দুদকের তদন্ত প্রয়োজন  : নৌপরিবহন অধিদপ্তরে শিপ সার্ভেয়ার মো: মাহবুবুর রশিদ মুন্নার বেপরোয়া দুর্নীতি !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের শিপ সার্ভেয়ারের মো: মাহবুবুর রশিদ মুন্নার বিরুদ্ধে বেপরোয়া দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভ্যন্তরীণ নৌযান সার্ভে,ফিটনেস পরীক্ষা, রেজিস্ট্রেশন এবং নৌযান সার্ভে সনদ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি করে তিনি অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।


বিজ্ঞাপন

আর সে সব টাকায় রাজধানীর আফতাব নগরে ৫ কাঠার প্লট কিনে বহুতলা বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করছেন। তার প্লট নং বাসা নং ১৮, রোড নং ৫,ব্লক-এম, অফতাবনগর,ঢাকা। নিজের জন্য আছে একখানা গাড়ি আবার স্ত্রী সন্তানের জন্যও একখানা গাড়ি ক্রয় করেছেন। এছাড়া তার শেয়ারে শীপ/ জাহাজ ব্যবসা রযেছে। গত ৬ মাস ধরে তিনি নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের চীফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য জামায়াতের নেতাদের সাথে কোটি ট৬াকার চুক্তি ও একাধিক বৈঠক করেছেন।

তিনি দেখতে তামিল ভিলেনদের মতো হলেও নিজ প্রযোজনায় প্রায় ১.৫ কোটি টাকা খরচ করে ভাগ্য নামে একটি সিনেমাও নির্মাণ করেছেন। সেই সিনেমার নায়িকা হিসেবে আওয়ামী লীগের মহাক্ষমতাধর নেতা শেখ সেলিমের রক্ষিতা নায়িকা নিপুণকে কাস্টিং করেন। এটা ছিল শেখ সেলিমের নির্দেশ।


বিজ্ঞাপন

সিনেমাটি দর্শক মহল প্রত্যাখ্যান করে। ফলে পুরো ১.৫ কোটি টাকাই জলে গেছে। এই সিনেমা দেখানোর জন্য তিনি নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে নৌযান সার্ভে (ফিটনেস পরীক্ষা) ও রেজিস্ট্রেশনের কাজ করা (এজেন্ট)দেরকে দর্শক নিয়ে যেতে চাপ দেন। এজেটগণ তার চাপে দর্শক ভাড়া করে সিনেমা হলে নিয়ে যেতে বাধ্য হন।


বিজ্ঞাপন

সুত্রমতে, তিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের শাখা কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। এর আগে সদরঘাটে ছিলেন। তখন তিনি বিধি ভংগ করে প্রতিমাসে ২/৩ শত নৌযান সার্ভে করেন। প্রতিটি নৌযান থেকে ২/৩ লাখ টাকা নিয়ে নৌযানে সরেজমিনে পরিদর্শন না করেই অফিসে বসে সার্ভে সনদ প্রদান করতেন। এ বিষয়ে নৌ মন্ত্রণালয় ও ডিজি শিপিং এর কাছে অভিযোগ হলে তাকে নারায়ণগঞ্জ অফিসে বদলী করা হয়। কিন্তু সেখানে গিয়েও তিনি একইভাবে অর্থের বিনিময়ে অফিসে বসেই শত শত নৌযানের সার্ভে সনদ প্রদান করছেন। কখনোই তিনি কোন নৌযান সরেজমিনে পরিদর্শন করেন না। বিষয়টি নৌমন্ত্রণালয়ের তদন্তের দাবী রাখে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, দুদকের হটলাইনে একজন নৌ এজেন্ট তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের বিষয়ে টেলিফোনে অভিযোগ করলে দুদক কর্মকর্তারা মো: মাহবুবুর রশিদ মুন্নাকে গত ১৯/১০/২০২৫ ইং তারিখে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য প্রধান কার্যালয়ে তলব করেন। তিনি সারাদিন দুদক কার্যালয়ে অবস্থান করেন। প্রাথমিক জিঞ্জেসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তার বিরুদ্ধে অফিশিয়ালী অনুসন্ধান করা হবে বলে দুদক সুত্র নিশ্চিত করেছে

সুত্রটি আরো জানায়, শীফ সার্ভেয়ার মো: মাহবুবুর রশিদ মুন্না নানা প্রকার জাল জালিয়াতি কর্মকান্ডেও জড়িত আছেন। তিনি নৌযান মালিকদের সাথে নারায়ণগঞ্জ অফিসে বসে কথা না বলে তার আফতাবনগরস্থ বাড়ীতে অথবা কোন চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে ডেকে এনে কথা বলেন এবং ঘুস লেনদেন করেন। ইতিপুর্বে তার বিরুদ্ধে ওঠা অসংখ্য অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়মিত মাসোহারা দেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

মাসখানেক আগে তিনি তার বাড়ীতে (আফতাব নগরে) সাগর নামের একজন ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে যৌথবাহিনী দ্বারা গ্রেফতার করান এবং সাগরের নামে একটি মামলা দেন। সেই মামলার বাদী তার বাড়ীর নাইটগার্ড মো: রহিম মন্ডল। মামলাটি অবিশ্বাস্য হওয়ায় ওই দিনই আসামী সাগরকে আদালত জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। জানাগেছে এই সাগর একজন নৌখাতের দালাল। সে নৌখাতের ইনল্যান্ড ড্রাইভার ও মাষ্টার পরীক্ষার দালালী করে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার সাথে মুন্নার ঘুস লেনদেন সংক্রান্ত মনোমালিন্য থাকায় তিনি একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা দ্বারা তদবীর করে সাগরকে গ্রেফতার করিয়ে আদালতে চালান করেন বলে সাগরের পরিবার অভিযোগ করেছেন।

আরো জানাগেছে, মাহবুবুর রহমান মুন্না বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকার (হাসিনার আমলে) নৌপরিবহন অধিদপ্তরে চাকুরী লাভ করেন। ওই সময় তিনি নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন। ততসময়ে নৌপরিবহন মন্ত্রী ছিলেন বর্তমান জেলে আটক মো: শাহজাহান খান। নিয়োগকালে তিনি মন্ত্রীকে ৩০ লাখ টাকা ঘুস দিয়েছিলেন বলে প্রচার আছে। ফলে তার নিয়োগ নিয়েও জালিয়াতি ও সনদপত্রের গড়মিল রয়েছে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

তিনি প্রতিদিন গুলশান,বনানী, উত্তরা ও আফতাব নগর এলাকার অভিজাত হোটেলগুলোতে গিয়ে রঙিন সময় কাটান বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সব হোটেলের বারে বসে আকন্ঠ মদ্যপান করে নায়িকা,গায়িকা ও মডেল নারী নিয়ে আনন্দ ফুর্তি করেন। এ খাতে তার প্রতিদিনের ব্যয় ৫০/৬০ হাজার টাকা। প্রশ্ন হলো, এতা টাকা তিনি কোথায় পান?

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য মো: মাহবুবুর রশিদ মুন্নার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আপনি আমাদের প্রসিকিউশন শাখায় যোগাযোগ করেন। আমি যা করি আমার উর্ধতন মহল জানে । আর উর্ধতন মহলের অনুমতি ছাড়া আমি কথা বলবো না। একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করলে আপনার পত্রিকা ও আপনার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করবো। ডিবি, র্যাব, ডিজিএফআই দিয়ে তুলে নিবো। খুব উত্তেজিত হয়ে প্রাণ নাশের হুমকিও দেন তিনি।

এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা,সচিব, ডিজি শিপিং ও দদুক চেয়ারম্যানের পদক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে।

👁️ 12 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *