
মোঃ সাইফুর রশিদ চৌধুরী : গোপালগঞ্জ-২ (সদর ও কাশিয়ানী আংশিক) আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নেতৃত্বের বিরোধ এখন তুঙ্গে। এই আসনে বিএনপি থেকে ডা. কে এম বাবরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলেও সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জেলা বিএনপির সাবেক দুই প্রভাবশালী সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জু এবং মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।হেভিওয়েট এই দুই নেতার নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার ঘোষণায় জেলাজুড়ে রাজনৈতিক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল বিকেলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দুই নেতা পৃথকভাবে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের দাবি, দলের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মান-অভিমানেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এম এইচ খান মঞ্জু জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তার দাবি, সাধারণ মানুষের চাপে এবং এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তিনি প্রার্থী হতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে মো. সিরাজুল ইসলামও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ নেতা। দলের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন না হওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।

গোপালগঞ্জ-২ আসনটি বরাবরই রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে ডা. কে এম বাবর চূড়ান্ত হলেও সাবেক এই দুই নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ফলে দলের ভোট ব্যাংক দ্বিখণ্ডিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপজেলা বিএনপি নেতা জানান, দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি দলের সাবেক দুই প্রধান নেতার এভাবে লড়াই করাটা সাধারণ কর্মীদের বিভ্রান্ত করছে। এতে বিরোধী শিবিরের সুবিধা হতে পারে।

মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর এম এইচ খান মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, তিনি দলের দুঃসময়ে পাশে ছিলেন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোটারদের পরিবর্তন ও উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

অন্যদিকে মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অধিকার রক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির আহবায়ক শরীফ রফিকউজজামান বলেন, দলগতভাবে ডা. কে এম বাবরকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এবং এটিই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। কেউ যদি দলীয় নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন, তবে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত দল এই দুই নেতাকে বুঝিয়ে বসিয়ে দিতে পারে কি না, নাকি শেষ পর্যন্ত গোপালগঞ্জে বিএনপির এই অভ্যন্তরীণ লড়াই মাঠ পর্যন্ত গড়ায়।
