নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তে কমিটি গঠন  !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক :  নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, পাবনায় সংঘটিত একের পর এক দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে প্রশাসনে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।


বিজ্ঞাপন

মন্ত্রণালয়ের জাহাজ শাখা থেকে স্মারক নং: ১৮.০০.০০০০.০২৪.৯৯.০০১.২৪-৫২৮, তারিখ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং তারিখে জারি করা নোটিশে জানানো হয়— বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, পাবনা এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ইনল্যান্ড মেরিন পরীক্ষায় সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি তদন্তের জন্য যুগ্মসচিব মো. ফিরোজ আহমেদকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির তলবে গত ১৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে সচিবালয়ের সভাকক্ষে (কক্ষ নং ৮০৬, ভবন নং ৬) অনুষ্ঠিত বৈঠকে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের মৌখিক জবাব গ্রহণ করা হয়।


বিজ্ঞাপন

অভিযুক্ত কর্মকর্তারা  :  অভিযুক্ত কর্মকর্তারা যথাক্রমে,   ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন, চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, আগারগাঁও, ঢাকা। ক্যাপ্টেন মো. তৌফিকুল ইসলাম, কমান্ড্যান্ট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, পাবনা। মো. আবুল বাসার, ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার ও এক্সামিনার, নৌপরিবহন অধিদপ্তর। মো. কাদের, কম্পিউটার অপারেটর, নৌপরিবহন অধিদপ্তর। এবং একজন প্রশাসনিক সহকারী।


বিজ্ঞাপন

ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র : সূত্র মতে, ইনল্যান্ড মাস্টার ও ড্রাইভার পরীক্ষাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে দুর্নীতির এক ভয়াবহ সিন্ডিকেট। প্রতি পরীক্ষার আগে-পরে প্রার্থীদের কাছ থেকে গোপনে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা, বিনিময়ে অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে।

অভিযোগ উঠেছে— পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া, ও জাল সার্টিফিকেট তৈরি করেই চলছে এই কালোবাণিজ্য।

পাবনা মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্টের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ : তদন্ত প্রতিবেদনে সবচেয়ে আলোচিত নাম ক্যাপ্টেন মো. তৌফিকুল ইসলাম, কমান্ড্যান্ট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, পাবনা। তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ—একাডেমির পুকুরে ব্যক্তিগতভাবে মাছ চাষ ও বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাডেটদের খাবারের টাকায় ২৫% কমিশন নেওয়া, ভুয়া টেন্ডার প্রক্রিয়া দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকের বাড়তি ক্লাস দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাগাভাগি, নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে টাকা উত্তোলন, নারী সহকর্মীর প্রতি যৌন নির্যাতন ও মানসিক হয়রানির অভিযোগ।
এইসব কর্মকাণ্ডে একাডেমির শিক্ষক, ক্যাডেট ও কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

তদন্তে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান : নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত কমিটি তাদের বক্তব্য শুনে আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে, যা আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

জনমতের প্রতিক্রিয়া : দেশপ্রেমিক নাগরিক, প্রাক্তন নাবিক ও মেরিন শিক্ষার্থীরা এই ঘটনাকে “প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের নেপথ্যে দুর্নীতির মহামারি” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, “এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে মেরিন খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে।”

বিশ্লেষণ : বাংলাদেশের নৌপরিবহন খাত দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের ছোবলে জর্জরিত। অথচ এই খাতই দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও সমুদ্র অর্থনীতির প্রাণ। এবার যদি এই তদন্ত নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়, তবে বহু বছরের গোপন দুর্নীতির আস্তানা ভেঙে পড়তে পারে— এমন আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *