বেবিচকে ‘সাংবাদিক বটগাছ’ সিন্ডিকেট : ইজারায় ব্যবসা, তদবিরে রাজত্ব !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ—বেবিচক। নাম শুনলেই মনে হয় কড়া শৃঙ্খলা, আন্তর্জাতিক মান, নিরাপত্তা আর সুশাসনের প্রতীক। কিন্তু ভেতরের চিত্রটা এমন যে, যাত্রীদের বিমানে উঠতে যতটা সময় লাগে, তার চেয়ে দ্রুত এখানে কিছু সাংবাদিকের ভাগ্য উড়ে যায়—একেবারে চুনোপুটি থেকে ‘বটগাছে’ পরিণত হওয়া পর্যন্ত!


বিজ্ঞাপন

এক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বেবিচকের অভ্যন্তরে আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিত কিছু সংবাদকর্মী বছরের পর বছর এখানে রীতিমতো রাজত্ব করছে। এদের কেউ নিউজ করে না—করে ‘নিউজ ডিলিটের ঠিকা’। কারও রিপোর্টে দুর্নীতির ছোঁয়া লাগলেই, সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোন, তদবির বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ডিলিটের ‘ডিল’ হয়।

এমনকি কেউ কেউ নাকি সরাসরি বেবিচক কর্মকর্তাদের হয়ে ‘রিপোর্ট ঠেকানোর ঠিকাদার’ হিসেবেও কাজ করছে!


বিজ্ঞাপন

ইজারার নামে ইজারা বাণিজ্য :  বেবিচকের সদর দপ্তর থেকে শুরু করে শাহজালাল বিমানবন্দর—যেখানে দেখবেন, সেখানেই এক বা একাধিক স্থাপনায় সাংবাদিক নামধারী এই সিন্ডিকেটের ছোঁয়া। একজন সাংবাদিক (!) তো একাই সদর দপ্তর ও শাহজালালে তিনটি স্থাপনা ইজারা নিয়েছেন। নবায়নের তারিখ গেলেও ইজারা যায় না—যেন চুক্তি নয়, ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’।


বিজ্ঞাপন

ডেটলাইন ৩০ জুন পেরিয়ে গেলেও তাদের ইজারা বাতিল হয়নি। অথচ সাধারণ ব্যবসায়ীদের ১৬টি প্রতিষ্ঠানের নবায়ন বাতিল করা হয়েছে কোনো দয়া না দেখিয়েই।

বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ‘খয়েরখা সাংবাদিক’ : বলা হয়, এক সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন এই ‘দোসর সাংবাদিকদের’ খয়েরখা। তার আমলে সাংবাদিকদের ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে। ফলাফল—তিনি নিজেই দুর্নীতি দমন কমিশনের ৪টি মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন। কিন্তু তার গড়ে তোলা ‘সাংবাদিক বটগাছগুলো’ আজও অক্ষত, বরং আরও মোটা হয়েছে!

তদবির ও ঠিকা রাজনীতি  :  বেবিচকের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হলে, একদল ‘দোসর সাংবাদিক’ তৎক্ষণাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে। কারও ফোন যায় সম্পাদককে, কারও আবার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকে অনলাইন পোর্টালের ব্যাকএন্ড পর্যন্ত—রিপোর্ট উধাও!

শোনা যায়, সম্প্রতি এক বেবিচক সদস্যের সিন্ডিকেট নিয়ে রিপোর্ট হলে, একজন আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক ‘ঠিকা’ নিয়েছেন রিপোর্ট সরানোর দায়িত্ব।

শাহজালালে স্পাইসি ঘনিষ্ঠতা  :  শাহজালাল বিমানবন্দরে ইজারা নবায়নের সঙ্গে যুক্ত ৫টি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের সঙ্গে নাকি দোসর সাংবাদিকদের দারুণ সখ্য। স্পাইসি রেস্টুরেন্টের মালিকের সঙ্গে তো এমনই সম্পর্ক—নিউজ নয়, এখন নাকি তারা “স্পাইসি বন্ধুত্ব” চালাচ্ছেন!

বাছাই করা বাতিল  : আশ্চর্যের বিষয়—এয়ারপোর্ট রেস্টুরেন্টের ইজারা বাতিল করে সিলগালা করা হয়েছে, ওয়ান্ডার-ইন হোটেল বেবিচকের দখলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেবিচকের সদর দপ্তরের হোটেল, শাহজালালের ‘কনক’, এমনকি প্রয়াত রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয়ধারী ইকবালের ৫টি প্রতিষ্ঠানের ইজারা এখনো অটল। কী আশ্চর্য মিল—সবই আওয়ামী দোসর সিন্ডিকেটের ছায়ায় পরিচালিত।

বেবিচক নাকি বেবি-চক্র  :  বেবিচক এখন আর কেবল প্রশাসনিক সংস্থা নয়—এ যেন এক ‘বেবি চক্র’, যেখানে তদবির, ইজারা আর তোষামদ মিলে গড়ে উঠেছে নতুন এক লাভজনক সাংবাদিকতা। নতুন কোনো কর্মকর্তা এলেই দোসর দল হাজির—‘নিউজ কভারেজ’-এর অজুহাতে সুবিধা আদায়ের মহড়া শুরু হয়। এদের পেশা সাংবাদিকতা নয়, বরং ‘তদবিরনীতি’; কলম নয়, বরং ইজারা ফাইলই এদের হাতিয়ার।

শেষকথা   :  বেবিচকের আকাশে প্লেন উড়ে, কিন্তু নিচে ঘুরে বেড়ায় দুর্নীতির হাল্কা কুয়াশা। আর সেই কুয়াশার ভেতরে কিছু সাংবাদিক বটগাছ—যাদের ছায়ায় দুর্নীতি, তদবির আর ইজারার ব্যবসা বেঁচে আছে আজও!

👁️ 65 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *