গণপূর্তের প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের অস্বাভাবিক সম্পদ–তদন্তের দাবি তীব্রতর  :  অভিযোগকারীদের বিস্ফোরক তথ্য—‘শত কোটি টাকার মালিকানা কীভাবে ?

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল (ই/এম) সার্কেল–৩, ঢাকার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানকে ঘিরে অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধি, সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক লোপাটের গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগকারীরা বলছেন, একজন সরকারি চাকরিজীবীর ঘোষিত আয়ের হিসাবের সাথে তার সম্পদের পরিমাণের “আকাশ–পাতাল ব্যবধান” রয়েছে—যা “স্বাভাবিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না।”

ঢাকার হৃদয়ে বিলাসবহুল সম্পত্তি প্রশ্ন আরও ঘনীভূত : অভিযোগসূত্রে জানা যায়, প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান—মোহাম্মদপুরের ১/১৪ ইকবাল রোডে প্রায় ৩৫০০ বর্গফুটের একটি অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটের মালিক, পশ্চিম আগারগাঁওয়ের ৬০ ফুট রোডের মাথায় চারতলা একটি ভবনের মালিকানা রয়েছে, বনশ্রী আমুলিয়া হাউজিং এলাকায় তার আরও জমি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীদের ভাষায়, “একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বেতন–ভাতা দিয়ে এত অঢেল সম্পদ গড়া সম্ভব নয়—এটা আয়–বৈষম্যের চরম দৃষ্টান্ত।”


বিজ্ঞাপন

১৭ কোটি ৮ লাখ টাকার বিল–অনিয়মের অভিযোগ : অভিযোগকারীরা দাবি করেন, ই/এম সার্কেল–৩–এর আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পে— বিল পরিশোধ, সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ক্রয়, কাজের মান যাচাই, টেন্ডার মূল্য সমন্বয়—এসব জায়গায় সুনির্দিষ্ট অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে।


বিজ্ঞাপন

একটি প্রকল্পে ১৭ কোটি ৮ লাখ ৮৩ হাজার ১৪৪ টাকার বিল–অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের একাধিক অভ্যন্তরীণ সূত্র জানান, প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান “ঠিকা ঠিকাদারদের একটি ঘনিষ্ঠ নেটওয়ার্ক” ব্যবহার করে টেন্ডার–প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেন, এবং ক্রয়–কার্যক্রমে “অস্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণক্ষমতা” প্রদর্শন করেন।

সূত্রের দাবি—“সরকারি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যক্তিগতভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।” অভিযোগ দীর্ঘদিনের—এবার প্রথমবার প্রকাশ্যে প্রমাণসহ গণপূর্তের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশের অনিচ্ছায় বলেন— “এই ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। প্রাথমিক তথ্য–প্রমাণ মিললে অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।” তিনি আরও জানান, সরকারিভাবে অনুমোদিত ক্ষমতার অপব্যবহার বা প্রকল্পে আর্থিক কারসাজি নিশ্চিত হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দুদকের বক্তব্য : ‘আয়–ব্যয়ের অসঙ্গতি পাওয়া গেলে তদন্ত শুরু হবে’—দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান— “সরকারি কর্মকর্তার আয়–ব্যয়ের মধ্যে বৈষম্য পাওয়া গেলে প্রাথমিক যাচাইয়ের পর তদন্ত শুরু হয়। অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা গুরুত্বসহকারে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করব।”

প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান ফোনে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি : অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে তার সরকারি নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

দপ্তরের ভেতরে চাপা গুঞ্জন—‘প্রভাবশালী অবস্থান ব্যবহারের অভিযোগ’ : গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে গুঞ্জন রয়েছে যে— টেন্ডার বণ্টন, ক্রয় অনুমোদন, প্রকল্প–বিল প্রসেসিং—এসব ক্ষেত্রে তার “অস্বাভাবিক প্রভাব” কাজ করে। কর্মকর্তাদের অনেকে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে ভীত, তবে গোপনে তথ্য দিচ্ছেন।

অভিযোগের বিস্ফোরক প্রশ্ন—‘শত কোটি টাকার উৎস কী ?’ অভিযোগকারীদের মতে, তার সম্পদের পরিমাণ এখন “শত কোটি টাকারও বেশি”—কিন্তু ঘোষিত আয়ে তার যুক্তিযুক্ত উৎস পাওয়া যাচ্ছে না। একজন অভিযোগকারী বলেন— “তার লাইফস্টাইল, সম্পদ, ক্ষমতার প্রসার—সবকিছু সরকারি বেতনের সাথে সামঞ্জস্যহীন। এটা দুর্নীতির আদর্শ উদাহরণ।”

সমাপ্তি :  এই অভিযোগগুলো এখন আলোচনা ও তদন্ত–আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধি—এসব অভিযোগ সত্য হলে বিষয়টি বাংলাদেশের সরকারি প্রকৌশল খাতে বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে আসবে। প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া গেলে প্রতিবেদনটি হালনাগাদ করা হবে।

👁️ 80 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *