
নিজস্ব প্রতিবেদক : যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশাসন পরিচালক এম এ আখের ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মাসুদ আলমকে ঘিরে ভয়াবহ দুর্নীতি, নিয়োগ বানিজ্য, বিদেশে অর্থ পাচার এবং ভুয়া বিল—ভাউচারের মাধ্যমে কোটি টাকার লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে–বাইরে বাড়ছে অসন্তোষ, আর এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে তৈরি হয়েছে তীব্র আলোড়ন।

৫ বছর ধরে ‘একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ’—দুটি প্রকল্পের পিডি, দুটি পদ দখলে : অভিযোগকারী সূত্র জানায়—পরিচালক এম এ আখের গত পাঁচ বছর ধরে অধিদপ্তরের প্রশাসনিক ক্ষমতা নিজের পক্ষে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনি দুটি প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) পদ দখলে রাখেন, একই সঙ্গে বহাল রয়েছেন প্রশাসন পরিচালক হিসেবেও। কথা উঠছে—এক ব্যক্তি এভাবে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে ধরে রাখতে পারেন ?
ভুয়া বিল–ভাউচারের মাধ্যমে কোটি টাকা উত্তোলন : যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আলোচিত প্রকল্প—‘ই–লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্পে দুই পর্যায়ে মোট ৪৮ কোটি টাকার বিল সহযোগী মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

অথচ—মাসুদ আলম, তার স্ত্রী ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব দুর্নীতির অভিযোগে আগেই ফ্রিজ ছিল ! দুদক ও বিএফআইইউ সন্দেহজনক লেনদেনের কারণে তাদের হিসাব জব্দ করেছিল। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে—ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে— ৩০ জুন ভিত্তিক বিলের টাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর ভিত্তিক বিলের টাকা—অত্যন্ত কৌশলে তুলে নেওয়া হয়।

প্রকল্পের ভেতরের একাধিক ব্যক্তি বলেন, “হিসাব ফ্রিজ থাকা অবস্থায় টাকা যেভাবে তোলা হয়েছে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না—স্পষ্টতই বড় ধরনের প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক এতে কাজ করেছে।”
পাচারের অভিযোগ : কাদের কাছে গেছে টাকা ? বিভিন্ন সূত্রের দাবি—উত্তোলিত অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ পলাতক সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও কারাগারে থাকা সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিনের কাছে পাচার করা হয়। যদিও এসব অভিযোগের কোনোটিই এখনো আনুষ্ঠানিক তদন্তে প্রমাণিত হয়নি।
ক্ষমতার অপব্যবহার: রাজনৈতিক মহলের নাম ব্যবহার : অভিযোগকারীরা জানান— গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত এম এ আখের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নাম ব্যবহার করতেন। এরপর পরিস্থিতি বদলালে তিনি আবার বিএনপি মহাসচিবের নাম ব্যবহার করে নিজের ক্ষমতা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। ফলে অধিদপ্তরের ভেতরে ভয়–ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কর্মকর্তারা মুখ খুলতে সাহস পান না।
বিল–ভাউচার থেকে নিয়োগ বানিজ্য—সবখানেই অভিযোগ : একাধিক কর্মকর্তা জানান—পদোন্নতি থেকে বদলি, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এবং প্রকল্প কর্মী নির্বাচন —সবই নাকি গোপন দর–কষাকষির মাধ্যমে হয়। অনেকে বলেন, “যোগ্যতা নয়, পছন্দ–অপছন্দ ও টাকার অঙ্কই এখানে সবকিছু ঠিক করে।”
বিএফআইইউ ও দুদকের নীরবতা—প্রশ্নের মুখে তদারকি সংস্থাগুলো : ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ থাকা সত্ত্বেও কিভাবে কোটি টাকা উত্তোলন হয়? কারা অনুমোদন দেয়? এ নিয়ে তদারকি সংস্থাগুলোর নীরবতা আরও প্রশ্ন ও সন্দেহ তৈরি করছে।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর আজ ‘দুর্নীতির দুর্গ’ : এম এ আখের–মাসুদ আলম সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের মৌন ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। তাদের ভাষায়—“যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর তরুণদের উন্নয়ন নয়, কিছু ব্যক্তির জন্য ‘কোটিপতি হওয়ার কারখানায়’ পরিণত হয়েছে।”
অভিযুক্তদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি : এই প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহের সময় পরিচালক এম এ আখের বা মাসুদ আলমের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও প্রতিক্রিয়া দেননি।
