু বনিবনা না হলে মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত সব শ্রেণির কিছু বিশেষ মানুষ রিকশাচালককে মারতে দ্বিধা করেনা। অনেকটা হতাশা চর্চার উত্তম মাধ্যম। এই নিষ্ঠুর বাস্তবতা অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু কাউকে দেখবেন না একজন কোট টাই পড়া কথিত ভদ্রলোকের সাথে এরকম গায়ে হাত তোলার সাহস করবে। এর পেছনে কারন হল ভয়। ভয় যে যদি কেউ এরকম করে তবে এর আফটার ইফেক্ট নিজের জন্যই ভয়াবহ হতে পারে।রিকশা ওয়ালার গায়ে হাত তোলা যত সহজ ঠিক তেমনি কঠিন একজন বিত্তশালী ব্যাক্তির গায়ে হাত তোলা।পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, দুজন বিত্তশালীর মধ্যে কেউ কারো থেকে কম না, সেক্ষেত্রে সাধারনত কেউ সরাসরি কনফ্রন্ট না করলেও রেশারশির প্রকাশ অন্যান্য ভাবে করে থাকে।রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ঠিক এমনি চিন্তা করা যেতে পারে। ধরুন বার্মার যেই প্রধান বড়াই সেটি হল বিশাল সামরিক সম্পদ, এবং বিশাল সৈন্যবাহিনী। বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ, শিল্প খাতে বরাদ্ধ থাকুক আর নাই থাকুক সামরিক খাতে তাদের ইচ্ছামত ব্যয় করে। যেহেতু ক্ষমতায় সামরিক বাহিনী, স্বভাবতই তারা ইনসিকিউর ফিল করে যার দরুন তাদের মাসেল পাওয়ার বাড়াতে বেশি সচেষ্ট থাকে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট ভীন্ন। আমাদের সীমিত অর্থের থেকেও বিভিন্ন খাতের চাহিদা বেশি। অবকাঠামো ঘাটতি রয়েছে, বিপুল ভোক্তা রয়েছে। চাইলেও আমরা সামরিক খাতে ইচ্ছামত বিনিয়োগ করতে পারবনা। সেটা উচিত ও না।
তবে এক্ষেত্রে একটা উদাহরণ সম্ভাবনাময় এক খন্ড জমি আছে। হাতে টাকা আছে ২০ লাখ। সম্ভাব্য দুটি অপশনে যেতে পারে। প্রথম হল, সম্পদের নিরাপত্তায় ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে উচু দেয়াল তুলে দিতে পারে। উন্নত সিসি ক্যামেরা লাগাতে পারে। শক্তিশালী গেট বানাতে পারে। দ্বিতীয় হল,জমিতে প্রথমে একটি দোকান করে ব্যাবসা শুরু করতে পারে। এরপর আপনার ব্যাবসার লাভ ও পরিসর বাড়তে থাকার সাথে সাথে লাভের অংশ্র জমির দেয়াল, সিসি টিভি এরকম নিরাপত্তার জন্য বরাদ্ধ রেখে করতে পারে। প্রথম এপ্রোচে আয়ের সুযোগ সীমিত এবং ভবিষ্যতে আরো বেশি সিকিউরিটি নিশ্চিতে আপনার সক্ষমতা কম থাকবে। কিন্তু বর্তমানে সুরক্ষা বেশ ভাল থাকবে। দ্বিতীয় এপ্রোচে সম্পদে টান পড়ার চান্স নেই। ফান্ড ফ্লো বাড়তে থাকলে আরো উন্নত নিরাপত্তা সরঞ্জাম এফোর্ড করতে পারবেন এবং এর জন্য খুব বেশি প্রেসার সহ্য করতে হবেনা।বার্মার ক্ষেত্রে মনে হয় প্রথম এপ্রোচটি খাটে। এর কারন হল দেশটির যে সম্ভাবনা ও সম্পদ এটি কাজে না লাগালে বার্মার অর্থনীতি বাংলাদেশের দ্বিগুণ হওয়া অসম্ভব ছিলনা এতদিনে। কিন্তু তারা যেখানে বিনিয়োগ প্রয়োজন সেটা না করে সামরিক খাতেই বৃদ্ধি করেছে। ফলে তাদের ফান্ড ফ্লো বেশি নেই।বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় এপ্রোচ প্রযোয্য। দুই দেশের অর্থনীতির শক্তি ও সম্ভাবনার তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল যে এক সময় বার্মার সামরিক বাজেট বাংলাদেশের থেকে অনেক বেশি ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি কলেবরে বৃদ্ধি পাওয়ায় শতাংশের হিসাবে জিডিপির ১.৫% সামরিক খাতে বাজেট করলেও সেটি বার্মার জিডিপির ৮%-১০% বিনিয়োগের থেকেও বেশি হয়ে গেছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই এটা হচ্ছে।
কিন্তু কথা হল, গুরুত্বপূর্ণ ডিটারেন্স সৃষ্টির বিকল্প নেই। শক্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের পার্থক্য বিদ্যমান। বাংলাদেশকে এখন কিছুটা হলেও ভারসাম্য বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ জরুরি। এক্ষেত্রে সবথেকে কার্যকর উপায় হতে পারে সামরিক প্রকিউরমেন্টে স্মার্ট ওয়েপন এবং স্ট্রাটেজিক ওয়েপন যুক্ত করা। বর্তমান প্রযুক্তির উৎকর্ষতাকে অস্বীকার করা যায় না। এক্ষেত্রে বিলিয়ন ডলারে যুদ্ধবিমানের থেকে কস্ট ইফেক্টিভ দ্রোন টেকনলজি বেশ কাজের। একি সাথে রিকনিসেন্স মিশন যেমন চালানো যায়, সাথে নির্দিষ্ট টার্গেটে প্রিসিশন এটাক করাও যায়। অপারেটিভ কস্ট কম। পাইলটের জীবনের ঝুকিও কম। যদি ওয়েস্টার্ন দেশগুলি থেকে উচ্চ প্রযুক্তির দ্রোন, জিএমএলআরএস সংগ্রহ করা যায় তবে ভাল ডিটারেন্স সম্ভব হবে।সামরিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশের একটা সমস্যার মূখমুখী হতে হচ্ছে। আর সেটি হল উৎস।রাশিয়া বা চীন থেকে যেটাই কেনা হোক সেটা বাংলাদেশকে ফলো করে বার্মাও সংগ্রহ করছে। এই দুই উৎস থেকে স্ট্রাটেজিক ওয়েপন কেনার উদ্দেশ্য সফল হচ্ছেনা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এমন কোন দেশ থেকে কিনতে হবে যেখানে বার্মার এক্সেস নাই। তুর্কি ভাল একটা উৎস হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। ডিফেন্সিভ ওয়েপন হিসাবে আকাশ প্রতিরক্ষায় গুরুত্ব দেয়া উচিত হবে। পয়েন্ট ডিফেন্সে বাংলাদেশ যেই কাজটি করে বার্মাও ঠিক একই কাজ করছে।


বিজ্ঞাপন
👁️ 11 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *