
নিজস্ব প্রতিনিধি (মাদারীপুর) : মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী মহামানব গণেশ পাগল সেবাশ্রম একসময় ছিল ভক্তদের মিলনমেলা, ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের পবিত্র কেন্দ্র। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সেবাশ্রম ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নানা বিতর্ক, অভিযোগ ও চাঞ্চল্যের ঝড়। কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সেবাশ্রম কমিটির সভাপতি মীরন বিশ্বাস ওরফে মহানন্দ, যার বিরুদ্ধে উঠেছে ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক রঙ বদল ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাহাড়সম অভিযোগ।

সূত্র জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী মন্ত্রী শাজাহান খানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত মীরন বিশ্বাস তৎকালীন সময়ে প্রভাব খাটিয়ে সেবাশ্রম কমিটির সভাপতি পদ দখল করেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, তিনি সরকারি প্রভাব ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের একপেশেভাবে বাদ দিয়ে নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করেছিলেন।
রঙ বদলের রাজনীতি : বর্তমান সময়ে আওয়ামী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মীরন বিশ্বাস আবারও নতুন চাল চালতে শুরু করেছেন। জানা গেছে, সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী ও বিএনপি ঘরানার নেতাদের দোরগোড়ায় ধরনা দিচ্ছেন, যেন তিনি যেকোনোভাবে নিজের সভাপতির পদ টিকিয়ে রাখতে পারেন। রাজনৈতিক রঙ বদলে টিকে থাকার এই চেষ্টা এলাকাজুড়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

মাদক ও অপকর্মের অভিযোগ : স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মীরনের ভাই গোবিন্দ বিশ্বাস ছাত্রদলের কথিত কর্মী পরিচয় ব্যবহার করে এলাকায় নানা অপকর্মে লিপ্ত। তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গণেশ পাগল সেবাশ্রমের মতো ধর্মীয় ও সামাজিক অঙ্গনকে তারা মাদকাসক্ত ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আড্ডাখানায় পরিণত করেছেন।

এছাড়া, তাদের চাচা প্রমথ বিশ্বাস, যিনি স্থানীয়ভাবে মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত, তিনি নাকি কদমবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপিকে বিভক্ত ও দুর্বল করার পাঁয়তারা করছেন। রাজনৈতিক বিভাজনের মাধ্যমে নিজ পরিবারের স্বার্থ রক্ষা ও ক্ষমতার অবস্থান ধরে রাখাই তার লক্ষ্য বলে অভিযোগ উঠেছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ : কদমবাড়ী ইউনিয়ন বহু বছর ধরে একটি শান্তিপূর্ণ ও বর্ধিষ্ণু হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের এই তিনজনের অপকর্ম ও রাজনৈতিক নাটকীয়তা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম অশান্তি সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “ধর্মীয় স্থানের নামে যারা মাদক ও সন্ত্রাসের ব্যবসা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।”
প্রশাসনের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ : এলাকাবাসীর অভিযোগ, মীরন বিশ্বাস পরিবারটি রাজনৈতিকভাবে এতটাই প্রভাবশালী যে স্থানীয় প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছে না। ফলে গণেশ পাগল সেবাশ্রম আজ পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থ আর অবৈধ প্রভাবের ঘাঁটিতে।
উপসংহার : এক সময়ের পবিত্র সেবাশ্রম আজ পরিণত হয়েছে ক্ষমতার লোভ, মাদক ও অনৈতিক প্রভাবের কেন্দ্রে। এলাকাবাসীর একটাই দাবি— “যত প্রভাবশালীই হোক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অপকর্মের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
