
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা যখনই কোনো প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি–সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্তি পেতে শুরু করে, তখনই অন্ধকার শক্তি সক্রিয় হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তরও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র কয়েক সপ্তাহেই যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে—তা নতুন নয়, এটি বহু বছরের সুবিধা হারানো একটি শক্তিশালী গোষ্ঠীর “শেষ চেষ্টা”।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের পুরনো চক্রটি নিজেরাই জানে—তাদের দিন শেষ। বছরের পর বছর বদলি–বাণিজ্য, নিয়োগ–কারসাজি, ঠিকাদারি সিন্ডিকেট আর অজস্র অনিয়মের উপর ঘুণ ধরেছিল। নতুন প্রধান প্রকৌশলী এসে যখন সেই ঘুণে হাত দিয়েছেন, তখনই শুরু হয়েছে মিথ্যার কারখানার বেপরোয়া উৎপাদন। সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব চ্যানেল, বেনামী অনলাইন পোর্টাল—সবখানে একই স্ক্রিপ্ট: “বদলি-বাণিজ্য”।
কিন্তু বাস্তবতা : গণপূর্ত ভবনের ভেতরে গিয়ে যারাই কথা বলবে তারা জানবে—সাম্প্রতিক বদলি ও দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস হয়েছে সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে, কোনো সিন্ডিকেটের চাপ ছাড়াই। বরং যখন দীর্ঘমেয়াদি অনিয়মে জড়িত কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তখনই তারা ভয়ের চোটে পাল্টা-মিথ্যা ছড়াতে শুরু করে। কারণ তারা জানে—এই প্রধান প্রকৌশলী কিনে নেওয়ার মতো মানুষ নন।

২৮ অক্টোবর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী যেভাবে অফিসের ফাইল, প্রকল্প, আর্থিক নথি, প্রকৌশল টিম—সবকিছু খুঁটিয়ে দেখেছেন, তাতে সিন্ডিকেটের জমে থাকা ঘাম শুকানোর সুযোগ নেই। প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে জনবল ব্যবস্থাপনা—সবকিছুতে তিনি কঠোর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পথে হাঁটছেন।

এটাই পুরনো গোষ্ঠীর ভয়। তারা জানে—এই মানুষটি যদি আরও কয়েক মাস টিকে থাকেন, তবে গণপূর্ত অধিদপ্তরে অনিয়ম করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। তাই এখন তাদের একমাত্র অস্ত্র: অপপ্রচার।
একজন কর্মকর্তা স্পষ্টভাবে বলেন: “যাদের লুটপাট বন্ধ হয়েছে, তারাই এখন সবচেয়ে জোরে চিৎকার করছে।”– কিন্তু এই মানুষটি কে? কেন তিনি এত বড় হুমকি দুর্নীতি–সিন্ডিকেটের জন্য?
ফরিদপুরের নগরকান্দায় জন্ম তাঁর। নাজিমুদ্দিন স্কুল, রাজেন্দ্র কলেজ থেকে শিক্ষাজীবন শুরু। CUET থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, পরে Monash University থেকে Masters—একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তার সুনাম দেশের বাইরেও ছড়িয়েছে। সরকারি চাকরিতে দুই দশকের সুনাম, বিদেশি উচ্চমানের হাসপাতাল নির্মাণে অভিজ্ঞতা, শত শত প্রকল্প বাস্তবায়ন—এমন ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা একজন ব্যক্তি সিন্ডিকেটের কাছে অবশ্যই ভয়ংকর।
তিনি যখন বলেন, “আমি নিয়ম মেনে কাজ করি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।”—তখন বোঝা যায়, মিথ্যার ঝড় তিনি পাত্তা দিচ্ছেন না। কারণ তিনি জানেন—মিথ্যা যতই জোরে চিৎকার করুক, সত্য একদিন অধিদপ্তরের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হবেই।
গণপূর্ত অধিদপ্তরে এখন চলছে এক বাস্তব যুদ্ধ। শুদ্ধি অভিযান বনাম সুবিধাভোগী চক্র। নিয়ম-কানুন বনাম সিন্ডিকেট। পরিছন্ন প্রশাসন বনাম অনিয়মতন্ত্র।
এ যুদ্ধে সিন্ডিকেটের হাতে শুধু গুজব, অপপ্রচার, ব্ল্যাকমেইলিং আর হলুদ সাংবাদিকতা— অন্যদিকে প্রধান প্রকৌশলীর হাতে আছে দক্ষতা, সততা, আইন, এবং রাষ্ট্রের সমর্থন।
শেষ কথা : গণপূর্ত অধিদপ্তর বদলাচ্ছে। এবং এই পরিবর্তন থামাতে যতই চিৎকার হোক, মিথ্যার কাদা ছোড়া হোক, দুর্নৈতিক গোষ্ঠীর আনুগত্যে সংবাদ পরিবেশন হোক— এই শুদ্ধি অভিযান আর পেছনে ফেরার নয়। কারণ একজন সৎ, দৃঢ়, পড়াশোনা জানা, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রধান প্রকৌশলীকে অপপ্রচার দিয়ে থামানো যায় না। যে সিন্ডিকেটের শক্তি ছিল ভয়— সেই ভয় এখন তাদের নিজেদের কাছেই ফিরে যাচ্ছে।
