সিগারেটের প্যাকেটে উল্লিখিত মূল্যের তুলনায় বাজারে বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় সরকার প্রায় ৫ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে

Uncategorized অর্থনীতি আইন ও আদালত জাতীয় বানিজ্য বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে ঘোষিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে। এতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৫ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।


বিজ্ঞাপন

ধূমপায়ীরা বাড়তি দামে সিগারেট কিনলেও কোম্পানিগুলো ঘোষিত মূল্যের ওপরই কর পরিশোধ করায় সরকার এ রাজস্ব পাচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার ১০ মে,  গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘রাজস্ব আয় সিগারেটের ঘোষিত মূল্য ও বাজার মূল্যের পার্থক্যের প্রভাব’ শীর্ষক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় উপস্থাপন করা গবেষণার ফলাফলে এসব কথা বলা হয়।

বর্তমান করকাঠামো অনুযায়ী চারটি স্তরে সিগারেট বিক্রি হয়। তার প্রতিটির জন্য একটি ন্যূনতম ঘোষিত খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা আছে। ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি শলাকা বা প্রতি প্যাকেট সিগারেট যত দামে বিক্রি হওয়ার কথা, বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি দামে। যদিও সিগারেট কোম্পানি গুলো ঘোষিত মূল্যের ওপরই সরকারকে কর পরিশোধ করছে। যার ফলে সিগারেট সেবনকারীরা বাড়তি দামে সিগারেট কিনলেও সরকার এ বাড়তি ব্যয়ের ওপর কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না।


বিজ্ঞাপন

এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস এম জুলফিকার আলী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, একাত্তর টিভির চিফ বিজনেস রিপোর্টার সুশান্ত কে. সিনহা। রাজস্ব আয় নিশ্চিত করতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত খুচরা মূল্য চলমান বাজার মূল্য থেকে বেশি নির্ধারণ করা, নিম্ন ও মধ্যমস্তরের সিগারেটে ভিন্ন ভিন্ন দামের ব্র্যান্ডগুলো একই মূল্যে নিয়ে আসা এবং সিগারেটের ক্ষেত্রে চার স্তরের পরিবর্তে দুই স্তরের করকাঠামো করার পরামর্শ উঠে এসেছে আলোচনায়।


বিজ্ঞাপন

তারা বলছেন, এর ফলে জনগণকে ধূমপানে নিরুৎসাহ করার পাশাপাশি সরকারেরও তামাকপণ্য থেকে প্রত্যাশিত রাজস্ব আয় নিশ্চিত হবে।

আলোচনায় বাজার গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের লিড ইকোনমিস্ট রবার্ট শুভ্র গুদা।তিনি বলেন, সিগারেটের প্যাকেটে উল্লিখিত মূল্যের তুলনায় বাজারে বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় সরকার প্রায় ৫ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।

রাজধানী, রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন  এলাকার সিগারেট বিক্রেতাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘নিম্ন স্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে ২০ শলাকার প্যাকেট নির্ধারিত মূল্যের থেকে গড়ে প্রায় ১১ টাকা, মধ্যম স্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে প্রায় সাড়ে ১৫ টাকা এবং উচ্চ স্তরের সিগারেট প্যাকেটের ক্ষেত্রে গড়ে সাড়ে ১০ টাকা বেশি দাম নেওয়া হয়।তবে নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে বিক্রীত মূল্যের সবচেয়ে পার্থক্য দেখা যায় প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে। যেখানে প্যাকেটপ্রতি বিক্রীত মূল্য নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় ২৪ টাকা বেশি। দামের এমন পার্থক্যের কারণে সরকার তার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অভিজ্ঞ মহল বলছেন শুধুমাত্র চলতি অর্থ বছরে নয় পূর্বে থেকেই প্রতি অর্থ বছরের জুন -জুলাই বাজেটের মাস আসার পূর্বেই মে-জুন মাসে শুরু হয় নামি-দামি ব্রান্ডের সিগারেটের কৃত্রিম সংকট। কোন টোব্যাকো কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ই সিগারেটের প্যাকেটে মুদ্রিত নির্ধরিত মুল্যে সিগারেট বিক্রি করে না।

সিগারেটের প্যাকেটে মুদ্রিত আছে সর্বোচ্চ খুচরা মুলা এতো টাকা কিন্তু খুচরা মুল্যের ধারের কাছেও থাকে না কোম্পানি, ডিলার , পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা।

সিগারেটের প্যাকেটে উল্লিখিত মূল্যের তুলনায় বাজারে বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় একদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে, অপরদিকে বাড়তি মুল্যের খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের জনসাধারণকে।

টোব্যাকো কোম্পানি গুলো জুন থেকে জুন সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা মুল্য অনুযায়ী  ট্যাক্স ভ্যাট পরিশোধ করছে। তাহলে জনগণকে বাড়তি মুল্যের খেসারত দিতে হচ্ছে কেন?

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কি এযাবত কাল মে – জুন ও জুলাই মাসে বাজেট এর অযুহাত দেখিয়ে যে রাতারাতি সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা  নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি না করে বেশি দামে বিক্রি করছে এবিষয়ে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে?  এটা রীতিমতো একধরনের ট্রাডিশন হয়ে দাড়িয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন,  জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে যৌথ তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহণ করলে সরকারের ঘরে ফিরে আসবে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব।

👁️ 11 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *