কামরাঙ্গীরচর খালে ময়লা ফেলে দখলের পাঁয়তারা

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয়

বিশেষ প্রতিবেদক : গেল ফেব্রুয়ারিতে অভিযান চালিয়ে অনেকটাই উদ্ধার করা হয় কামরাঙ্গীর চর খাল। এরপর ময়লা তুলে খালটিতে পানিপ্রবাহও আনা হয়। সেই খালটিতেই আবার দখলের পাঁয়তারা শুরু করেছে একটি অসাধু চক্র। এ জন্য তারা নিয়েছে অভিনব পন্থা। প্রতিদিনই নানা জায়গার ময়লা এনে ফেলা হচ্ছে খালে। এর ফলে জমতে থাকা মাটিতে অবৈধ ভাবে স্থাপনা তৈরি করে চলবে ভূমি বাণিজ্য।
প্রকাশ্যে এমন অসাধু কাজ চললেও স্থানীয়ভাবে কোনও বাধা পায়নি অসাধু চক্রটি। তবে স্থানীয় কাউন্সিলরের দাবি, খালটিতে যেকোনো রকম দখল রোধে তিনি সক্রিয় রয়েছেন। আর ময়লা ফেলে খাল ভরাটের জন্য স্থানীয় একচন বাজার মালিক এবং বাসিন্দাদের দায়ী করছেন তিনি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী কামরাঙ্গীর চরের গোড়াপত্তনের পর থেকেই বেড়িবাঁধ ঘেঁষা খালটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়। ফলে পানি প্রবাহ কমে ভরাট হয়ে যাওয়া এ খাল অনায়াসে পায়ে হেটে পার হওয়া যেত। আর ভরাট হয়ে যাওয়া খালের ওপরে গড়ে উঠতে থাকে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা।
চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত খালটি পরিষ্কার এবং দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন ও অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ। অভিযানে খালটির ওপর ও দুই পাশ থেকে অবৈধ আড়াই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ওই সময় ভাঙতে হয়েছিল বহু পাকা বহুতল ভবন, কারখানা।
এরপর বছরের মাঝামাঝি সময়ে খালটি পরিষ্কার করা হয়। তবে মাস দুয়েক না যেতেই আবারো ময়লা ফেলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গার এই শাখা খাল। একারণে আবারও খালটি পুরনো চেহারা ফিরে পেতে পারে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, খালটি দখলের প্রবনতা অনেক পুরনো। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় প্রথমে ময়লা ফেলে কিছুটা জায়গা দখল, তারপর সেখানে মাটি ফেলে কিছুটা পোক্তভাবে দখল করা হয়। এরপর রাতারাতি সেখানে গড়ে তোলা হয়, দোকান, ঘরসহ নানা স্থাপনা।
নুসরাত জাহান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ময়লা তো দূর থেকে এসে কেউ ফেলে যায় না। এখানকার মানুষজনই ফেলে। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে দেখা যাবে খালের পাশের বাসাবাড়ি থেকে ময়লা কিভাবে ফেলা হচ্ছে।
তার বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেল কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর। দেখা যায়, খাল সংলগ্ন বিভিন্ন বাড়ি থেকে বাসিন্দারা ময়লা ছুড়ে ফেলছেন খালে। বাসাবাড়ির পাশাপাশি কামরাঙ্গীর চর রনি মার্কেটের সব ময়লাও ফেলা হচ্ছে মার্কেটের পাশের ব্রীজের নিচে। সেখানে ময়লার পাঁচ থেকে ছয় ফুটের স্তূপ তৈরি হয়েছে। পানি চলাচলও বন্ধ। আবার খাল পাড়ের একতলা এবং আধাপাকা ভবনের পেছনে রয়েছে খাল ভরাটকৃত জায়গা। সেখানে দিনের পর দিন ময়লা ফেলে ভরাটকৃত জায়গার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। গড়ে তোলা হচ্ছে নানা স্থাপনা।
স্থানীয় বাসিন্দা অভি উদ্দিন বলেন, ব্রীজের একদিকে ময়লা ফেলা হয়। আরেকদিকে আগেই ময়লা ফেলে তারপর জায়গা ভরাট করে দোকান তোলা হয়েছে। এসব দোকান ভাড়া দিয়ে মাসে মাসে টাকা আদায় করছে একটি চক্র।
এসব দোকানের ভাড়া আদায়কারী কারা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের অধিকাংশই স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর রাজনৈতিক ছত্রছায়া পেয়ে দিন দিন দখলের পরিমাণও বাড়িয়ে চলেছেন তারা।
এসব বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন জানান, রনি মার্কেটের মালিক মাহবুবুল হক খান রনি খালে ময়লা ফেলার মূল হোতা। তাকে বাজারের ময়লা খালে না ফেলেতে একাধিকবার বলা হলেও কোনও কাজ হয়নি।
মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমাদের সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী তাকে (রনি মার্কেটের মালিক) একাধিকবার অনুরোধ করার পরেও রাতের আঁধারে তার মার্কেটের ময়লা খালে ফেলে যায়। অনেকে বাসা থেকে বাজারে যাওয়ার সময় ময়লাটা পলিথিনে করে নিয়ে যায়, তারপর ব্রীজের উপর থেকে খালে ফেলে দেয়।
খালেল জায়গা দখল করে কাঁচা এবং আধাপাকা দোকানপাট, লেগুনা স্ট্যান্ড এবং গাড়ির গ্যারেজ তৈরি করার বিষয়ে কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, এগুলো আগেই হয়ে রয়েছে। এসব নিয়ে মামলা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে এই কাউন্সিলর।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *